ঢাকা ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সমৃদ্ধি ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ নির্মাণে আমাদের করণীয়

  • আপডেট সময় : ০৬:১৮:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

ড. মিল্টন বিশ্বাস : সমৃদ্ধি ও সম্প্রীতি- দুটি শব্দ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়, সবাইকে নিয়ে উন্নয়ন’-এর কথা যেখানে উচ্চারিত হচ্ছে; সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অনিবার্য। কারণ বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষ মানুষকে রাষ্ট্র ও সরকার সমান দৃষ্টিতে দেখবে এটাই স্বাভাবিক। উন্নয়ন সমৃদ্ধির চাবিকাঠি। আর সম্প্রতি সহাবস্থানের প্রতীক। আমরা সবাই জানি, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতি হবে শক্তিশালী, দক্ষ কর্মী বাহিনী থাকবে এবং সকল নাগরিকের জন্য উচ্চ জীবনযাত্রার মান থাকবে।

‘আমাদের যেন বিশ্বের কাছে যেতে না হয়, বিশ্ব যেন আমাদের কাছে আসে। আমাদের তরুণদের মনে বিশ্বাস সৃষ্টি করতে হবে যে তারাই বিশ্ব’-একথা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন (৭/১১/২০২৪)। অর্থাৎ আমরা যেচে পড়ে বিশ্বের কাছে যাব না, কিংবা অনুগ্রহ ভিক্ষা করে দেশ পরিচালনা করব না- বরং নিজেদের যোগ্যতায়, আত্মবিশ্বাসে সমৃদ্ধ ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে তুলব। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর তারুণ্যের বিজয়কে গৌরবান্বিত করার জন্য এটি অনেক বড় অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য ছিল।

‘দ্রুত সংস্কার, দ্রুত নির্বাচনের’ প্রবক্তা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমান এদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য সুস্থধারার রাজনীতির পক্ষে অনবরত কথা বলে চলেছেন। তার একটি উদ্ধৃতি-‘একটি দেশের রাজনীতি যদি রুগ্ণ হয় সেই দেশের অর্থনীতি রুগ্ণ হতে বাধ্য এবং সেই দেশের অর্থনীতি যদি রুগ্ণ হয়, রাজনীতি যদি রুগ্ণ হয় তাহলে সেই দেশের শিক্ষা, সেই দেশের স্বাস্থ্য, সেই দেশের বিচার ব্যবস্থা, সেই দেশের প্রশাসন সবকিছু রুগ্ণ হয়ে যাবে। মানুষ কোনো সুফল কোনোভাবেই পাবে না। কাজেই প্রথম কাজ হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করা, জবাবদিহিতাকে প্রতিষ্ঠিত করা’ (১৯/১১/২০২৪)।

বলা বাহুল্য, বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার সময়েও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের একটি শক্তিশালী রেকর্ড রয়েছে। অনিশ্চয়তা এবং ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাস প্রত্যক্ষ করেছে। ১৯৭১ সালে জন্মের সময় সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলির মধ্যে একটি থেকে, বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের মর্যাদায় পৌঁছেছে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছাতে যাচ্ছে। স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ড. ইউনূস সরকারের সময় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬.৪ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের ২০২৪ সালের অক্টোবরের প্রতিবেদন অনুসারে, আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য সূচকের উপর ভিত্তি করে দারিদ্র্য ২০১০ সালে ১১.৮ শতাংশ থেকে কমে ২০২২ সালে ৫.০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে, আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখার উপর ভিত্তি করে (২০১৭ সালের পিপিপি ব্যবহার করে) মাঝারি দারিদ্র্য ২০১০ সালে ৪৯.৬ শতাংশ থেকে কমে ২০২২ সালে ৩০.০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া, মানব উন্নয়নের ফলাফল অনেক দিক দিয়ে উন্নত হয়েছে, যেমন শিশুমৃত্যু এবং স্থূলতার হার হ্রাস, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের অ্যাক্সেস। এই অগ্রগতি সত্ত্বেও, গ্রামীণ এলাকায় বৈষম্য কিছতা কমেছে এবং শহরাঞ্চলে আরও বেড়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে বলা যায়, শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতি ও অর্থপাচার আমাদের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এ বছরে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৪ অর্থবছরে ৫.২ শতাংশে নেমে এসেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে; যা ২০২৩ অর্থবছরের ৫.৮ শতাংশ থেকে কমেছে। মুদ্রাস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে, আর্থিক খাতের দুর্বলতা আরও খারাপ হয়েছে এবং বহিরাগত খাতের উপর চাপ অব্যাহত রয়েছে।

উচ্চ মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য, বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়িক পরিবেশের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে, এছাড়া মানব পুঁজি বৃদ্ধি করা আবশ্যক এবং দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরি করা জরুরি, দক্ষ অবকাঠামো তৈরি করাও প্রয়োজন। উপরন্তু বেসরকারি বিনিয়োগকে আকর্ষণ করে এমন নীতিগত পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

উন্নয়নের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক খাতের বাইরে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ; আর্থিক খাতের দুর্বলতা সমাধান; নগরায়নকে আরও টেকসই করা এবং উন্নয়নের জন্য আরও অভ্যন্তরীণ রাজস্ব তৈরির জন্য আর্থিক সংস্কারসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করা। প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে অবকাঠামোগত ব্যবধান দূর করা অপরিহার্য। জলবায়ুু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলা বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের ধাক্কা সামলাতে ও স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে সহায়তা করবে। সবুজ প্রবৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উন্নয়ন ফলাফলের স্থায়িত্বকে বজায় রাখবে।
দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপন করতে হলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা, স্থানীয় সরকারগুলোতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ইতিবাচক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করা জরুরি।

অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই একটি স্থিতিশীল বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি, রপ্তানি বৃদ্ধি করা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা সুরক্ষিত করার জন্য বৈদেশিক রিজার্ভ বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশ পুনর্গঠনের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ, বহুমাত্রিক পদ্ধতির প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক খাতগত পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও ন্যায়সঙ্গত, উদ্ভাবনী এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে একটি পথ নির্ধারণ করতে পারে। সমৃদ্ধির জন্য এসব করণীয় সম্পন্ন করা হলেই সুন্দর দেশ নির্মিত হবে না। এ জন্য আরও কাজ করতে হবে।

এ কথা আজ সর্বজনবিদিত যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য বিগত শেখ হাসিনা সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও খুনের বিচার সম্পন্ন করা বর্তমান সরকার, রাজনীতিবিদ ও জনগণের একটি অঙ্গীকার। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথ ধরে সকল বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশকে সামনে এগিয়ে নেবার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সেখানে আমাদের করণীয় কী? যেমন ধরুন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষত পুলিশ-র‌্যাব প্রভৃতি ৫ আগস্টের পর আজ অবধি পরিপূর্ণভাবে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। পক্ষান্তরে সেখানে বাংলাদেশের আস্থা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক সেনাবাহিনী জনগণের নিরাপত্তা বিধানে তাদের তৎপরতা দেখিয়ে চলেছেন। প্রশংসা ও গৌরবের জায়গা দখল করলেও সেনাবাহিনী সম্পর্কে ক্রমাগত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তাদের সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। তাদের ধৈর্যকে কটাক্ষ করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের দায়িত্ব কী? আমাদের দায়িত্ব ইতিবাচক বাংলাদেশকে তুলে ধরা। এবং সশস্ত্র বাহিনীর অবদানকে স্বীকার করা। আর যারা বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে তাদের সান্নিধ্য বর্জন করা। বরং সত্যকে সত্য বলা, সাদাকে সাদা বলা, নিজে স্বচ্ছ থাকা এবং মানুষে মানুষে ভেদাভেদ না করা এবং অপরাধকে প্রশ্রয় না দেওয়া- প্রভৃতির মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা সম্ভব।

বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য হলো সব ধর্মের, সব বিশ্বাসীর মিলে মিশে থাকার ঐতিহ্য। এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রীতির বন্ধনে জীবন-যাপন করে। বর্তমান সরকার এবং বিএনপির রাজনীতি এই সম্প্রীতি রক্ষার রাজনীতি। গত বছর ডিসেম্বরে ড. ইউনূস অটুট সম্প্রীতি ধরে রাখতে ধর্মীয় নেতাদের প্রতি এক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ‘ধর্মীয় নেতারাও দেশে শান্তি, সম্প্রীতি এবং স্বাধীনতা ও মর্যাদার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক কোনো বিভেদ নেই। এখানে সব ধর্মের মানুষ সুখে-শান্তিতে আছেন। দেশবিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সব শ্রেণি-ধর্মের মানুষ এক থাকবে’ (সমকাল, ৬/১২/২০২৪)।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রত্যাশার এই তীব্রতা তারেক রহমানের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে এভাবে- ‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের ঠেকাতে পুজোর সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা মন্দির ও উপাসনালয় পাহারা দিয়ে হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধসহ সকল মানুষের সুরক্ষায় পাশে দাঁড়িয়েছে। ধর্ম-বর্ণ কিংবা ভৌগোলিক আদর্শ অবস্থানে নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিক যেন তার ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অধিকার বিনা বাধায় উপভোগ করতে পারে সেই লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা লাখো প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন। তাই স্বাধীন বাংলাদেশেও তথাকথিত সংখ্যালঘু হিসাবে আমরা কাউকেই বিবেচনা করি না। প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করাই বিএনপির নীতি’ (১৪/১১/২০২৪)।

আসলে সম্প্রীতির বোধ মানবতাবাদ থেকে উৎসারিত। ড. ইউনূস এবং দেশের রাজনীতিবিদ ও ধর্মীয় নেতারা যেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতোই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘ইসলাম ধর্ম কোনো অন্য ধর্মাবলম্বীকে আঘাত করিতে আদেশ দেন নাই। ইসলামের মূলনীতি সহনশীলতা। পরমত সহনশীলতার অভাবে অশিক্ষিত প্রচারকদের প্রভাবে আমাদের ধর্ম বিকৃতির চরম সীমায় গিয়া পৌঁছিয়াছে।’ কবির মতো দেশপ্রেমিকরা জানেন, ‘মানুষকে মানুষের সম্মান দিতে যদি না পারেন, তবে বৃথাই আপনি মুসলিম।’ তবু ধর্ম নিয়ে অপপ্রচার থেমে নেই। অপপ্রচার মোকাবেলা করে সম্প্রীতি রক্ষার জন্য শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে- তাহলেই সম্প্রীতির বাংলাদেশ টেকসই হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে- সরকার ও রাজনীতিবিদরা জবাবদিহিতার মধ্যে থাকলে মানুষের মঙ্গল হবেই হবে। ড. ইউনূস সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ‘শ্বেতপত্র’ অনুসারে দরিদ্র ও অ-দরিদ্রদের উপর মুদ্রাস্ফীতির পার্থক্যমূলক প্রভাব হল ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে জীবনযাত্রার মানের ব্যবধান বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। অর্থনৈতিক সমীক্ষা মতে, মুদ্রাস্ফীতির এক শতাংশ বৃদ্ধি বাংলাদেশে আয় বৈষম্য ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে মুদ্রাস্ফীতির হার ৬ শতাংশের বেশি হলে উচ্চ আয় বৈষম্যের সাথে যুক্ত। এই সীমার নিচে সম্পর্কটি নগণ্য। বৈষম্যের উচ্চতর প্রাথমিক স্তরের পাশাপাশি বেকারত্বের একটি বৈষম্য-বর্ধক প্রভাব রয়েছে। এজন্য বৈষম্য নিরসন এবং বেকারত্ব দূর করে দেশকে সমৃদ্ধির সোপানে উন্নীত করা এবং অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়ে তোলার প্রত্যয়- নতুন বাংলাদেশে সফল করার জন্য দেশপ্রেমিক সৈনিক হওয়া আজকের নাগরিকের অন্যতম করণীয়।

লেখক : সেক্রেটারি, ইক্যুমেনিক্যাল খ্রিস্টান ট্রাস্ট (ইসিটি)

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মব বন্ধ না করলে ডেভিল হিসেবে ট্রিট করবো: উপদেষ্টা মাহফুজ

সমৃদ্ধি ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ নির্মাণে আমাদের করণীয়

আপডেট সময় : ০৬:১৮:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ড. মিল্টন বিশ্বাস : সমৃদ্ধি ও সম্প্রীতি- দুটি শব্দ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়, সবাইকে নিয়ে উন্নয়ন’-এর কথা যেখানে উচ্চারিত হচ্ছে; সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অনিবার্য। কারণ বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষ মানুষকে রাষ্ট্র ও সরকার সমান দৃষ্টিতে দেখবে এটাই স্বাভাবিক। উন্নয়ন সমৃদ্ধির চাবিকাঠি। আর সম্প্রতি সহাবস্থানের প্রতীক। আমরা সবাই জানি, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতি হবে শক্তিশালী, দক্ষ কর্মী বাহিনী থাকবে এবং সকল নাগরিকের জন্য উচ্চ জীবনযাত্রার মান থাকবে।

‘আমাদের যেন বিশ্বের কাছে যেতে না হয়, বিশ্ব যেন আমাদের কাছে আসে। আমাদের তরুণদের মনে বিশ্বাস সৃষ্টি করতে হবে যে তারাই বিশ্ব’-একথা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন (৭/১১/২০২৪)। অর্থাৎ আমরা যেচে পড়ে বিশ্বের কাছে যাব না, কিংবা অনুগ্রহ ভিক্ষা করে দেশ পরিচালনা করব না- বরং নিজেদের যোগ্যতায়, আত্মবিশ্বাসে সমৃদ্ধ ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে তুলব। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর তারুণ্যের বিজয়কে গৌরবান্বিত করার জন্য এটি অনেক বড় অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য ছিল।

‘দ্রুত সংস্কার, দ্রুত নির্বাচনের’ প্রবক্তা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমান এদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য সুস্থধারার রাজনীতির পক্ষে অনবরত কথা বলে চলেছেন। তার একটি উদ্ধৃতি-‘একটি দেশের রাজনীতি যদি রুগ্ণ হয় সেই দেশের অর্থনীতি রুগ্ণ হতে বাধ্য এবং সেই দেশের অর্থনীতি যদি রুগ্ণ হয়, রাজনীতি যদি রুগ্ণ হয় তাহলে সেই দেশের শিক্ষা, সেই দেশের স্বাস্থ্য, সেই দেশের বিচার ব্যবস্থা, সেই দেশের প্রশাসন সবকিছু রুগ্ণ হয়ে যাবে। মানুষ কোনো সুফল কোনোভাবেই পাবে না। কাজেই প্রথম কাজ হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করা, জবাবদিহিতাকে প্রতিষ্ঠিত করা’ (১৯/১১/২০২৪)।

বলা বাহুল্য, বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার সময়েও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের একটি শক্তিশালী রেকর্ড রয়েছে। অনিশ্চয়তা এবং ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাস প্রত্যক্ষ করেছে। ১৯৭১ সালে জন্মের সময় সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলির মধ্যে একটি থেকে, বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের মর্যাদায় পৌঁছেছে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছাতে যাচ্ছে। স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ড. ইউনূস সরকারের সময় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬.৪ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের ২০২৪ সালের অক্টোবরের প্রতিবেদন অনুসারে, আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য সূচকের উপর ভিত্তি করে দারিদ্র্য ২০১০ সালে ১১.৮ শতাংশ থেকে কমে ২০২২ সালে ৫.০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে, আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখার উপর ভিত্তি করে (২০১৭ সালের পিপিপি ব্যবহার করে) মাঝারি দারিদ্র্য ২০১০ সালে ৪৯.৬ শতাংশ থেকে কমে ২০২২ সালে ৩০.০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া, মানব উন্নয়নের ফলাফল অনেক দিক দিয়ে উন্নত হয়েছে, যেমন শিশুমৃত্যু এবং স্থূলতার হার হ্রাস, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের অ্যাক্সেস। এই অগ্রগতি সত্ত্বেও, গ্রামীণ এলাকায় বৈষম্য কিছতা কমেছে এবং শহরাঞ্চলে আরও বেড়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে বলা যায়, শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতি ও অর্থপাচার আমাদের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এ বছরে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৪ অর্থবছরে ৫.২ শতাংশে নেমে এসেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে; যা ২০২৩ অর্থবছরের ৫.৮ শতাংশ থেকে কমেছে। মুদ্রাস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে, আর্থিক খাতের দুর্বলতা আরও খারাপ হয়েছে এবং বহিরাগত খাতের উপর চাপ অব্যাহত রয়েছে।

উচ্চ মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য, বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়িক পরিবেশের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে, এছাড়া মানব পুঁজি বৃদ্ধি করা আবশ্যক এবং দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরি করা জরুরি, দক্ষ অবকাঠামো তৈরি করাও প্রয়োজন। উপরন্তু বেসরকারি বিনিয়োগকে আকর্ষণ করে এমন নীতিগত পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

উন্নয়নের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক খাতের বাইরে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ; আর্থিক খাতের দুর্বলতা সমাধান; নগরায়নকে আরও টেকসই করা এবং উন্নয়নের জন্য আরও অভ্যন্তরীণ রাজস্ব তৈরির জন্য আর্থিক সংস্কারসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করা। প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে অবকাঠামোগত ব্যবধান দূর করা অপরিহার্য। জলবায়ুু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলা বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের ধাক্কা সামলাতে ও স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে সহায়তা করবে। সবুজ প্রবৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উন্নয়ন ফলাফলের স্থায়িত্বকে বজায় রাখবে।
দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপন করতে হলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা, স্থানীয় সরকারগুলোতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ইতিবাচক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করা জরুরি।

অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই একটি স্থিতিশীল বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি, রপ্তানি বৃদ্ধি করা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা সুরক্ষিত করার জন্য বৈদেশিক রিজার্ভ বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশ পুনর্গঠনের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ, বহুমাত্রিক পদ্ধতির প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক খাতগত পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও ন্যায়সঙ্গত, উদ্ভাবনী এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে একটি পথ নির্ধারণ করতে পারে। সমৃদ্ধির জন্য এসব করণীয় সম্পন্ন করা হলেই সুন্দর দেশ নির্মিত হবে না। এ জন্য আরও কাজ করতে হবে।

এ কথা আজ সর্বজনবিদিত যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য বিগত শেখ হাসিনা সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও খুনের বিচার সম্পন্ন করা বর্তমান সরকার, রাজনীতিবিদ ও জনগণের একটি অঙ্গীকার। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথ ধরে সকল বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশকে সামনে এগিয়ে নেবার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সেখানে আমাদের করণীয় কী? যেমন ধরুন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষত পুলিশ-র‌্যাব প্রভৃতি ৫ আগস্টের পর আজ অবধি পরিপূর্ণভাবে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। পক্ষান্তরে সেখানে বাংলাদেশের আস্থা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক সেনাবাহিনী জনগণের নিরাপত্তা বিধানে তাদের তৎপরতা দেখিয়ে চলেছেন। প্রশংসা ও গৌরবের জায়গা দখল করলেও সেনাবাহিনী সম্পর্কে ক্রমাগত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তাদের সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। তাদের ধৈর্যকে কটাক্ষ করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের দায়িত্ব কী? আমাদের দায়িত্ব ইতিবাচক বাংলাদেশকে তুলে ধরা। এবং সশস্ত্র বাহিনীর অবদানকে স্বীকার করা। আর যারা বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে তাদের সান্নিধ্য বর্জন করা। বরং সত্যকে সত্য বলা, সাদাকে সাদা বলা, নিজে স্বচ্ছ থাকা এবং মানুষে মানুষে ভেদাভেদ না করা এবং অপরাধকে প্রশ্রয় না দেওয়া- প্রভৃতির মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা সম্ভব।

বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য হলো সব ধর্মের, সব বিশ্বাসীর মিলে মিশে থাকার ঐতিহ্য। এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রীতির বন্ধনে জীবন-যাপন করে। বর্তমান সরকার এবং বিএনপির রাজনীতি এই সম্প্রীতি রক্ষার রাজনীতি। গত বছর ডিসেম্বরে ড. ইউনূস অটুট সম্প্রীতি ধরে রাখতে ধর্মীয় নেতাদের প্রতি এক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ‘ধর্মীয় নেতারাও দেশে শান্তি, সম্প্রীতি এবং স্বাধীনতা ও মর্যাদার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক কোনো বিভেদ নেই। এখানে সব ধর্মের মানুষ সুখে-শান্তিতে আছেন। দেশবিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সব শ্রেণি-ধর্মের মানুষ এক থাকবে’ (সমকাল, ৬/১২/২০২৪)।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রত্যাশার এই তীব্রতা তারেক রহমানের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে এভাবে- ‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের ঠেকাতে পুজোর সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা মন্দির ও উপাসনালয় পাহারা দিয়ে হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধসহ সকল মানুষের সুরক্ষায় পাশে দাঁড়িয়েছে। ধর্ম-বর্ণ কিংবা ভৌগোলিক আদর্শ অবস্থানে নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিক যেন তার ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অধিকার বিনা বাধায় উপভোগ করতে পারে সেই লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা লাখো প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন। তাই স্বাধীন বাংলাদেশেও তথাকথিত সংখ্যালঘু হিসাবে আমরা কাউকেই বিবেচনা করি না। প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করাই বিএনপির নীতি’ (১৪/১১/২০২৪)।

আসলে সম্প্রীতির বোধ মানবতাবাদ থেকে উৎসারিত। ড. ইউনূস এবং দেশের রাজনীতিবিদ ও ধর্মীয় নেতারা যেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতোই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘ইসলাম ধর্ম কোনো অন্য ধর্মাবলম্বীকে আঘাত করিতে আদেশ দেন নাই। ইসলামের মূলনীতি সহনশীলতা। পরমত সহনশীলতার অভাবে অশিক্ষিত প্রচারকদের প্রভাবে আমাদের ধর্ম বিকৃতির চরম সীমায় গিয়া পৌঁছিয়াছে।’ কবির মতো দেশপ্রেমিকরা জানেন, ‘মানুষকে মানুষের সম্মান দিতে যদি না পারেন, তবে বৃথাই আপনি মুসলিম।’ তবু ধর্ম নিয়ে অপপ্রচার থেমে নেই। অপপ্রচার মোকাবেলা করে সম্প্রীতি রক্ষার জন্য শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে- তাহলেই সম্প্রীতির বাংলাদেশ টেকসই হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে- সরকার ও রাজনীতিবিদরা জবাবদিহিতার মধ্যে থাকলে মানুষের মঙ্গল হবেই হবে। ড. ইউনূস সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ‘শ্বেতপত্র’ অনুসারে দরিদ্র ও অ-দরিদ্রদের উপর মুদ্রাস্ফীতির পার্থক্যমূলক প্রভাব হল ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে জীবনযাত্রার মানের ব্যবধান বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। অর্থনৈতিক সমীক্ষা মতে, মুদ্রাস্ফীতির এক শতাংশ বৃদ্ধি বাংলাদেশে আয় বৈষম্য ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে মুদ্রাস্ফীতির হার ৬ শতাংশের বেশি হলে উচ্চ আয় বৈষম্যের সাথে যুক্ত। এই সীমার নিচে সম্পর্কটি নগণ্য। বৈষম্যের উচ্চতর প্রাথমিক স্তরের পাশাপাশি বেকারত্বের একটি বৈষম্য-বর্ধক প্রভাব রয়েছে। এজন্য বৈষম্য নিরসন এবং বেকারত্ব দূর করে দেশকে সমৃদ্ধির সোপানে উন্নীত করা এবং অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়ে তোলার প্রত্যয়- নতুন বাংলাদেশে সফল করার জন্য দেশপ্রেমিক সৈনিক হওয়া আজকের নাগরিকের অন্যতম করণীয়।

লেখক : সেক্রেটারি, ইক্যুমেনিক্যাল খ্রিস্টান ট্রাস্ট (ইসিটি)