নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি কমিয়েছে সরকার। আগে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে ১০০ টাকা নেওয়া হতো। বর্তমানে তা ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার তথ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক তথ্য বিবরণীতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আগামী একমাস দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ১০০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকায় ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক বিশেষ সতর্ক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে। আরও বলা হয়েছে, ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। পরিবেশের পরিচ্ছন্নতার ওপর নজর দিতে হবে বলে পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে বার্তায় বলা হয়েছে।
ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো হলো: তীব্র মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরের পেশি ও জয়েন্টে ব্যথা, বমি বমি ভাব, নাসিয়া গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া, শরীরে র্যাশ ওঠা ও পাতলা পায়খানা।
ডেঙ্গু রোগীরা যেসব নিয়ম মেনে চলবেন: জ্বর হলে বেশি বেশি তরল খাবার খাবেন। যেমন-স্যালাইন, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের রস ও স্যুপ ইত্যাদি। ঘর, অফিস বা কর্মস্থলের জানালা সবসময় বন্ধ রাখতে হবে; মশার কামড় থেকে বাঁচতে যতটা সম্ভব শরীর ঢেকে রাখতে পারে এমন পোশাক পরিধান করতে হবে; দিনে অথবা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে; পরিবার, প্রতিবেশী ও কমিউনিটির মধ্যে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে; পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সবাইকে সরাসরি যুক্ত হওয়ার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। মশার প্রজনন রোধে নি¤œলিখিত কাজগুলো করতে হবে। ঘর ও আশেপাশের যেকোনো পাত্রে বা জায়গায় মাঠ অথবা রাস্তায় পানি জমতে দেওয়া যাবে না। ব্যবহৃত পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণে পাত্রটি ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা বা নারিকেলের মালা, কন্টেইনার, মটকা, ব্যাটারি সেল ও ফ্রিজে জমে থাকা পানি তিনদিনের মধ্যে ফেলে দিতে হবে। ডেঙ্গু হলে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দ্রুত যোগাযোগ করতে হবে।
ডেঙ্গু বিষয়ক এই বিশেষ বার্তায় জানানো হয়, ডেঙ্গু নিয়ে যেন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক না ছড়ায়। সাধারণ চিকিৎসাতেই এই জ্বর সেরে যায়। তবে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম এবং হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক হতে পারে।
ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হচ্ছে ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতাল: দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হওয়ায় ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালে পরিণত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জনবল এবং ডেঙ্গু চিকিৎসায় পর্যাপ্ত সরঞ্জামের ব্যবস্থা হলেই হাসপাতালটিকে পুরোপুরি ডেডিকেটেড হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) শাখার উপপরিচালক ডা. শফিকুল ইসলাম এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে মৌখিকভাবে ঘোষণা হয়েছে। ডেঙ্গু রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। শফিকুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ঘোষণা করার জন্য পর্যাপ্ত লোকবল ও সরঞ্জামের ব্যবস্থা এখনো হয়নি। তা হয়ে গেলে খুবই শিগগিরই পুরোপুরি ডেডিকেটেড হিসেবে হাসপাতালটিকে ঘোষণা করা হবে। এর আগে গত সোমবার (১০ জুলাই) দেশে অব্যাহতভাবে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকায় ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালকে প্রয়োজনে এক হাজার শয্যার ডেঙ্গু ডেডিকেটেড করে দেওয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, দেশে ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও এখনও তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। রাজধানীর অনেক হাসপাতালে এখনও শয্যা খালি রয়েছে, তবে রোগী বাড়ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের সব হাসপাতাল ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়েছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন। রাজধানী ঢাকার সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী রয়েছে। কারণ ওই অঞ্চলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। আমরা ওই হাসপাতাল থেকে রোগী অন্যান্য হাসপাতালে নেওয়ার কথা ভাবছি। কেননা এত বেশি রোগী হলে চিকিৎসা দেওয়া কঠিন।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ের কাজ লাইভ মনিটরিং করবে দক্ষিণ সিটি: ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে ও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম বিশেষ কন্ট্রোল রুম থেকে লাইভ মনিটরিং করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। বুধবার ডিএসসিসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে ডিএসসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির এ বিষয়ে একটি চিঠি ইস্যু করেছেন। এ সংক্রান্ত চিঠি এরইমধ্যে সব কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সব অঞ্চলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির উল্লেখ করেছেন, আগামী ১৩ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে ও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ের সব কার্যক্রম নগর ভবন থেকে লাইভ মনিটরিং করা হবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি পরিচালন কেন্দ্রে (শীতলক্ষ্যা হলে) বিশেষ কন্ট্রোল রুমের কার্যক্রম শুরু হবে। কন্ট্রোল রুমের কার্যক্রম শুক্রবার, শনিবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলমান থাকবে। তিনি আরও বলেন, বিগত বছরের মতো এবারও ডিএসসিসির মেয়র নিজে কন্ট্রোল রুমে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ড, অঞ্চলের মাঠ পর্যায়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম লাইভ মনিটরিং করবেন। সে কারণে কন্ট্রোল রুমের লাইভ মনিটরিং কার্যক্রমে প্রতিটি ওয়ার্ড, অঞ্চল থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকায় অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সমন্বয়ে বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে সংস্থাটি। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার ৯৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। এ কার্যক্রমের আওতায়, অভিযানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনা ও চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে এবং প্রয়োজন বোধে সেখানে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হচ্ছে। এরপর সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লার্ভিসাইডিং এবং অ্যাডাল্টিসাইডিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব অভিযানে করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যতীত স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করছেন এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন।