নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর মিন্টো রোডের মন্ত্রিপাড়ায় গাড়িতে করে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরির সময় গ্রেফতার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীর (৫৫) দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমান রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এদিন আসামিকে আদালতে উপস্থিত করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে ডিবি পুলিশ। আসামির আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামির জামিন নামঞ্জুর করে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
আসামির বিরুদ্ধে রমনা থানায় হওয়া সাধারণ ডায়েরি সূত্রে জানা যায়, শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মিন্টো রোডের মন্ত্রিপাড়া এলাকায় প্রাডো গাড়িতে আরোহণ করে সন্দেহজনক চলাচল করতে দেখা যায় আসামি এনায়েত করিম চৌধুরীকে। এ সময় তার গাড়ি থামানো হয় এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। তার কাছ থেকে পাওয়া ২ টি আইফোন জব্দ করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার ফোন বিশ্লেষণ করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানান যে, তিনি বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক। তিনি গত ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে নিউইয়র্ক থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট যোগে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে এই ব্যক্তি আরো জানান, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার চুক্তিভিত্তিক এজেন্ট। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তিনি বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের নিমিত্তে কাজ করার জন্য বাংলাদেশে এসেছেন বলে জানান।
তিনি গত ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থান করেন। পরবর্তীতে গুলশানের বর্তমান ঠিকানায় অবস্থান করতে থাকেন। এরইমধ্যে তিনি সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে এবং বিভিন্ন বাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা, ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন বলে জানান। তিনি আরো জানান, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমেরিকান সরকার হতাশ।
আগামী ২১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় রহিত করবেন বলে জানান আসামি। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে সেনাবাহিনী সমর্থিত নতুন জাতীয় সরকার অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। নতুন এই সরকারে কারা অংশ নেবেন এবং সরকারপ্রধান কে হবেন তা আমেরিকা নির্ধারণ করে দেবে বলে জানান। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে সরকারি ও বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বর্তমান অবস্থান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করে তাকে নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থার নিকট হস্তান্তর করতেন বলে জানান।
মামলায় বলা হয়, আসামি এনায়েত করিম চৌধুরী বর্তমানে বাংলাদেশের বৈধ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করার জন্য অন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে এসে জননিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত আছেন, যা ধর্তব্য অপরাধ।
এসি/আপ্র/১৫/০৯/২০২৫