আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে ঘনিষ্ঠ সহযোগী হুসেন আল-শেখের নাম ঘোষণা করেছেন। শনিবার (২৬ এপ্রিল) তিনি নাম ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছে পিএলও।
ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংশয় দূর করতে এ পদক্ষেপ জরুরি ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
২০০৪ সালে প্রবীণ নেতা ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পর থেকে পিএলও এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ (পিএ) দুটিরই নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন ৮৯ বছর বয়সী মাহমুদ আব্বাস। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে তাঁর উত্তরসূরি মনোনয়নসহ অভ্যন্তরীণ সংস্কারে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিলেন।
হুসেন আল-শেখের জন্ম ১৯৬০ সালে। তিনি ফাতাহ দলের নেতা। বর্তমানে মাহমুদ আব্বাস দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। হুসেন আল-শেখকে একজন বাস্তববাদী নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইসরায়েলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আব্বাসের দেওয়া মনোনয়ন পিএলওর নির্বাহী কমিটিতে অনুমোদন পাওয়ার পর হুসেন আল-শেখকে পিএলওর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পিএলওর এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ (পিএ) ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের কিছু এলাকায় সীমিত স্বায়ত্তশাসন চর্চা করে আসছে। পিএতে সংস্কার আনাটা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় দেশগুলোর অগ্রাধিকারের একটি বিষয়। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রত্যাশা হলো, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সমাধানে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করতে পারে।
গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সংস্কারের চাপ আরো জোরদার হয়েছে। পিএলওর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে গত ১৮ মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধপরবর্তী গাজা শাসনের জন্য সংস্কারকৃত পিএর ভূমিকা চায় যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধের পর গাজার পুনর্গঠনে সম্ভাব্য অর্থদাতা হিসেবে বিবেচিত উপসাগরীয় দেশগুলোও পিএতে বড় ধরনের সংস্কার চায়। গাজার বর্তমান শাসক হামাসকে নির্মূল করাই নিজেদের লক্ষ্য বলে ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। তবে গাজার সরকারে পিএকে কোনো ভূমিকা দিতে তারা রাজি নয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিরোধী।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ২০০৭ সাল থেকে গাজা নিয়ন্ত্রণ করছে। ২০০৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর স্বল্প সময়ের গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে তারা পিএকে পরাজিত করে। পশ্চিম তীরেও হামাসের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার পিএলওর সেন্ট্রাল কাউন্সিলের বৈঠকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ অনুমোদন করা হলেও তখন কোনো ব্যক্তির নাম ঘোষণা করা হয়নি।
সেই বৈঠকে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তাঁর এযাবৎকালের সবচেয়ে স্পষ্ট ভাষায় হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র করা এবং গাজা শাসনের দায়িত্ব পিএর হাতে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান। তবে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে পিএর জনপ্রিয়তা কমে এসেছে। এর কারণ হলো—ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে অগ্রগতির অভাব ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা অভিযান ক্রমেই বেড়ে যাওয়া। ১৯৯৩ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে অসলো চুক্তির মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ (পিএ) গঠিত হয়। সেই থেকে এটি ফাতাহর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারা সবশেষ পার্লামেন্ট নির্বাচন করেছে ২০০৫ সালে। ইসরায়েলি দখলদারিবিরোধী কর্মকা-ের জন্য ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী ছিলেন হুসেন আল-শেখ। ইসরায়েল সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তিনি মাহমুদ আব্বাসের অধীন পিএর প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন।