নিজস্ব প্রতিবেদক : নানামুখী চাপের মধ্যে দাঁড়িয়েও ‘স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে’ যাত্রার প্রত্যাশা রেখে ভোটের আগে রেকর্ড ঘাটতির যে বাজেট অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাব করেছেন, তার ১৭ শতাংশের বেশি তাকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যোগাড় করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী কামাল।
এর মধ্যে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা তিনি রাজস্ব খাত থেকে যোগান দেওয়ার পরিকল্পনা সাজিয়েছেন, যা বাস্তবায়ন করা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরও তার আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকার বেশি, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় ঘাটতির এই পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৫.২ শতাংশ। মহামারীর আগে প্রায় এক যুগ সরকার ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে রেখে বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা করত। কিন্তু মহামারী শুরুর পর বাড়তি টাকা যোগানোর চাপে তা ৬ শতাংশও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত অর্থবছরে জিডিপির ৫.৫ শতাংশ ঘাটতি রেখে মূল বাজেট সাজানো হলেও সংশোধনে তা ৫.১ শতাংশে নেমে আসে। এবারের ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির অনুপাতে তার কাছাকাছিই থাকছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে সেই ঘাটতি পূরণ করতে হয় ঋণ করে। সরকার বিদেশি সাহায্য ও বিদেশি ঋণ নিয়ে, দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে ধরা করে, জনগণের কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারে। এবারের বাজেটের ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হলে অর্থমন্ত্রীকে ওই অর্থের ৩৪ শতাংশই জোগাড় করতে হবে ঋণ করে। সেজন্য বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার মত ঋণ করার পরিকল্পনা জানিয়েছেন কামাল। বিগত বছরগুলোতে বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্প করার তাগিদে বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। তবে বিদেশি ঋণের সুদ দিতে সরকারের রিজার্ভ থেকে ডলার খরচ করতে হয়। আর ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে ডলারের দর চড়ে যাওয়ায় এমনিতেই রিজার্ভ কিছুটা চাপে আছে।
ডলারের সঞ্চয় ধরে রাখতে সরকার বিলাসপণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি কম জরুরি প্রকল্পে অর্থায়ন বিলম্বিত করার নীতি নেয় গতবছর। এবারের বাজেটে বিদেশের বদলে দেশের উৎস থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনাও ডলার বাঁচানোর কৌশলের দিকেই ইংগিত করছে। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে রেকর্ড ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে, যা মোট ব্যয়ের ১৭.৩৭ শতাংশ। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার এই লক্ষ্য বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। এছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন কামাল। বাজেটে সম্ভাব্য বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার পরিমাণ ধরা হয়েছে সোয়া ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেলে অর্থনীতিতে বাইরে থেকে আসা তারল্য যোগ হয়। তাতে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি বাড়ে। তাছাড়া সেই ঋণের জন্য সরকারকে সুদও গুনতে হয়। এবার দেশি-বিদেশি ঋণের জন্য ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা খরচ হবে বলে অর্থমন্ত্রী হিসাব ধরেছেন, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ২০ শতাংশ। আবার মন্দার দিনে ঋণের ওই বাড়তি টাকার যোগান সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ে গতি আনতে পারে, তাতে স্থবির অর্থনীতিতে গতি আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়, মুস্তফা কামাল সেই আশাই করছেন। এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’।
তবে বড় যে ঘাটতি রেখে বাজেট পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে, তাতে ডলারের ওপর চাপ আরও বাড়বে এবং তা মূল্যস্ফীতিও আরও বাড়িয়ে দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, “বিদেশি অর্থায়ন না হওয়ায় ডলার আসছে না। তাই ব্যয় সাশ্রয় এবং ঘাটতি কমিয়ে আনতে উদ্যোগ নিতে হবে। “যেসব প্রকল্প দেশীয় অর্থায়নে চলবে, কিন্তু প্রকল্পের নির্মাণ বা উপাদান সামগ্রী হিসেবে মেশিনারি, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি আমদানি করতে হবে, সেসব প্রকল্পও এড়িয়ে চলতে হবে।” আর দেশীয় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে যে ঋণ নেওয়া হবে, তা বাংলাদেশ ব্যাংক দেবে, না বাণিজ্যিক ব্যাংক দেবে, সেই প্রশ্নের সুরাহা প্রয়োজন বলে মনে করেন জাহিদ হোসেন। তার পরামর্শ, যদি অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ সংগ্রহ হয়, তা যেন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে না করা হয়। কেননা বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ৭০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাপিয়েছে এ ঋণ দিতে গিয়ে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক যখন টাকা ছাপায়, তা মূল্যস্ফীতি আরও উসকে দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, বাজেট বাস্তবায়নে কোনো মতেই ব্যাংক ঋণ নেওয়া উচিত নয়। নিতে হলেও তা সামান্য পরিমাণে হওয়া উচিত। তার মতে, সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কোনো ঝুঁকি ছাড়াই ৭ শতাংশ সুদে সরকারকে ঋণ দিচ্ছে। তাতে বেসরকারি খাত নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ করার বদলে সরকারকে সঞ্চয়পত্র থেকে ধার নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন এই অর্থনীতিবিদ।
তার যুক্তি, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিলে সরকারকে যে সুদ দিতে হয়, তা দেশের অর্থনীতিতেই খরচ হয়, সাধারণ মানুষের জীবন-যাপনে সহায়তা করে। “এ খাতের সুদ ব্যয় তো হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষের পেছনে। সরকার এ খাত থেকে ঋণ নিতে পারে।”
গেল অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা হয়। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটে বিদেশি ঋণের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা ১ লাখ ১ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। সংশোধনে তা ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটিতে নামিয়ে আনতে হয়েছে।
ডিজিটাল’ থেকে ‘স্মার্ট’ হতে বরাদ্দ ৪৫০ কোটি টাকা
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সোপান থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত রচনার পর ‘ডিজিটাল’ টু ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’র জন্য সাড়ে চারশ’ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তব্যে বলেন, ‘সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার’ আমাদের সরকারের বিশেষ অঙ্গীকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে ও ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর ব্যানারে দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো দেশব্যাপী বিস্তৃত হয়েছে। এর ব্যাপক ও বহুমুখী ব্যবহারে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে, দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে এবং সামাজিক গতিশীলতা বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আমরা এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের কাজ শুরু করেছি। একই সঙ্গে আমাদের সামনে আছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর ধারাবাহিকতায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের উপযোগী করে তোলা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমরা চারটি মূল স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের কাজ করেছি। এ চারটি স্তম্ভ হল- কানেকটিভিটি, দক্ষ মানব সম্পদ, ই-গভর্নমেন্ট ও আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশন। চারটি ক্ষেত্রেই আমাদের অগ্রগতি ও অর্জন অভূতপূর্ব। আমাদের সরকারের উদ্যোগে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ৭৮ হাজার টাকার স্থলে বর্তমানে ৩০০ টাকার কমে সংগৃহীত হচ্ছে। বর্তমানে মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৮ কোটির অধিক এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো ও দক্ষতার বিস্তারের সুফল আমরা কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দেখেছি। ওই সময়ে শিক্ষা, চিকিৎসা, কার্যসম্পাদন, কর্মসংস্থান, সামাজিক সুরক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির নজিরবিহীন ব্যবহারে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়নের ফলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সম্ভাবনা কাজে লাগানোর শক্তি পাচ্ছি আমরা। পাশাপাশি এটি আমাদের একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, উদ্ভাবনী, বুদ্ধিদীপ্ত ও জ্ঞাননির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিত তৈরি করে দিয়েছে। এ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন পূরণে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের বর্তমান উদ্যোগসমূহ কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ (স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট ইকোনমি) এর রূপরেখা আমি দ্বিতীয় অধ্যায়ে উল্লেখ করেছি। ইতোমধ্যে বিস্তারিত কার্যক্রমসহ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: আইসিটি ২০৪১ মাস্টার প্ল্যান’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ মহাপরিকল্পনায় দেশের জনগণকে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে এবং প্রযোজ্য শতভাগ সেবাকে ডিজিটাইজ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জিত হলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে এবং জনগণ অতি সহজে সব সেবা গ্রহণ করতে পারবে। সব ক্ষেত্রে নাগরিকদের অংশগ্রহণে আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে শিক্ষা, জীবন-জীবিকা, দক্ষতা, চিকিৎসা, শিল্পসহ সব ক্ষেত্রে মানুষের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। দেশের জনগণকে তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন ‘স্মার্ট সিটিজেন’ করে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে ২০ হাজার তরুণ-তরুণীকে অগ্রসর প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লিডারশিপ, সাইবার সিকিউরিটি ইত্যাদি যুগোপযোগী বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে আইটি ও আইটিইএস প্রতিষ্ঠানের মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের।
এছাড়া সাধারণ, কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও জীবনব্যাপী শিক্ষার জন্য বিভিন্ন ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মে অনলাইনে শিক্ষার সুযোগ তৈরি ও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ও ইনোভেশন সেন্টারের মাধ্যমে ৮০ হাজার তরুণ-তরুণীকে অগ্রসর প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবো। দেশের জনগণকে স্বচ্ছতার সঙ্গে ও সহজে সেবা দেওয়ায় নিশ্চিত হবে ‘স্মার্ট গভর্নমেন্ট’ এর মূল লক্ষ্য। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের উপযোগী করা প্রতিষ্ঠান যেমন- ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার তৈরি এবং সেবা দেওয়ার পদ্ধতি যেমন- তথ্য বাতায়ন পোর্টাল, মাইগভ প্ল্যাটফর্ম, ই-নথি, ই-নামজারি, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ইত্যাদি উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করছি আমরা। স্মার্ট গভর্নমেন্ট এর আওতায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব কাজে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণকে দ্রুততম সময়ে সর্বোত্তম সেবা দেবেন। তিনি জানান, ‘স্মার্ট ইকোনমি’র অনুষঙ্গ হবে দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেন, ক্যাশলেস সোসাইটি, স্টার্ট-আপ ইত্যাদি। স্মার্ট ইকোনমিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ সুবিধা দেশের সব নাগরিকের জন্য সমানভাবে হাতের নাগালের মধ্যে থাকবে। অন্যান্য প্রস্তুতির পাশাপাশি স্টার্ট-আপের বিকাশে ২০১৫ সাল থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ২ হাজার ৫০০ স্টার্ট-আপ রয়েছে এবং এ খাতে বিনিয়োগ এসেছে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষের। উদীয়মান স্টার্টআপে সহযোগিতা দেওয়ার জন্য সরকার স্টার্ট-আপ বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি গঠন করেছে। স্টার্ট-আপ বাংলাদেশ কর্তৃক মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত ‘শতবর্ষের শত আশা’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ১০০টি স্টার্টআপে বিনিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব স্টার্টআপে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে সরকারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সর্বোপরি ‘স্মার্ট সোসাইটি’ হবে এমন সোসাইটি, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’ এর অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করবে এবং সবার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে। প্রসঙ্গত, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দলিলেও আমরা ‘সকলের সাথে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছি।