নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জিমনেশিয়ামে চলছে গণত্রাণ কর্মসূচি। প্রতিদিন সকাল থেকে অসংখ্য মানুষ ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আসছেন। এতে করে ক্রমেই জিমনেশিয়ামে যেন ত্রাণসামগ্রী রাখার ‘তিল ঠাঁই নাই’।
গতকাল রোববার (২৫ আগস্ট) সরেজমিনে ঢাবির জিমনেশিয়ামে গেলে দেখা যায়, প্রতি মুহূর্তেই ত্রাণ সাহায্য নিয়ে আসছেন কেউ না কেউ। কাপড়, খাবার, ওষুধ, স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ বিভিন্ন সাহায্য নিয়ে আসা হচ্ছে। রাজধানীর খিলগাঁও থেকে আসা তাহমিনা চৌধুরী বলেন, আমি বানভাসিদের জন্য কাপড় ও খাবার নিয়ে এসেছি। দুর্যোগের এ সময়ে তাদের জন্য কিছু করতে পারা একটা মানবিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ধানমন্ডি থেকে আসা মারিয়া তাবাসসুম বলেন, বন্যাকবলিত মানুষরা নানাবিধ অসুখে পড়ছেন। বিশেষত নারীরা চরমভাবে স্যানিটারি প্যাডের সংকটে আছেন। সে কষ্ট লাঘবে আমরা চেষ্টা করেছি কিছু ওষুধ ও প্যাড পাঠানোর।
এদিকে, জনসাধারণের পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানি, এনজিও, বেসরকারি সংস্থা থেকেও ত্রাণের সাহায্য আসছে। বানভাসিদের জন্য আসা এসব ত্রাণসামগ্রীতে ইতোমধ্যেই ভরে গেছে জিমনেসিয়ামে জায়গা। পরবর্তী সময়ে ত্রাণসামগ্রী কোথায় রাখা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। কর্তব্যরত এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, যে হারে ত্রাণসামগ্রী আসছে, তাতে জিমনেশিয়াম পরিপূর্ণ। এরপর কোথায় ত্রাণসামগ্রী রাখা হবে, তা সিদ্ধান্ত নিয়ে জানানো হবে। অন্যদিকে, বন্যার্তদের সহায়তায় নগদ অর্থ গ্রহণ করা হচ্ছে টিএসসিতে। সেখানের বন্যা সহায়তা বুথে গিয়ে যে কেউ নগদ অর্থ সহায়তা হিসেবে দিতে পারছেন।
টিএসসিতে ৩ দিনে নগদ সংগ্রহ সাড়ে ৩ কোটি টাকা: দেশে বন্যার্তদের জন্য আজ গতকাল রোববার (২৫ আগস্ট) চতুর্থ দিনের মতো গণত্রাণ সংগ্রহ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর আগে ৩ দিনে সংগ্রহ করা নগদ টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৯০ টাকা। পাশাপাশি ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমেও অর্থ সহায়তা এসেছে প্রচুর পরিমাণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) বদলে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রে। তবে কেউ নগদ অর্থ সহায়তা ও জরুরি ওষুধ দিতে চাইলে তা দেওয়া যাবে টিএসসির ফটকে বসানো বুথে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, ডাকসু, সিনেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। প্রতিদিনই ৩০টিরও বেশি ট্রাকভর্তি ত্রাণ বন্যার্ত বিভিন্ন এলাকা ভাগ করে টিএসসি ছেড়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। ত্রাণসামগ্রী প্রস্তুতের জন্য ১৫০০ এর বেশি স্বেচ্ছাসেবক ২৪ ঘণ্টাই কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন সমন্বয়করা। তারা বলেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি উদ্ধারকাজে অংশ নিতে বন্যাপীড়িত এলাকায় চলে গেছেন। কেউ টিএসসিতে, কেউ সিনেটে আবার কেউবা ডাকসুতে কাজ করছেন। অনেকে রাস্তায় ত্রাণ দিতে আসা গাড়িগুলো যেন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সে জন্য ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন।