আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের সরকারি সূত্র বলছে, জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভা ও লোকসভা কেন্দ্রের আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ কেন্দ্র এগিয়ে নিতে চায়।
ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে ডাকা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সর্বদলীয় বৈঠকের তিন দিন আগেও একাধিক বিষয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। যেমন প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় অথবা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক নিয়ে কিছু বলা হয়নি। বৈঠকসম্পর্কিত যা কিছু খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে, সবই কেন্দ্রীয় সূত্রের বরাতে। এ কারণে কোনো রাজনৈতিক দলই এখনো জানে না বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকের আলোচ্য বিষয় কী কী।
এ অবস্থায় জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলের নতুন জোট ‘গুপকর অ্যালায়েন্স’ নেতারা আজ মঙ্গলবার বৈঠকে বসছেন। সেখানে তাঁরা ঠিক করবেন বৈঠকে যোগ দিলে জোটের পক্ষে কী দাবি জানানো হবে। জোটের অন্যতম শরিক ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা হাসনান মাসুদি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁরা চান রাজ্যকে ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট-পূর্ববর্তী অবস্থান ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি স্পষ্ট করে জানাতে। তবে সেই দাবি জানানো হবে কি না, জোট নেতারাই তা মঙ্গলবারের বৈঠকে ঠিক করবেন। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীর দ্বিখ-িত হয়েছিল। সৃষ্টি হয়েছিল দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদও সেদিন বাতিল হয়েছিল।
উপত্যকার জোট নেতারা বৈঠক বয়কটের রাস্তায় হাঁটতে চান না। তাঁরা মনে করেন, সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সুবিধা করে দেওয়া হবে। এই যুক্তিতেই গুপকর জোট জেলা উন্নয়ন পর্ষদের ভোটে অংশ নিয়েছিল। অধিকাংশ আসনও তারা জিতেছিল। তখন নেতারা বলেছিলেন, তাঁরা ভোটে না দাঁড়ালে বিজেপি ও তার অনুগ্রহ পাওয়া নতুন রাজনৈতিক দল আপনি পার্টি লাভবান হবে। বৈঠক ঘিরে ধোঁয়াশা থাকলেও গুপকর জোট এই যুক্তিতে অংশ নিতে চায়। তারা মনে করছে, এর মধ্য দিয়ে এটাও প্রমাণ করা যাবে তারা দেশদ্রোহী নয়, যা বিজেপি প্রচার করেছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও গুপকর জোটকে ‘গুপকর গ্যাং’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন।
আমন্ত্রণ পেলে ওই বৈঠকে জম্মু-কাশ্মীরের কংগ্রেস সভাপতি গুলাম আহমেদ মির সম্ভবত যোগ দেবেন। দিল্লিতে দলীয় সূত্রে সোমবার তা জানা গেছে। সেখানে তিনি কী বলবেন, তার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে দলের নেতা পি চিদাম্বরমের টুইট থেকে। সোমবার টুইট মারফত চিদাম্বরম বলেছেন, অবিলম্বে জম্মু-কাশ্মীরকে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হোক। দেশের সংবিধান রাজ্যকে যে মর্যাদা দিয়েছিল, তা সাংবিধানিক অপব্যাখ্যা ও অপব্যবহারের মাধ্যমে আইন পাস করিয়ে সংসদ কেড়ে নিতে পারে না। চিদাম্বরমের দাবি, সংসদের আসন্ন বর্ষাকালীন অধিবেশনে সেই আইন খারিজ করে দেওয়া উচিত। সেটাই হবে কাশ্মীরসংক্রান্ত যেকোনো রাজনৈতিক সমাধানের সূত্র খোঁজার শুরু। জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য দ্বিখ-িতকরণ ও সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের প্রায় দুই বছর পর এই প্রথম রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছে। সরকারি সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্রসচিব রাজ্যের বিভিন্ন নেতাকে ফোন করে বৈঠকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু সেখানে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, তা এখনো অজ্ঞাত। উপত্যকার নেতারাও এ বিষয়ে কিছু আলোকপাত করতে পারেননি। সরকারি সূত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রশাসিত জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভা ও লোকসভা কেন্দ্রের আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ কেন্দ্র এগিয়ে নিতে চায়। সেই কাজ শেষ হলেই সরকার বিধানসভার ভোট করাবে। এ ক্ষেত্রে উপত্যকার নেতাদের মনে একটা সংশয় কাজ করছে। তাঁদের আশঙ্কা, কেন্দ্র পুনর্বিন্যাসের মধ্য দিয়ে সরকার জম্মুর আসন বাড়িয়ে দিতে চাইছে, যাতে সেখানকার রাজনীতিকেরাই মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন এবং উপত্যকার গুরুত্ব কমে যায়।
সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার পেছনে আন্তর্জাতিক চাপও একটা কারণ। বৈশ্বিক রাজনীতিতে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের যত কাছাকাছি এসেছে, ততই দূরত্ব বেড়েছে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় কাশ্মীর নিয়ে ভারত যতটা নিরুদ্বিগ্ন ছিল, বাইডেনের আমলে তা নেই। কাশ্মীর প্রশ্নে ও মানবাধিকার রক্ষা নিয়ে ভারতকে এখন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সহ্য করতে হচ্ছে। সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার সেটাও একটা কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
সর্বদলীয় বৈঠকের আলোচ্য বিষয় জানে না কোনো দল
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ