ঢাকা ১২:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

সরকার সুযোগ করে দিচ্ছে, নারীরা পারদর্শিতা দেখাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

  • আপডেট সময় : ০৮:৫৬:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪
  • ১১৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : আর্থিক, সামাজিক, রাজনীতি এবং খেলাধুলাসহ সবক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে যেতে সরকার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে আর নারীরা তাদের পারদর্শিতা দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জাতীয় পর্যায়ে ‘সেরা জয়িতা পুরস্কার-২০২৩’ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সমাজের নানা প্রতিকূলতা আর বাধা অতিক্রম করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে এবারে পাঁচ নারীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, “এভারেস্টেও আমাদের মেয়েরা বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে গেছে। পাশাপাশি খেলাধুলায় অনেক সাধারণ ঘরের মেয়েরা তারা স্বর্ণ জয় করে আনে, তারা তাদের দক্ষতা দেখায়। মেয়েরা তো ফুটবল খেলায় ভারতকেও তিন-এক গোলে হারিয়ে দিয়েছে। নেপালকে হারিয়েছে। সবদিক থেকে তারা পারদর্শিতা দেখাচ্ছে। আমরা সুযোগ করে দিচ্ছি তারা তাদের পারদর্শিতা দেখাচ্ছে।”
পুরুষদের বিরুদ্ধে বেশি কিছু বলে নিজের ভোট হারাতে চান না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের যে বৃত্তি দেই সেই বৃত্তির টাকা সরাসরি মায়ের নামে চলে যায়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেই টাকা মায়ের নামে চলে যায়। মায়ের নামে দিলে টাকাটা থাকে, কাজে লাগে আর সেটা সাশ্রয় হয়। বাবার নামে দিলে সব সময় যে পাবে তা তো না। দেখা গেল জুয়া-টুয়া খেলে উড়িয়ে দিল বা দুটো বড় বড় ইলিশ মাছ নিয়ে এসে খেয়ে সাবাড় করে দিল। মা সবসময় সঞ্চয় করে। মায়ের সব সময় সঞ্চয়ের মনোভাব আছে।
মুখে হাসি নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি পুরুষদের বিরুদ্ধে কিছু বলছি না। বেশি কিছু বলে নিজের ভোট হারাতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নারীদের জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, এমনকি বর্ডার গার্ড, কোথাও নারীদের অবস্থান ছিল না। আমরা সেখানে একে একে সব বাহিনীতে মেয়েদের সুযোগ করে দেই। মেরিন একাডেমিতে মেয়েদের পড়ারই সুযোগ ছিল না। সেটাও আমরা করে দিয়েছি। আজ দেশে-বিদেশে মেয়েরা কাজ করছে। আমাদের শান্তিরক্ষা মিশনে মেয়েরা সবচেয়ে ভালো কাজ করছে। জাতিসংঘ এখন মেয়ে অফিসার চায়। পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনীতে আমাদের মেয়েরা দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। একটা সুযোগ দিতে হয়, সুযোগ না দিলে হয় না।
আমার মা বড় গেরিলা ছিলেন: তিনি বলেন, আমি দেখেছি আমার মাকে, আমার বাবা সেই ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে সংগ্রাম শুরু করেন। যখন আমার বাবা কারাগারে থাকতেন, একদিকে সংসার, আমাদের মানুষ করার পাশাপাশি রাজনৈতিক দল করা, আন্দোলন সংগ্রামকে গড়ে তোলা, অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজগুলো করে গেছেন। তিনি যা করেছেন সবই পর্দার আড়ালে করেছেন। আমার মা বড় গেরিলা ছিলেন। গোয়েন্দা সংস্থাও কখনও ধরতে পারেনি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে বাবার নামে গোয়েন্দাদের রিপোর্টগুলো আমি পড়ে দেখেছি, আমার মা যে গোপনে আন্দোলনরত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর সাথে দেখা করা, তাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া, আন্দোলন কীভাবে গড়ে তুলবে সেগুলো (দিকনির্দেশনা) দেওয়া… এই কাজগুলো যে করতেন… কখনও গোয়েন্দারা ধরতে পারেননি। এজন্য তাদের কাছে রিপোর্টও নেই। তবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা যখন দেয় তখন কয়েকবার আমার মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ধারণা ছিল তখন তাকেও গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সেই সাহস পায়নি। মেয়েদের খেলাধুলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমাদের মেয়েরা এভারেস্টে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে গেছে। পাশাপাশি খেলাধুলায়, অনেক সাধারণ ঘরের মেয়েরা স্বর্ণ জয় করে আনে, তারা তাদের দক্ষতা দেখায়। মেয়েরা তো ফুটবল খেলায় ভারতকেও তিন-এক গোলে হারিয়ে দিয়েছে। নেপালকে হারিয়েছে। সবদিক থেকে তারা পারদর্শিতা দেখাচ্ছে। আমরা সুযোগ করে দিচ্ছি তারা তাদের পারদর্শিতা দেখাচ্ছে। সরকারপ্রধান বলেন, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা মেয়েদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি প্রথমবার নিয়ম করলাম যে প্রাইমারি শিক্ষকের ৬০ শতাংশ হবে নারী। সেইভাবে আমরা একে একে কাজ শুরু করেছি। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করেছি সারা বাংলাদেশে। ২০০১-এ প্রথমবার করেছিলাম, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেগুলো বন্ধ করে দেয়। সেখানে নারীরাই কাজ করে। সেখানে হেল্প প্রোভাইডার হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়ে নারীদের কাজে লাগাই।
জাতির পিতা সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছেন: এই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা আরও বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা আমাদের একটা সংবিধান দিয়েছেন, সেই সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছেন। নারীদের চাকরি ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কোটা নির্দিষ্ট করেছেন, চাকরির ক্ষেত্রে যাতে নারীরা সমান সুযোগ পেতে পারে। সংসদের সংক্ষরিত নারী আসন দিয়েছিলেন যাতে করে নারী নেতৃত্ব গড়ে উঠতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার ডাকে এ দেশের মানুষ অস্ত্র কাঁধে নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করেছে। পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় পাকিস্তানের শাসকরা আল বদর বাহিনী, রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলে। আমাদের কিছু দেশীয় দালাল, তারা নারীদের ধরে নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে দিয়ে দিত। দিনের পর দিন তাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চলতো। দিনের পর দিন তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন হয়। সে নির্যাতিত মা-বোনদের আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, নির্যাতিত নারীদের স্বাধীনতার পর উদ্ধার করা হয়। নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসনের জন্য জাতির পিতা শেখ মুজিব পুনর্বাসন বোর্ড করে দেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ডাক্তার, নার্স নিয়ে আসেন তাদের চিকিৎসা করাতে। কারণ, অনেকে তখন অন্তঃসত্ত্বা, অনেকের অবস্থা খারাপ ছিল। শারীরিক মানসিকভাবে তাদের চিকিৎসা এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেন। আমার মা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অনেক মেয়েকে বিয়ে দেন। এক সাথে অনেকের বিয়ের ব্যবস্থা করে দেন। তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেন। যারা বিয়ে করেন তাদের চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই নির্যাতিত নারীদের বীরাঙ্গনা নাম দিয়ে তাদের সম্মাননা দিয়েছেন। আমরা তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছি, তাদের অবদান ভোলার নয়।
পাঁচ নারীকে ‘জয়িতা পুরস্কার’: সমাজের নানা প্রতিকূলতা আর বাধা অতিক্রম করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে পাঁচ নারীর হাতে জাতীয় পর্যায়ে ‘সেরা জয়িতা পুরস্কার-২০২৩’ তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। জয়িতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- আনার কলি (অর্থনৈতিক), কল্যাণী মিঞ্জি (শিক্ষা ও কর্মসংস্থান), কমলি রবি দাশ (সফল মা), জাহানারা বেগম (নিপীড়ন প্রতিরোধ) এবং পাখি দত্ত হিজড়া (সামাজিক উন্নয়ন)। পুরস্কার প্রাপ্তদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট, স্যাশ (উত্তোরিয়) ও সনদপত্র দেওয়া হয়। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক। জয়িতা পুরস্কার প্রাপ্তদের পক্ষ থেকে কল্যাণী মিঞ্জি পুরস্কার পাওয়ার পর তার অনুভূতি জানান। অনুষ্ঠানের শুরুতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী ও কর্মকা-ের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। ‘জয়িতা’ (বিজয়ী), একজন নারী যিনি সকল বাধা জয় করে সাফল্যের শিখরে পৌঁছান, মানে এটি একজন সংগ্রামী ও অদম্য নারীর ছদ্মনাম। সরকার পাঁচটি ক্যাটাগরিতে জয়িতাদের পুরস্কার দিয়েছে। সেগুলো হল-অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী, শিক্ষা ও চাকরিতে সাফল্য অর্জনকারী নারী, সফল মা, নির্যাতনের কালো দিন মুছে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো নারী এবং সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখেছেন এমন নারী।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সরকার সুযোগ করে দিচ্ছে, নারীরা পারদর্শিতা দেখাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০৮:৫৬:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : আর্থিক, সামাজিক, রাজনীতি এবং খেলাধুলাসহ সবক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে যেতে সরকার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে আর নারীরা তাদের পারদর্শিতা দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জাতীয় পর্যায়ে ‘সেরা জয়িতা পুরস্কার-২০২৩’ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সমাজের নানা প্রতিকূলতা আর বাধা অতিক্রম করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে এবারে পাঁচ নারীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, “এভারেস্টেও আমাদের মেয়েরা বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে গেছে। পাশাপাশি খেলাধুলায় অনেক সাধারণ ঘরের মেয়েরা তারা স্বর্ণ জয় করে আনে, তারা তাদের দক্ষতা দেখায়। মেয়েরা তো ফুটবল খেলায় ভারতকেও তিন-এক গোলে হারিয়ে দিয়েছে। নেপালকে হারিয়েছে। সবদিক থেকে তারা পারদর্শিতা দেখাচ্ছে। আমরা সুযোগ করে দিচ্ছি তারা তাদের পারদর্শিতা দেখাচ্ছে।”
পুরুষদের বিরুদ্ধে বেশি কিছু বলে নিজের ভোট হারাতে চান না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের যে বৃত্তি দেই সেই বৃত্তির টাকা সরাসরি মায়ের নামে চলে যায়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেই টাকা মায়ের নামে চলে যায়। মায়ের নামে দিলে টাকাটা থাকে, কাজে লাগে আর সেটা সাশ্রয় হয়। বাবার নামে দিলে সব সময় যে পাবে তা তো না। দেখা গেল জুয়া-টুয়া খেলে উড়িয়ে দিল বা দুটো বড় বড় ইলিশ মাছ নিয়ে এসে খেয়ে সাবাড় করে দিল। মা সবসময় সঞ্চয় করে। মায়ের সব সময় সঞ্চয়ের মনোভাব আছে।
মুখে হাসি নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি পুরুষদের বিরুদ্ধে কিছু বলছি না। বেশি কিছু বলে নিজের ভোট হারাতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নারীদের জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, এমনকি বর্ডার গার্ড, কোথাও নারীদের অবস্থান ছিল না। আমরা সেখানে একে একে সব বাহিনীতে মেয়েদের সুযোগ করে দেই। মেরিন একাডেমিতে মেয়েদের পড়ারই সুযোগ ছিল না। সেটাও আমরা করে দিয়েছি। আজ দেশে-বিদেশে মেয়েরা কাজ করছে। আমাদের শান্তিরক্ষা মিশনে মেয়েরা সবচেয়ে ভালো কাজ করছে। জাতিসংঘ এখন মেয়ে অফিসার চায়। পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনীতে আমাদের মেয়েরা দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। একটা সুযোগ দিতে হয়, সুযোগ না দিলে হয় না।
আমার মা বড় গেরিলা ছিলেন: তিনি বলেন, আমি দেখেছি আমার মাকে, আমার বাবা সেই ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে সংগ্রাম শুরু করেন। যখন আমার বাবা কারাগারে থাকতেন, একদিকে সংসার, আমাদের মানুষ করার পাশাপাশি রাজনৈতিক দল করা, আন্দোলন সংগ্রামকে গড়ে তোলা, অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজগুলো করে গেছেন। তিনি যা করেছেন সবই পর্দার আড়ালে করেছেন। আমার মা বড় গেরিলা ছিলেন। গোয়েন্দা সংস্থাও কখনও ধরতে পারেনি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে বাবার নামে গোয়েন্দাদের রিপোর্টগুলো আমি পড়ে দেখেছি, আমার মা যে গোপনে আন্দোলনরত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর সাথে দেখা করা, তাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া, আন্দোলন কীভাবে গড়ে তুলবে সেগুলো (দিকনির্দেশনা) দেওয়া… এই কাজগুলো যে করতেন… কখনও গোয়েন্দারা ধরতে পারেননি। এজন্য তাদের কাছে রিপোর্টও নেই। তবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা যখন দেয় তখন কয়েকবার আমার মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ধারণা ছিল তখন তাকেও গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সেই সাহস পায়নি। মেয়েদের খেলাধুলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমাদের মেয়েরা এভারেস্টে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে গেছে। পাশাপাশি খেলাধুলায়, অনেক সাধারণ ঘরের মেয়েরা স্বর্ণ জয় করে আনে, তারা তাদের দক্ষতা দেখায়। মেয়েরা তো ফুটবল খেলায় ভারতকেও তিন-এক গোলে হারিয়ে দিয়েছে। নেপালকে হারিয়েছে। সবদিক থেকে তারা পারদর্শিতা দেখাচ্ছে। আমরা সুযোগ করে দিচ্ছি তারা তাদের পারদর্শিতা দেখাচ্ছে। সরকারপ্রধান বলেন, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা মেয়েদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি প্রথমবার নিয়ম করলাম যে প্রাইমারি শিক্ষকের ৬০ শতাংশ হবে নারী। সেইভাবে আমরা একে একে কাজ শুরু করেছি। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করেছি সারা বাংলাদেশে। ২০০১-এ প্রথমবার করেছিলাম, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেগুলো বন্ধ করে দেয়। সেখানে নারীরাই কাজ করে। সেখানে হেল্প প্রোভাইডার হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়ে নারীদের কাজে লাগাই।
জাতির পিতা সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছেন: এই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা আরও বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা আমাদের একটা সংবিধান দিয়েছেন, সেই সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছেন। নারীদের চাকরি ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কোটা নির্দিষ্ট করেছেন, চাকরির ক্ষেত্রে যাতে নারীরা সমান সুযোগ পেতে পারে। সংসদের সংক্ষরিত নারী আসন দিয়েছিলেন যাতে করে নারী নেতৃত্ব গড়ে উঠতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার ডাকে এ দেশের মানুষ অস্ত্র কাঁধে নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করেছে। পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় পাকিস্তানের শাসকরা আল বদর বাহিনী, রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলে। আমাদের কিছু দেশীয় দালাল, তারা নারীদের ধরে নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে দিয়ে দিত। দিনের পর দিন তাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চলতো। দিনের পর দিন তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন হয়। সে নির্যাতিত মা-বোনদের আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, নির্যাতিত নারীদের স্বাধীনতার পর উদ্ধার করা হয়। নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসনের জন্য জাতির পিতা শেখ মুজিব পুনর্বাসন বোর্ড করে দেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ডাক্তার, নার্স নিয়ে আসেন তাদের চিকিৎসা করাতে। কারণ, অনেকে তখন অন্তঃসত্ত্বা, অনেকের অবস্থা খারাপ ছিল। শারীরিক মানসিকভাবে তাদের চিকিৎসা এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেন। আমার মা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অনেক মেয়েকে বিয়ে দেন। এক সাথে অনেকের বিয়ের ব্যবস্থা করে দেন। তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেন। যারা বিয়ে করেন তাদের চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই নির্যাতিত নারীদের বীরাঙ্গনা নাম দিয়ে তাদের সম্মাননা দিয়েছেন। আমরা তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছি, তাদের অবদান ভোলার নয়।
পাঁচ নারীকে ‘জয়িতা পুরস্কার’: সমাজের নানা প্রতিকূলতা আর বাধা অতিক্রম করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে পাঁচ নারীর হাতে জাতীয় পর্যায়ে ‘সেরা জয়িতা পুরস্কার-২০২৩’ তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। জয়িতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- আনার কলি (অর্থনৈতিক), কল্যাণী মিঞ্জি (শিক্ষা ও কর্মসংস্থান), কমলি রবি দাশ (সফল মা), জাহানারা বেগম (নিপীড়ন প্রতিরোধ) এবং পাখি দত্ত হিজড়া (সামাজিক উন্নয়ন)। পুরস্কার প্রাপ্তদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট, স্যাশ (উত্তোরিয়) ও সনদপত্র দেওয়া হয়। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক। জয়িতা পুরস্কার প্রাপ্তদের পক্ষ থেকে কল্যাণী মিঞ্জি পুরস্কার পাওয়ার পর তার অনুভূতি জানান। অনুষ্ঠানের শুরুতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী ও কর্মকা-ের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। ‘জয়িতা’ (বিজয়ী), একজন নারী যিনি সকল বাধা জয় করে সাফল্যের শিখরে পৌঁছান, মানে এটি একজন সংগ্রামী ও অদম্য নারীর ছদ্মনাম। সরকার পাঁচটি ক্যাটাগরিতে জয়িতাদের পুরস্কার দিয়েছে। সেগুলো হল-অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী, শিক্ষা ও চাকরিতে সাফল্য অর্জনকারী নারী, সফল মা, নির্যাতনের কালো দিন মুছে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো নারী এবং সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখেছেন এমন নারী।