বিশেষ সংবাদদাতা : সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থাকে আরও বেশি জনপ্রিয় ও কার্যকর করতে এটিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পোশাকশ্রমিক ও প্রবাসীদের বড় একটি অংশকে এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত করতে তাদের জন্য আলাদা পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। এ জন্য প্রশান্তি নামে নতুন একটি কর্মসূচি চালুরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। পেনশন কর্তৃপক্ষ নতুন যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, তাতে সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত একজন গ্রাহক অবসরে যাওয়ার পর পেনশনের ৩০ শতাংশ অর্থ এককালীন তুলে নিতে পারবেন।
আর পোশাক কর্মী ও প্রবাসীদের জন্য ৬০ বছরের বদলে ৪০ বছর থেকে পেনশন সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। নতুন এসব বিষয় যুক্ত করে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এসব উদ্যোগ কার্যকর বা দৃশ্যমান করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এরই মধ্যে এসব পরিকল্পনার বিষয়ে মৌখিক সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। তিনি সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনাও দিয়েছেন। এরপর বিদ্যমান কর্মসূচিগুলোকে আরও কীভাবে গ্রাহকবান্ধব করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে পেনশন কর্তৃপক্ষ। সরকারি কর্মচারী ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদেরও ধীরে ধীরে পেনশনের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু করে। এ ব্যবস্থায় চারটি কর্মসূচি রয়েছে; এগুলো হলো ‘প্রবাস’, ‘প্রগতি’, ‘সুরক্ষা’ ও ‘সমতা’। প্রবাস শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। প্রগতি বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য। সুরক্ষা রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিসহ স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য। আর সমতা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য। পেনশন কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় বছরে পেনশনের চার কর্মসূচিতে মোট গ্রাহক হয়েছেন ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৩১ জন। আর চাঁদা জমা পড়েছে ১৬০ কোটি টাকা। এসব টাকা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা আছে। সেই বিনিয়োগ থেকে কিছু মুনাফাও পেয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাতে জমা অর্থ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৪ কোটি টাকা। পেনশনের চার কর্মসূচির মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক হয়েছেন সমতায়, ২ লাখ ৮৬ হাজার ৪৯ জন। এসব গ্রাহকের চাঁদা জমা পড়েছে প্রায় ৪৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
এ ছাড়া সুরক্ষা কর্মসূচিতে ৬৩ হাজার ৩৯৯ জন গ্রাহক জমা দিয়েছেন প্রায় ৪৬ কোটি ১১ লাখ টাকা, প্রগতি কর্মসূচিতে ২২ হাজার ৯৩৩ জন গ্রাহক দিয়েছেন ৬৩ কোটি টাকা এবং প্রবাস কর্মসূচিতে ৯৫০ জন গ্রাহক জমা দিয়েছেন প্রায় ছয় কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টজনরা বলছেন, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি যে দরকার, এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। পোশাক খাতের কর্মী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই কর্মসূচিতে যুক্ত করার যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তা ইতিবাচক।