দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের স্পেসএক্স পরিচালিত স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা স্টারলিংক। এখন থেকে শুরু হওয়া এই সেবার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সব জায়গায় উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যাবে। প্রচলিত ইন্টারনেট ব্যবস্থায় যেমন তারের ব্যবহার প্রচুর, তেমনি সরকারি নিয়ন্ত্রণও অনেক বেশি। দুর্গম অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছানো বেশ কঠিন কাজ; খরচও বেড়ে যায় বহুগুণে। আর ঠিক এ কারণেই মরুভূমি বা সমুদ্রের মতো অঞ্চলে প্রচলিত ব্রডব্যান্ড বা মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। তবে এসব সমস্যা সমাধানে দারুণ এক সমাধান স্যাটেলাইট ইন্টারনেট। এ বিষয় নিয়েই এবারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাতার প্রধান ফিচার
ভূপৃষ্ঠে থাকা গ্রাউন্ড স্টেশন, পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা স্যাটেলাইট ও রিসিভার অ্যান্টেনার মাধ্যমে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
পৃথিবীর কক্ষপথে থাকায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যে কোনো দুর্গম স্থানে সংকেত পাঠানো যায়। তাই যেখানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছাতে পারে না, সেখানেও সহজে পাওয়া যায় স্যাটেলাইট ইন্টারনেট।
এ প্রযুক্তিতে সফলভাবে বর্তমানে পৃথিবীর ১০০টিরও বেশি দেশে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে স্টারলিংক। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার ওপরে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে ঘুরছে প্রতিষ্ঠানটির হাজারো স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ। প্রায় সাত হাজার কৃত্রিম উপগ্রহ জালের মতো ঘিরে রেখেছে পৃথিবীকে। স্টারলিংক ইন্টারনেটের পুরো প্রক্রিয়ায় তিনটি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাউন্ড স্টেশন, স্যাটেলাইট ও রিসিভার অ্যান্টেনা।
পৃথিবীতে অবস্থিত গ্রাউন্ডে স্টেশনের মাধ্যমে এর স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক যুক্ত থাকে মূল ইন্টারনেটের সঙ্গে। স্যাটেলাইট থেকে সংকেত গ্রহণ করে তা ফাইবার অপটিকস কেবলের মাধ্যমে যুক্ত ডেটা সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়। আবার ডেটা সেন্টারের সার্ভার থেকে থেকে ডেটা এনে তা স্যাটেলাইটে পাঠায়। এসব স্যাটেলাইট পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশন ও অ্যান্টেনার সঙ্গে যেমন যোগাযোগ রাখে, তেমনি নিজেদের মধ্যেও সার্বক্ষণিক সংকেত আদান প্রদান করে। এভাবে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাক্সিক্ষত তথ্য হাজির করে।
বাংলাদেশের গ্রাহকরা স্টারলিংকের সংযোগ পেতে সরাসরি স্টারলিংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট starlink.com-এ গিয়ে অর্ডার দিতে পারবেন। অর্ডার করতে প্রথমে আপনার ঠিকানা দিয়ে সেখানে এই সেবা পৌঁছাবে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। তারপর একটি সার্ভিস প্ল্যান বেছে নিয়ে হার্ডওয়্যার কিট কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
স্টারলিংক সংযোগের জন্য স্ট্যান্ডার্ড কিটে থাকে একটি স্যাটেলাইট ডিশ, ওয়াইফাই রাউটার, মাউন্টিং ট্রাইপড ও কেবল। এটি সেটআপ করা অত্যন্ত সহজ। প্রয়োজনীয় সংযোগ দিয়ে স্যাটেলাইট ডিশটির ফাঁকা জায়গায় আকাশের দিকে মুখে করে স্থাপন করতে হবে। হার্ডওয়্যার কিট কিনতে হবে এককালীন ৪৭ হাজার টাকায়।
স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ব্যবহারের জন্য তারা দুটি প্যাকেজ দিচ্ছে।
প্রথমটি স্টারলিংক ‘রেসিডেনশিয়াল’। এ জন্য প্রতি মাসে খরচ করতে হবে ছয় হাজার টাকা। আর ‘রেসিডেনশিয়াল লাইট’-এর জন্য মাসে খরচ হবে ৪ হাজার ২০০ টাকা। এ ছাড়া যে কোনো স্থানে ঘুরতে গেলে বা চলন্ত অবস্থায় স্টারলিংক ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করতে ‘রোম’ প্যাকেজ ব্যবহার করা যাবে। এ জন্য প্রতি মাসে দিতে হবে নূন্যতম ছয় হাজার টাকা। ‘রোম’-এর ছয় হাজার টাকার প্যাকেজে ৫০ জিবি পর্যন্ত ডেটা পাওয়া যাবে। আর আনলিমিটেড ডেটার জন্য নিতে হবে ১২ হাজার টাকার ‘রোম আনলিমিটেড’ প্যাকেজটি।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্যও রয়েছে স্টারলিংকের বিভিন্ন প্যাকেজ। স্টারলিংকের লোকাল প্রায়োরিটি প্যাকেজের ৫০ জিবির মূল্য ৪ হাজার ৬০০ টাকা, ৫০০ জিবির মূল্য ১১ হাজার ৮০০ টাকা এবং ১ টেরাবাইটের মূল্য ২০ হাজার ৮০০ টাকা। এ ছাড়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য স্টারলিংকের গ্লোবাল প্রায়োরিটি প্যাকেজের ৫০ জিবির মূল্য ৩২ হাজার টাকা, ৫০০ জিবির মূল্য ৮৪ হাজার টাকা এবং ১ টেরাবাইটের মূল্য ১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা।
ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী স্টারলিংক সংযোগ নিয়ে ৩০ দিন ব্যবহার করার পর সেবা ‘সন্তোষজনক’ মনে না হলে সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ