ঢাকা ০১:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সরিষা চাষে ঝুঁকছেন গাইবান্ধার কৃষকরা

  • আপডেট সময় : ১১:৪৬:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২২
  • ১০০ বার পড়া হয়েছে

গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধা জেলায় বাড়ছে সরিষা চাষ। আমন কাটার পর বোরো চাষ শুরুর আগ পর্যন্ত ৬০ দিনের মধ্যেই বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করছেন চাষিরা। সরিষা চাষ ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণের পাশাপশি সচ্ছলতার হাতছানি দেয় কৃষকদের। তাদের আগ্রহ বাড়াতে সব রকমের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কৃষি বিভাগ। জানা যায়, প্রতিবছরই বর্ষার শুরু থেকে পানি জমতো গাইবান্ধার জলাভূমিগুলোয়। বন্যা এলে তো কথাই নেই। একূল-ওকূল ছাপিয়ে ভাসিয়ে দেয় শত শত একর জমিসহ শতাধিক গ্রাম। বন্যার পানি নেমে গেলেও কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কাদায় ডুবে থাকা জমিতে ইরি ধান ছাড়া আর কোনো চাষ হতো না। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ইরি ধান চাষের আগেই সরিষা চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি রবি মৌসুমে গাইবান্ধার চাষিরা ব্যাপক হারে সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে আশাতীত জমিতে সরিষা চাষ হচ্ছে। চলতি বছর বন্যা না হওয়ায় মাটির রস কমে অনেক আগেই সরিষা চাষের উপযুক্ত হয়েছে। তাই এবার সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের পশ্চিম কোমরনই গ্রামের কৃষক হেনা মিয়া (৬০) জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার ৪ বিঘা জমিতে দেশি টরি ৭ জাতের সরিষা আবাদ করেছি। বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেশি। তাই জমির সরিষা মাড়াই করে আমিই ব্যবহার করব। দাম ভালো পেলে বাদ বাকি সরিষা বিক্রি করে দেব।’ কৃষক আবুল হোসেন (৫৫) বলেন, ‘সরিষা চাষে খরচ অনেক কম। দাম বেশি হলে আমাদের জন্য ভালো হবে। বিগত বছরের থেকে এ বছর একটু বেশি ভালো ফলন হবে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকলে অবশ্যই ফলন ভালো হবে।’ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নল্লির বিলের চাষি আমজাদ হোসেন (৫৫) বলেন, ‘এ বছর ৬ বিঘা জমিতে বারি-১৬ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। ভুট্টাসহ অন্য আবাদ বাদ দিয়ে সরিষা করেছি। বিঘাপ্রতি ৩ হাজার টাকা খরচ করে সর্বোচ্চ ৮ মণ পর্যন্ত ফলনের আশা করছি।’ মহিমাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জিয়াউল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিলের উপরের অংশের জমিতে আগে থেকেই সরিষার চাষ করা হয়। এখানে তেমন কোনো রাসায়নিক সার না দিয়েই সরিষা চাষ করা হয়। সরিষার শুকনো পাতা আর ফুল ঝরে বাড়তি জৈব সারের জোগান দেয় ইরি চাষের জন্য। লাভজনক বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের কৃষক আমজাদ ব্যাপারি বলেন, ‘আমন ও বোরো চাষের মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা চাষ করলে মাটির উর্বরতা বাড়ে। পরের ফসলের জন্য খুব বেশি চাষ করতে হয় না। জৈব সারও দিতে হয় না। সরিষা আবাদে সেচ লাগে না। সার ও কীটনাশকও প্রয়োগ করতে হয় না। ফলে কম খরচে বেশি লাভ পাওয়া যায়।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বছর জেলায় ১২ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে টার্গেট আছে, এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করার। এর মধ্যে ৩ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। ধান কাটা শেষে সরিষা চাষের এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ জমিতেই এবার উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪ ও বারি-১৭ জাতের সরিষার বীজ বোনা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এখানকার উৎপাদিত সরিষা দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারবে। চাষিদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব রকমের সহায়তা করা হচ্ছে।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মব বন্ধ না করলে ডেভিল হিসেবে ট্রিট করবো: উপদেষ্টা মাহফুজ

সরিষা চাষে ঝুঁকছেন গাইবান্ধার কৃষকরা

আপডেট সময় : ১১:৪৬:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২২

গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধা জেলায় বাড়ছে সরিষা চাষ। আমন কাটার পর বোরো চাষ শুরুর আগ পর্যন্ত ৬০ দিনের মধ্যেই বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করছেন চাষিরা। সরিষা চাষ ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণের পাশাপশি সচ্ছলতার হাতছানি দেয় কৃষকদের। তাদের আগ্রহ বাড়াতে সব রকমের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কৃষি বিভাগ। জানা যায়, প্রতিবছরই বর্ষার শুরু থেকে পানি জমতো গাইবান্ধার জলাভূমিগুলোয়। বন্যা এলে তো কথাই নেই। একূল-ওকূল ছাপিয়ে ভাসিয়ে দেয় শত শত একর জমিসহ শতাধিক গ্রাম। বন্যার পানি নেমে গেলেও কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কাদায় ডুবে থাকা জমিতে ইরি ধান ছাড়া আর কোনো চাষ হতো না। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ইরি ধান চাষের আগেই সরিষা চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি রবি মৌসুমে গাইবান্ধার চাষিরা ব্যাপক হারে সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে আশাতীত জমিতে সরিষা চাষ হচ্ছে। চলতি বছর বন্যা না হওয়ায় মাটির রস কমে অনেক আগেই সরিষা চাষের উপযুক্ত হয়েছে। তাই এবার সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের পশ্চিম কোমরনই গ্রামের কৃষক হেনা মিয়া (৬০) জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার ৪ বিঘা জমিতে দেশি টরি ৭ জাতের সরিষা আবাদ করেছি। বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেশি। তাই জমির সরিষা মাড়াই করে আমিই ব্যবহার করব। দাম ভালো পেলে বাদ বাকি সরিষা বিক্রি করে দেব।’ কৃষক আবুল হোসেন (৫৫) বলেন, ‘সরিষা চাষে খরচ অনেক কম। দাম বেশি হলে আমাদের জন্য ভালো হবে। বিগত বছরের থেকে এ বছর একটু বেশি ভালো ফলন হবে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকলে অবশ্যই ফলন ভালো হবে।’ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নল্লির বিলের চাষি আমজাদ হোসেন (৫৫) বলেন, ‘এ বছর ৬ বিঘা জমিতে বারি-১৬ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। ভুট্টাসহ অন্য আবাদ বাদ দিয়ে সরিষা করেছি। বিঘাপ্রতি ৩ হাজার টাকা খরচ করে সর্বোচ্চ ৮ মণ পর্যন্ত ফলনের আশা করছি।’ মহিমাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জিয়াউল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিলের উপরের অংশের জমিতে আগে থেকেই সরিষার চাষ করা হয়। এখানে তেমন কোনো রাসায়নিক সার না দিয়েই সরিষা চাষ করা হয়। সরিষার শুকনো পাতা আর ফুল ঝরে বাড়তি জৈব সারের জোগান দেয় ইরি চাষের জন্য। লাভজনক বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের কৃষক আমজাদ ব্যাপারি বলেন, ‘আমন ও বোরো চাষের মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা চাষ করলে মাটির উর্বরতা বাড়ে। পরের ফসলের জন্য খুব বেশি চাষ করতে হয় না। জৈব সারও দিতে হয় না। সরিষা আবাদে সেচ লাগে না। সার ও কীটনাশকও প্রয়োগ করতে হয় না। ফলে কম খরচে বেশি লাভ পাওয়া যায়।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বছর জেলায় ১২ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে টার্গেট আছে, এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করার। এর মধ্যে ৩ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। ধান কাটা শেষে সরিষা চাষের এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ জমিতেই এবার উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪ ও বারি-১৭ জাতের সরিষার বীজ বোনা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এখানকার উৎপাদিত সরিষা দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারবে। চাষিদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব রকমের সহায়তা করা হচ্ছে।’