নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে সরকারি আদেশ হাতে পাওয়ার পর এই রাজনৈতিক দলটির নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত করণীয় ঠিক করবে নির্বাচন কমিশর।
রোববার (১১ মে) নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার থেকে যে আদেশ জারি হবে, সে আদেশের শর্তানুযায়ী প্রচলিত আইন অনুসরণ করে ইসির যা করণীয় তাই করবে। ওইটা আমাদের হাতে এলে, এর উপর ভিত্তি করে কমিশনের যা করণীয় করা হবে।
নির্বাচনী আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে দলটি নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়। অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের দাবির মুখে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই দলটিকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছে তারা। শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে (সোমবার) জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা। সভায় তিনটি সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।
১। সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।
২। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেস-সহ আওয়ামী লীগ এর যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে।
৩। পাশাপাশি, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আরপিও-এর ৯০ জ অনুচ্ছেদের (১) (খ) দফায় বলা হয়েছে-কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল হবে- যদি সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। এর আগে গত ২৩ অক্টোবর ‘সন্ত্রাসী’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত একই আইনের আওতায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল শেখ হাসিনার সরকার পতনের তিন দিন পর ক্ষমতায় আসা মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। বিলুপ্ত বা বাতিল হলে দলের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশ করতে হবে ইসিকে।
অন্তবর্তী সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সিদ্ধান্তটা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানছি, আপনারা যেভাবে দেখছেন, আমরাও সেভাবে দেখছি। এ সংক্রান্ত পেপার্স আসবে নিশ্চয়ই, তারপর আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেছেন ইসি যখন সরকারের সিদ্ধান্ত হাতে পাবে তখন কমিশনকে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সরকার যে আদেশটা দেবে, আদেশে কী শর্ত থাকবে নির্বাচন কমিশন এখনো জানে না। আদেশের উপর ভিত্তি করে ইসি প্রচলিত আইন অনুযায়ী যা করার তাই করবে। আমরা অফিসিয়ালি কিছু জানি না। অফিসিয়ালি জানার পরে এর ভিত্তিতে আইন অনুযায়ী ইসির যা করার সেটাই করবে।