ঢাকা ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সলেমান উদ্ভাবিত সোলার পাম্পে সাশ্রয়ী কৃষক

  • আপডেট সময় : ০৫:২৪:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
  • ৬৮ বার পড়া হয়েছে

কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: ঠাকুরগাঁও জেলায় সোলার সেচ পাম্প ব্যবহার করে খরচ বাঁচিয়ে উপকৃত হচ্ছেন অন্তত ১ হাজার ১০০ জন বোরো ধান চাষি। স্থানীয় উদ্যোক্তা মো. সলেমান আলীর উদ্ভাবিত ব্যাটারিবিহীন সোলার সেচ প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকরা প্রতি একরে গড়ে ৪ হাজার টাকা সাশ্রয় করছেন।
উদ্ভাবক সলেমান জানান, তার তৈরি করা সোলার সেচ পাম্প দিয়ে বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, সোলার প্রযুক্তিতে সেচ দেওয়ায় জ্বালানি ও শ্রম খরচ দুই-ই কমেছে। এর পাশাপাশি পরিবেশদূষণও কম হচ্ছে।
বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার লালাপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমি গত চার বছর ধরে সোলেমানের সোলার পাম্প ব্যবহার করছি। শ্যালো মেশিনে যেখানে একরপ্রতি ১০ হাজার টাকা খরচ হতো, এখন সোলারে মাত্র ৬ হাজার টাকা লাগে। তেল লাগে না, মেশিন টানার ঝামেলাও নেই।’

একই উপজেলার কালমেঘ বাজার এলাকার কৃষক নূর ইসলাম বলেন, ‘আগে বিদ্যুৎ না থাকলে পানি দিতে পারতাম না। এখন সকালবেলা পাম্প চালু করলেই দিনভর পানি পাওয়া যায়। বিকেলে অটোমেটিক বন্ধও হয়ে যায়।’
সলেমান আলী ২০১৪ সালে ব্যাটারিবিহীন সোলার সেচ পাম্প উদ্ভাবন করেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি এটি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে শুরু করেন। বর্তমানে তার মালিকানাধীন রয়েছে ২৬টি সোলার প্যানেল ও পাম্প। এর মধ্যে ৬টি তিনি নিজে পরিচালনা করেন এবং বাকিগুলো মৌসুমি ভিত্তিতে ৩৬ হাজার টাকায় ভাড়া দেন। তিনি বলেন, ‘এই বছর আমার প্রায় ৮ লাখ টাকা আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর আয় হয়েছিল ৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা।’
উদ্যোক্তা সলেমানের পথে বাধাও রয়েছে। সোলার পাম্প তৈরির পেছনে তার ৪০ লাখ টাকা ঋণ হয়েছে। আয়ের বড় অংশ এখন ঋণের সুদ মেটাতে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যদি সুদের হার ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হতো, তাহলে আরও বেশি কৃষকের জন্য পাম্প তৈরি করতে পারতাম।

ওই প্রযুক্তিতে নেই কোনো শব্দদূষণ কিংবা জ্বালানির ঝামেলা। এছাড়া, পাইপ মাটির নিচে বসানো থাকায় আলাদা ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রয়োজন হয় না। এতে কৃষকরা ড্রেনের জায়গাতেও ধান চাষ করতে পারছেন।
সদর উপজেলার মোলানী গ্রামের কৃষক মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগে ড্রেন করতে হতো। সেই জায়গা পড়ে থাকত। এখন ওই জমিতেও ধান হচ্ছে। ফলে ফলন বেড়েছে।’
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সলেমানের প্রযুক্তি শুধু ঠাকুরগাঁও নয়, দেশের অন্য জেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। তার উদ্ভাবন কৃষি খাতে একটি আশীর্বাদ।’ তিনি বলেন, ‘এই প্রযুক্তি দিয়ে কৃষকরা কম খরচে এবং সাশ্রয়ীভাবে সেচ পাচ্ছেন। আমরা কৃষি অধিদফতরের পক্ষ থেকে তাকে যথাসম্ভব সহায়তা করবো।’
সলেমান আলী ইতোমধ্যে তার বাড়ির আলো, ফ্যান, ফ্রিজ, মাছ ও মুরগির খামারের সব বিদ্যুৎ সোলার প্যানেল দিয়ে চালান। তিনি চান তার প্রযুক্তি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ুক। তিনি বলেন, ‘সোলার প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়লে বিদ্যুৎ ও ডিজেলের ওপর নির্ভরতা কমবে, পরিবেশ রক্ষা হবে, কৃষকের খরচও কমবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নতুন আপদ ‘মব সন্ত্রাস’, আতঙ্কে সারা দেশ

সলেমান উদ্ভাবিত সোলার পাম্পে সাশ্রয়ী কৃষক

আপডেট সময় : ০৫:২৪:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: ঠাকুরগাঁও জেলায় সোলার সেচ পাম্প ব্যবহার করে খরচ বাঁচিয়ে উপকৃত হচ্ছেন অন্তত ১ হাজার ১০০ জন বোরো ধান চাষি। স্থানীয় উদ্যোক্তা মো. সলেমান আলীর উদ্ভাবিত ব্যাটারিবিহীন সোলার সেচ প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকরা প্রতি একরে গড়ে ৪ হাজার টাকা সাশ্রয় করছেন।
উদ্ভাবক সলেমান জানান, তার তৈরি করা সোলার সেচ পাম্প দিয়ে বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, সোলার প্রযুক্তিতে সেচ দেওয়ায় জ্বালানি ও শ্রম খরচ দুই-ই কমেছে। এর পাশাপাশি পরিবেশদূষণও কম হচ্ছে।
বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার লালাপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমি গত চার বছর ধরে সোলেমানের সোলার পাম্প ব্যবহার করছি। শ্যালো মেশিনে যেখানে একরপ্রতি ১০ হাজার টাকা খরচ হতো, এখন সোলারে মাত্র ৬ হাজার টাকা লাগে। তেল লাগে না, মেশিন টানার ঝামেলাও নেই।’

একই উপজেলার কালমেঘ বাজার এলাকার কৃষক নূর ইসলাম বলেন, ‘আগে বিদ্যুৎ না থাকলে পানি দিতে পারতাম না। এখন সকালবেলা পাম্প চালু করলেই দিনভর পানি পাওয়া যায়। বিকেলে অটোমেটিক বন্ধও হয়ে যায়।’
সলেমান আলী ২০১৪ সালে ব্যাটারিবিহীন সোলার সেচ পাম্প উদ্ভাবন করেন। ২০১৫ সাল থেকে তিনি এটি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে শুরু করেন। বর্তমানে তার মালিকানাধীন রয়েছে ২৬টি সোলার প্যানেল ও পাম্প। এর মধ্যে ৬টি তিনি নিজে পরিচালনা করেন এবং বাকিগুলো মৌসুমি ভিত্তিতে ৩৬ হাজার টাকায় ভাড়া দেন। তিনি বলেন, ‘এই বছর আমার প্রায় ৮ লাখ টাকা আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর আয় হয়েছিল ৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা।’
উদ্যোক্তা সলেমানের পথে বাধাও রয়েছে। সোলার পাম্প তৈরির পেছনে তার ৪০ লাখ টাকা ঋণ হয়েছে। আয়ের বড় অংশ এখন ঋণের সুদ মেটাতে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যদি সুদের হার ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হতো, তাহলে আরও বেশি কৃষকের জন্য পাম্প তৈরি করতে পারতাম।

ওই প্রযুক্তিতে নেই কোনো শব্দদূষণ কিংবা জ্বালানির ঝামেলা। এছাড়া, পাইপ মাটির নিচে বসানো থাকায় আলাদা ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রয়োজন হয় না। এতে কৃষকরা ড্রেনের জায়গাতেও ধান চাষ করতে পারছেন।
সদর উপজেলার মোলানী গ্রামের কৃষক মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগে ড্রেন করতে হতো। সেই জায়গা পড়ে থাকত। এখন ওই জমিতেও ধান হচ্ছে। ফলে ফলন বেড়েছে।’
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সলেমানের প্রযুক্তি শুধু ঠাকুরগাঁও নয়, দেশের অন্য জেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। তার উদ্ভাবন কৃষি খাতে একটি আশীর্বাদ।’ তিনি বলেন, ‘এই প্রযুক্তি দিয়ে কৃষকরা কম খরচে এবং সাশ্রয়ীভাবে সেচ পাচ্ছেন। আমরা কৃষি অধিদফতরের পক্ষ থেকে তাকে যথাসম্ভব সহায়তা করবো।’
সলেমান আলী ইতোমধ্যে তার বাড়ির আলো, ফ্যান, ফ্রিজ, মাছ ও মুরগির খামারের সব বিদ্যুৎ সোলার প্যানেল দিয়ে চালান। তিনি চান তার প্রযুক্তি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ুক। তিনি বলেন, ‘সোলার প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়লে বিদ্যুৎ ও ডিজেলের ওপর নির্ভরতা কমবে, পরিবেশ রক্ষা হবে, কৃষকের খরচও কমবে।