ক্রীড়া ডেস্ক: আলোচনাপর্ব শেষে বিদায়ী বার্তার ভাষায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলেন সঞ্চালক। রোহিত শার্মা হাসতে হাসতে বললেন, “আরে ভাই আমি এখনই কোথাও যাচ্ছি না!” ভারতীয় অধিনায়কের কথা শুনে হেসে উঠলেন সবাই। পাশ থেকে ধারাভাষ্যকার ও সাবেক ক্রিকেটার ইরফান পাঠান বললেন, “এই আলোচনার শেষটা এমনই হওয়া উচিত ছিল..।”
সেই আলোচনাপর্বের মূল সুর ছিল, সরে দাঁড়ানো মানেই শেষ নয়। সিডনি টেস্ট থেকে রোহিত সরে দাঁড়ানোয় তার ক্যারিয়ারের শেষ যারা দেখছিলেন, তাদের প্রতি ভারতীয় অধিনায়কের বার্তা, এখনই অবসর নিচ্ছেন না তিনি। ধারাভাষ্যকার, সংবাদকর্মী বা অন্য কারও কথায় নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নেবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দিলেন ৩৭ বছর বয়সী ক্রিকেটার।
সিডনি টেস্টের আগের দিন থেকেই রোহিতের খেলা-না খেলা নিয়ে চলছিল জল্পনা। শেষ পর্যন্ত এই টেস্টে ভারতকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাসপ্রিত বুমরাহ।
তিনিই টসের সময় জানান, রোহিত নিজে থেকেই সরে দাঁড়িয়েছেন এই টেস্ট থেকে এবং অধিনায়কের নিঃস্বার্থ সিদ্ধান্তের দারুণ প্রশংসাও করেন তিনি। তবে আদৌ এটি নিজে থেকে সরে দাঁড়ানো নাকি বিশ্রাম অথবা বাদ, এসব নিয়ে আলোচনা চলছিলই। টেস্টের দ্বিতীয় দিনের বিরতিতে স্টার স্পোর্টসে আলাপচারিতায় রোহিত নিশ্চিত করে দিলেন, আদতেই এটি তারই সিদ্ধান্ত। “এত দূর থেকে এখানে এসেছি, বাইরে বসে থাকতে বা ম্যাচ না খেলতে তো আসিনি! খেলতে চাই, দলকে জেতাতে চাই। ২০০৭ থেকে আজ পর্যন্ত এটিই চাওয়া যে দলকে জেতাতে হবে। তবে কখনও কখনও বুঝতে হবে যে দলের প্রয়োজন কোনটি। দলকে সবচেয়ে গুরুত্ব না দিলে কোনো লাভ নেই।”
“আমার ব্যাটে রান হচ্ছে না। ফর্ম নেই। ফর্মহীন ক্রিকেটার দলে বেশি বয়ে নিতে পারি না আমরা। সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন ছিল। তবে এই মুহূর্তে দলের কোনটি জরুরি, এটিই ছিল ভাবনায়। পাঁচ-ছয় মাস পর কী হতে পারে, এসবে বিশ্বাস নেই আমার।” সিদ্ধান্তের পেছনের প্রেক্ষাপটও তুলে ধরলেন ভারতীয় অধিনায়ক। “সিদ্ধান্তটি আমি নিয়েছি সিডনিতে আসার পর। দুই ম্যাচের মাঝখানে স্রেফ দুটি দিন ছিল আমাদের। নতুন বছরের প্রহরে নির্বাচক ও কোচের সঙ্গে এই আলোচনা করতে চাইনি। তবে আমার ভাবনায় এটা ছিলই। চেষ্টার কমতি রাখছি না আমি, কিন্তু রান আসছে না। এটা মেনে নিতেই হবে এবং নিজেকে সরিয়ে নিতে হবে।”
“কোচ ও নির্বাচকের সঙ্গে আমার যে আলোচনা হয়েছে, তা খুব সাধারণ- আমার ব্যাটে রান হচ্ছে না, ফর্মে নেই আমি, এটা গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচ এবং আমাদের প্রয়োজন ফর্মে থাকা ক্রিকেটার। যদিও ছেলেরা অনেকেই খুব ভালো ফর্মে নেই। তবে আমার এই ভাবনাই ছিল। মনে হয়েছে, কোচ ও নির্বাচককে এটা বলা উচিত। তারা আমার পাশে থেকেছেন।
তারা বলেছেন, ‘তুমি এত বছর ধরে খেলছো, নিজের কাজের সেরা বিচারক তুমিই।” টেস্টের প্রথম দিনে সুনিল গাভাস্কার, রাভি শাস্ত্রির মতো সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটাররা বলেছিলেন, সরে দাঁড়ানো মানেই রোহিতের টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ দেখছেন তারা। তবে রোহিত উড়িয়ে দিলেন সেই আলোচনা। বরং আগামী জুন-জুলাইয়ে ভারতের পরের সিরিজ ইংল্যান্ড সফরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন তিনি। “এই সিদ্ধান্ত কোনো অবসর নয় কিংবা এমন নয় যে খেলা থেকে সরে যাচ্ছি।
এই ম্যাচ থকে সরে গেছি, কারণ ব্যাটে রান আসছে না। তবে পাঁচ মাস পর বা দুই মাস পর রান আসবে না, এই নিশ্চয়তা তো নেই! যথেষ্ট ক্রিকেট দেখেছি জীবনে এবং জানি যে, সবকিছু প্রতি সেকেন্ডে, প্রতি মিনিটে, প্রতি দিন বদলায়।” “আমার আত্মবিশ্বাস আছে যে, পরিস্থিতি বদলাতে পারে। পাশাপাশি জীবনে বাস্তবতাও বুঝতে হবে। কোন লোক ভেতরে মাইক্রোফোন নিয়ে বসে আছে বা ল্যাপটপ কিংবা কলম নিয়ে বসে আছে, তারা কী লিখছে বা বলছে, এসব দিয়ে আমাদের জীবন বদলাতে পারে না। এত বছর ধরে খেলাটা খেলছি। লোকে তাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না যে, আমরা কবে চলে যাব বা কখন খেলব না কিংবা কখন বাইরে থাকতে হবে বা অধিনায়কত্ব করতে হবে।
আমি বোধসম্পন্ন পরিণত একজন মানুষ, দুই বাচ্চার বাবা। কাজেই আমি জানি, জীবনে কখন কোনটি দরকার।”
পারিবারিক কারণে এই সিরিজের প্রথম টেস্টে ছিলেন না রোহিত। বুমরাহর নেতৃত্বে পার্থে দারুণ জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করে ভারত। রোহিত পরে ফিরে তিন টেস্ট মিলিয়ে করেন মোটে ৩১ রান। ভারত হেরে যায় দুটি টেস্টেই। বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি ধরে রাখতে হলে সিডনিতে তাদের জিততেই হবে। এই সফরের আগে দেশের মাঠে টানা দুটি সিরিজেও রোহিতের ব্যাট ছিল ঘুমিয়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে চার ইনিংসে তার রান ছিল ৪২, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ছয় ইনিংসে ৯১। অধিনায়ক হয়ে নিজ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত তারপরও খুব সহজ নয়।
তবে রোহিত আবারও বললেন, তিনি স্রেফ সময়ের ডাক শুনেছেন। “সিদ্ধান্তটি কঠিন ছিল অবশ্যই। তবে সব পারিপার্শ্বিকতা মাথায় রেখে, এটা বোধসম্পন্ন একটা সিদ্ধান্ত ছিল। খুব বেশি দূরে তাকাচ্ছি না আমি। এই মুহূর্তে দলের যেটা দরকার, সেটাই ভাবনায় ছিল। অন্য কিছু নয়।”