ঢাকা ০২:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

সরকারি টাকায় শিক্ষাসফর, ফেরার পরদিন গেলেন অবসরে

  • আপডেট সময় : ০২:৩৬:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ মে ২০২২
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত রোববার ছিল তাঁর শেষ কর্মদিবস। সেদিন তিনি চলে যান পিআরএলে (অবসরোত্তর ছুটি)। অথচ এর ঠিক আগের দিন সরকারি খরচে নেদারল্যান্ডস ও স্পেনে শিক্ষাসফর শেষে দেশে ফেরেন। তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিডি) সাবেক সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
একজন আমলা অবসরের আগমুহূর্তে যাওয়া এ শিক্ষাসফর সরকারের কী কাজে আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁর ১০ দিনের এ সফরের সম্পূর্ণ খরচ বহন করা হয়েছে সরকারি তিনটি প্রকল্পের তহবিল থেকে। অবসরের দ্বারপ্রান্তে থাকা আমলাদের শিক্ষাসফরকে সরকারি অর্থের অপচয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, তাঁর এ সফর অনৈতিক ছিল। তিনি এটা করতে পারেন না। তাঁর তো শিক্ষাসফরের দরকার নেই। এটা নতুন কর্মকর্তাদের জন্য প্রয়োজন, যাতে তাঁরা সেই শিক্ষা নিয়ে দেশের জন্য অবদান রাখতে পারেন।
মন্ত্রণালয়ের নথি অনুযায়ী, হেলালুদ্দীন আহমদ গত ১১ থেকে ২০ মে নেদারল্যান্ডসে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এবং স্পেনে গ্লোবাল ওয়াটার সামিটে অংশ নেন। এ শিক্ষাসফরে যাওয়া অপর ছয়জনের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। নেদারল্যান্ডস সফরটি ২৬-২৭ মে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ সম্মেলনের প্রস্তুতির অংশ ছিল।
এ সফরে যাওয়া ব্যক্তিদের খরচ বহন করা হয় সরকারের তিনটি প্রকল্প থেকে। সেগুলো হলো স্থানীয় সরকার বিভাগের ঢাকার খাদ্য ব্যবস্থা (ডিএফএস) প্রকল্প, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ইমার্জেন্সি মাল্টি সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রকল্প (ইএমসিআরপি) ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিটি গভর্নেন্স প্রকল্প।
ঢাকা মহানগর এলাকার জন্য একটি নিরাপদ ও টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ডিএফএস প্রকল্পের জন্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাকে অনুদান দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। বিশ্বব্যাংকের দেওয়া অর্থে বাস্তবায়নাধীন ইএমসিআরপি প্রকল্পের লক্ষ্য কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মৌলিক সেবা ও সামাজিক স্থিতিস্থাপকতা প্রদান করা। আর জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন সিটি গভর্নেন্স প্রকল্পের লক্ষ্য নগর অবকাঠামো উন্নয়ন।
এ বিষয়ে কথা বলতে হেলালুদ্দীন আহমদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি বলে একটি সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে। হেলালুদ্দীন আহমদ ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের সচিব ছিলেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ সফর নৈতিকতার ঘাটতি ও দায়িত্বহীনতার পরিচয়। যে প্রকল্পগুলো থেকে ব্যয় বহন করা হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে সফরের উদ্দেশ্যের সামঞ্জস্য নেই। এ ব্যয় প্রকল্পের তহবিল ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় প্রশ্ন তৈরি করবে। তিনি বলেন, অবসরের আগে হেলালুদ্দীন আহমদকে এ সফরটি উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। যাঁরা এ সফর অনুমোদন দিয়েছেন, তাঁরাও দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নিয়ম না মেনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ১৫ গাড়িচালকের নামে ঝিলমিলে প্লট বরাদ্দ

সরকারি টাকায় শিক্ষাসফর, ফেরার পরদিন গেলেন অবসরে

আপডেট সময় : ০২:৩৬:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ মে ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত রোববার ছিল তাঁর শেষ কর্মদিবস। সেদিন তিনি চলে যান পিআরএলে (অবসরোত্তর ছুটি)। অথচ এর ঠিক আগের দিন সরকারি খরচে নেদারল্যান্ডস ও স্পেনে শিক্ষাসফর শেষে দেশে ফেরেন। তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিডি) সাবেক সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
একজন আমলা অবসরের আগমুহূর্তে যাওয়া এ শিক্ষাসফর সরকারের কী কাজে আসবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁর ১০ দিনের এ সফরের সম্পূর্ণ খরচ বহন করা হয়েছে সরকারি তিনটি প্রকল্পের তহবিল থেকে। অবসরের দ্বারপ্রান্তে থাকা আমলাদের শিক্ষাসফরকে সরকারি অর্থের অপচয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, তাঁর এ সফর অনৈতিক ছিল। তিনি এটা করতে পারেন না। তাঁর তো শিক্ষাসফরের দরকার নেই। এটা নতুন কর্মকর্তাদের জন্য প্রয়োজন, যাতে তাঁরা সেই শিক্ষা নিয়ে দেশের জন্য অবদান রাখতে পারেন।
মন্ত্রণালয়ের নথি অনুযায়ী, হেলালুদ্দীন আহমদ গত ১১ থেকে ২০ মে নেদারল্যান্ডসে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এবং স্পেনে গ্লোবাল ওয়াটার সামিটে অংশ নেন। এ শিক্ষাসফরে যাওয়া অপর ছয়জনের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। নেদারল্যান্ডস সফরটি ২৬-২৭ মে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ সম্মেলনের প্রস্তুতির অংশ ছিল।
এ সফরে যাওয়া ব্যক্তিদের খরচ বহন করা হয় সরকারের তিনটি প্রকল্প থেকে। সেগুলো হলো স্থানীয় সরকার বিভাগের ঢাকার খাদ্য ব্যবস্থা (ডিএফএস) প্রকল্প, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ইমার্জেন্সি মাল্টি সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রকল্প (ইএমসিআরপি) ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিটি গভর্নেন্স প্রকল্প।
ঢাকা মহানগর এলাকার জন্য একটি নিরাপদ ও টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ডিএফএস প্রকল্পের জন্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাকে অনুদান দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। বিশ্বব্যাংকের দেওয়া অর্থে বাস্তবায়নাধীন ইএমসিআরপি প্রকল্পের লক্ষ্য কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মৌলিক সেবা ও সামাজিক স্থিতিস্থাপকতা প্রদান করা। আর জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন সিটি গভর্নেন্স প্রকল্পের লক্ষ্য নগর অবকাঠামো উন্নয়ন।
এ বিষয়ে কথা বলতে হেলালুদ্দীন আহমদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি বলে একটি সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে। হেলালুদ্দীন আহমদ ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের সচিব ছিলেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ সফর নৈতিকতার ঘাটতি ও দায়িত্বহীনতার পরিচয়। যে প্রকল্পগুলো থেকে ব্যয় বহন করা হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে সফরের উদ্দেশ্যের সামঞ্জস্য নেই। এ ব্যয় প্রকল্পের তহবিল ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় প্রশ্ন তৈরি করবে। তিনি বলেন, অবসরের আগে হেলালুদ্দীন আহমদকে এ সফরটি উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। যাঁরা এ সফর অনুমোদন দিয়েছেন, তাঁরাও দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।