ঢাকা ০৮:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

সমাজ বাস্তবতা, খালেদা জিয়া ও নতুন বছর

  • আপডেট সময় : ১০:১৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ জানুয়ারী ২০২২
  • ১০৮ বার পড়া হয়েছে

অজয় দাশগুপ্ত : নতুন বছর শুরু। যা শুনি, যা বলা হয়, যা প্রচার- সেটা ইতিবাচক বা নেতিবাচক যাই হোক না কেন মূলত বাস্তবতা তেমনটি নয়। বিদেশে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা ইতিবাচক ইমেজের বাংলাদেশের সামনে আরও অনেক পথ পাড়ি দেওয়া বাকী। সন্তুষ্টি নিজেদের ব্যাপার। বাস্তবে সত্যিই আমাদের যেতে হবে অনেকদূর। তাই প্রশ্ন জাগে সত্যিকার অর্থে কেমন আছে বাংলাদেশের মানুষ? আমরা যারা দেশের বাইরে বসবাস করি সেখানকার সমস্যাগুলো আমাদের জীবনপ্রবাহে আঘাত হানতে পারে না। তাই আমাদের দেখা স্বদেশ মায়া আর কল্পনার স্বদেশ। কিন্তু আকাশকে চ্যালেঞ্জ জানানো ইট-সুরকি-বালি ও ধোঁয়া ওঠা উন্নয়নের আড়ালে কেমন আছে আমাদের স্বজনেরা?
পরিসংখ্যান বিষয়টা সব আমলে একতরফা। বিশেষত গোলমেলে। তাই এগুলোর ওপর নির্ভর করা ঠিক মনে করি না। কিন্তু এটা মানি- দেশ এগিয়েছে। কিন্তু সমাজ? আমাদের দেশে চলমান অসাম্প্রদায়িক ধারা এ বছর সবচাইতে বেশি আহত হয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজার সময় ঘটে যাওয়া ঘটনার দায় সরকার বা প্রশাসন এড়াতে পারে না। এর সাথে একদিকে যেমন নারীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, অন্যদিকে ক্রমাগত উধাও খোলা মাথা খোঁপার নারীশক্তি। সবকিছুর ওপরে আছে করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা।
বয়স ষাট পেরিয়ে যাওয়া আমরা বহু পতন দেখেছি। দেখেছি কঠিন সময়। মুক্তিযুদ্ধের মতো কঠিন সময় দেখেছি আমরা। সে সময়ের হত্যা-নিপীড়ণ চোখে দেখার পরও বলবো এমন সময় আসেনি আগে। শুধু কি বাংলাদেশ? পুরো দুনিয়া আজ আতংকে ভয়ে মুহ্যমান। আমি বিগত প্রায় আড়াই দশক পৃথিবীর উন্নত ও জীবনযাপনের মানে সেরা এক দেশের সেরা শহর সিডনিতে বাস করি। আজ সেখানেও আমরা ভালো নাই। কেউ ভালো নাই, কোনও দেশে।
বছরের শেষদিকে আমরা কী খবর পেলাম? বিশ্বে জ্ঞান বিজ্ঞান জানা দেশের সূচকে আমরা ১৩৮টি দেশের তালিকায় আছি ১২১ নম্বরে। যে পাকিস্তানকে আমরা আয়, টাকার মান, শিশুমৃত্যু ও নারী উন্নয়নে হারিয়েছি বলে গর্ব করি- সেই পাকিস্তানও এক্ষেত্রে আছে আমাদের আগের সারিতে। এ কথা মানতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও জড়িতরা বাদে লেখাপড়া নিয়ে সরকারের কোনও মাথা ব্যথা নাই। একটি দেশের ভিত্তি যে মেধা সেটাই আজ নিদারুণ দুর্বিপাকে। কি ভয়াবহ কথা! আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এ দু:সংবাদ নিয়ে আমরা প্রবেশ করছি আরেকটি নতুন বছরে। আপনি, আমি আমরা- যে দেশে, যে সমাজে বাস করি না কেন- একটা বিষয় দেখি দেশে লেখাপড়া আছে সবার নিচে।
করোনাভাইরাসের এই ভয়াবহতার পরও দেশে হত্যা-জখম-খুন-ধর্ষণ কমেনি। বেড়েছে অনাচার। পাশাপাশি, একদল মানুষ নেমেছে দেশ ও জাতিকে পেছনে টানার কাজে। তাদের মাথায় এক চিন্তা এক ভাবনা- কিভাবে আমাদের সব অর্জন নষ্ট করে অসাম্প্রদায়িক সমাজ গুঁড়িয়ে দেশ ও জাতিকে উগ্র করে তোলা যায় সে ধান্দায় এরা গেল বছর নেমেছে ভাস্কর্য ভাঙ্গার কাজে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের ওপর হামলা করতে করতে হাত পাকানো এরা এবার হাত দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে। জাতির পিতার কন্যার শাসনামলে তারা আওয়ামী লীগের তোয়াক্কা না করেই ভেঙ্গেছে তার ভাস্কর্য। কি ভয়ংকর কথা আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের সাথে আপসে সমাধান করার জন্য বৈঠকও করেছেন! একবার ভাবুন, সরকারবিরোধী কোনও রাজনৈতিক দল মাঠে নামতে পারে না আর এরা বঙ্গবন্ধুকে ভেঙ্গেও মন্ত্রীর সাথে দেখা করতে পারে। আরো একটি বিষয় বলি। যে ভাষায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলা উচিৎ সে ভাষায় কথা বললেন পুলিশ প্রধান পুলিশ সুপারেরা। তাঁদের স্যালুট জানাই। এতে প্রমানিত হয় আমাদের রাজনীতি কতো দুর্বল আর ভঙ্গুর এখন।
এই বছরে দেশের পাশাপাশি বিদেশের অর্থনীতির অবস্থাও খারাপ। কেউ কাউকে সাহায্য করার জায়গায় নাই। তারপরও বাংলাদেশের যেসব মেধাবী মানুষ, পরিশ্রমী মানুষেরা অর্থনীতিকে সচল রাখেন তাদের খবর নাই কোথাও। জাতির সেরা সন্তান কৃষক-শ্রমিক-পোশাক শিল্পীদের কোন খবর থাকে না গণমাধ্যমে। তারা সামনে থাকলে মানুষ এসব আজেবাজে নেতাদের মুখ দেখা থেকে মুক্তি পেতেন। সে কাজটি মিডিয়া করে না। করতে চায় না।
গতবছর দুনিয়াজুড়ে করোনাভাইরাসের যে তা-ব তার কোন ব্যাখ্যা কিংবা সমাধান মেলেনি। সবাই জানি শুরুতে চীনের একটি প্রদেশকে দায়ী করে উৎসভূমি বলাটা চালু হলেও, পরে সে বিষয়ে আর কোন ব্যাখ্যা মিললো না। যে কারণে যেভাবেই হোক এই মহামারীর আক্রমণে ছোট বড় সব দেশের জীবন কাহিল। এমন কি সম্প্রতি অ্যান্টার্কটিকার মতো বরফঢাকা নির্জন মহাদেশেও পাওয়া গেছে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী। অনেকে মনে করেন, দুনিয়ায় বসবাসরত দীর্ঘায়ু বয়স্কজনেদের চাপ আর নিতে রাজি না ধনী দেশের সরকার। তাই আমেরিকা-ইউরোপে তাদের বিদায়ে বা মৃত্যুতে রাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল নির্বিকার থাকা। এমন কি একসময় বয়স্ক মানুষদের মুখ থেকে শ্বাসযন্ত্র খুলে তাদের চলে যাওয়ার ব্যবস্থা দ্রুত নিশ্চিত করেছিল অনেক দেশের সরকার! এই ধরনের অমানবিক নিষ্ঠুর আচরণ আমরা আর দেখতে চাই না। যদি বাংলাদেশের কথা বলি সেখানে এমন কা- হয়নি, তবে আসলে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা কতো আর কারা রোগী কারা নন- এ পরিসংখ্যান অজানাই রয়ে গেছে।
এখন অবধি উন্নয়নের নামে ভাসমান জাতি এই জরুরী কাজ শেষ করতে পারেনি। বরং আমরা সাহেদের মতো করোনা ব্যবসায়ীদের চেহারা দেখে জেনেছি মহামারী এবং তার সার্টিফিকেটও ব্যবসার উপাদান হতে পারে। আমাদের সমাজ ও বাংলাদেশিদের জীবনে এখন প্রধান বৈরী মূলত মৌলবাদের থাবা। জাতি-জাতীয়তা ও আমাদের ভবিষ্যতের ওপর এই থাবা নতুন করে তার আধিপত্য বিস্তার করছে। এমন নয় যে এগুলো আগে ছিল না। কিন্তু এখন তারা মূলত অপ্রতিরোধ্য। সমাজে তাদের সংখ্যা এখন বেশি। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী ও সরকারের কঠোরতা না থাকলে কবেই গিলে খেত তারা। এখনও খাবে। কারণ সমাজে সত্তর আশি শতাংশ মানুষের মগজ ধোলাই করার কাজ শেষ। তারা মনে মনে এসব মৌলবাদের হয় প্রচ্ছন্ন নয়তো কড়া সমর্থক। ২০২২ সাল তো বটেই এর পরের বছরগুলোতে বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ এর মোকাবেলা। ব্যর্থ হলে দেশে পতাকা, সংগীতসহ বহু মৌলিক বিষয়ে যে পরিবর্তন ঘটবে তা কেউ ঠেকাতে পারবে না।
বিশ্বায়নের অপব্যাখ্যা আর ভুল প্রয়োগ এজন্য কম দায়ী না। সাথে আছে প্রতিবেশী দেশের জন্য যৌক্তিক ও অযৌক্তিক প্রেম এবং বিরোধিতা।
নতুন বছরে আমার ধারণা খালেদা জিয়াই হবেন টক অব দ্য কান্ট্রি। তার নিরাময় হোক বা না হোক তিনি এখন আছেন সহানুভূতি আর সমর্থনের শীর্ষে। একথা সবাই জানি তার আমলে নানাবিধ অন্যায়-অবিচার চলেছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিনে কেক কেটে জন্মদিনের বিকৃত উদযাপনসহ অনেককিছুর পরও তাকে বিদেশ যেতে দেওয়া, না দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মাঠ গরম হবে বলেই ধারণা। আওয়ামী লীগ যতো কঠোর হচ্ছে, যতোই যাবার ব্যাপারে নিষেধের বেড়াজাল দিচ্ছে- ততই বাড়ছে তার প্রিয়তা। খালেদা জিয়ার প্রতি এই সহানুভূতি বাঙালির সহজাত ব্যাপার। কোণঠাসা কারও প্রতি, তা সে দোষী ও নিপীড়ক হোক বা না হোক- বাঙালি সব সময়ই নিকট অতীত ভুলে যায়।
তবু আশা করি আগামী বছরে নতুন এক স্বদেশ নবীন তারুণ্য আর নব আন্তর্জাতিকতা মিলে রচিত হবে নতুন ভুবন। জয় হোক মানুষের। জয় হোক মানবিক বিশ্ব ও বাংলাদেশের।
লেখক : কলামিস্ট।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সমাজ বাস্তবতা, খালেদা জিয়া ও নতুন বছর

আপডেট সময় : ১০:১৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ জানুয়ারী ২০২২

অজয় দাশগুপ্ত : নতুন বছর শুরু। যা শুনি, যা বলা হয়, যা প্রচার- সেটা ইতিবাচক বা নেতিবাচক যাই হোক না কেন মূলত বাস্তবতা তেমনটি নয়। বিদেশে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা ইতিবাচক ইমেজের বাংলাদেশের সামনে আরও অনেক পথ পাড়ি দেওয়া বাকী। সন্তুষ্টি নিজেদের ব্যাপার। বাস্তবে সত্যিই আমাদের যেতে হবে অনেকদূর। তাই প্রশ্ন জাগে সত্যিকার অর্থে কেমন আছে বাংলাদেশের মানুষ? আমরা যারা দেশের বাইরে বসবাস করি সেখানকার সমস্যাগুলো আমাদের জীবনপ্রবাহে আঘাত হানতে পারে না। তাই আমাদের দেখা স্বদেশ মায়া আর কল্পনার স্বদেশ। কিন্তু আকাশকে চ্যালেঞ্জ জানানো ইট-সুরকি-বালি ও ধোঁয়া ওঠা উন্নয়নের আড়ালে কেমন আছে আমাদের স্বজনেরা?
পরিসংখ্যান বিষয়টা সব আমলে একতরফা। বিশেষত গোলমেলে। তাই এগুলোর ওপর নির্ভর করা ঠিক মনে করি না। কিন্তু এটা মানি- দেশ এগিয়েছে। কিন্তু সমাজ? আমাদের দেশে চলমান অসাম্প্রদায়িক ধারা এ বছর সবচাইতে বেশি আহত হয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজার সময় ঘটে যাওয়া ঘটনার দায় সরকার বা প্রশাসন এড়াতে পারে না। এর সাথে একদিকে যেমন নারীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, অন্যদিকে ক্রমাগত উধাও খোলা মাথা খোঁপার নারীশক্তি। সবকিছুর ওপরে আছে করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা।
বয়স ষাট পেরিয়ে যাওয়া আমরা বহু পতন দেখেছি। দেখেছি কঠিন সময়। মুক্তিযুদ্ধের মতো কঠিন সময় দেখেছি আমরা। সে সময়ের হত্যা-নিপীড়ণ চোখে দেখার পরও বলবো এমন সময় আসেনি আগে। শুধু কি বাংলাদেশ? পুরো দুনিয়া আজ আতংকে ভয়ে মুহ্যমান। আমি বিগত প্রায় আড়াই দশক পৃথিবীর উন্নত ও জীবনযাপনের মানে সেরা এক দেশের সেরা শহর সিডনিতে বাস করি। আজ সেখানেও আমরা ভালো নাই। কেউ ভালো নাই, কোনও দেশে।
বছরের শেষদিকে আমরা কী খবর পেলাম? বিশ্বে জ্ঞান বিজ্ঞান জানা দেশের সূচকে আমরা ১৩৮টি দেশের তালিকায় আছি ১২১ নম্বরে। যে পাকিস্তানকে আমরা আয়, টাকার মান, শিশুমৃত্যু ও নারী উন্নয়নে হারিয়েছি বলে গর্ব করি- সেই পাকিস্তানও এক্ষেত্রে আছে আমাদের আগের সারিতে। এ কথা মানতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও জড়িতরা বাদে লেখাপড়া নিয়ে সরকারের কোনও মাথা ব্যথা নাই। একটি দেশের ভিত্তি যে মেধা সেটাই আজ নিদারুণ দুর্বিপাকে। কি ভয়াবহ কথা! আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এ দু:সংবাদ নিয়ে আমরা প্রবেশ করছি আরেকটি নতুন বছরে। আপনি, আমি আমরা- যে দেশে, যে সমাজে বাস করি না কেন- একটা বিষয় দেখি দেশে লেখাপড়া আছে সবার নিচে।
করোনাভাইরাসের এই ভয়াবহতার পরও দেশে হত্যা-জখম-খুন-ধর্ষণ কমেনি। বেড়েছে অনাচার। পাশাপাশি, একদল মানুষ নেমেছে দেশ ও জাতিকে পেছনে টানার কাজে। তাদের মাথায় এক চিন্তা এক ভাবনা- কিভাবে আমাদের সব অর্জন নষ্ট করে অসাম্প্রদায়িক সমাজ গুঁড়িয়ে দেশ ও জাতিকে উগ্র করে তোলা যায় সে ধান্দায় এরা গেল বছর নেমেছে ভাস্কর্য ভাঙ্গার কাজে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের ওপর হামলা করতে করতে হাত পাকানো এরা এবার হাত দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে। জাতির পিতার কন্যার শাসনামলে তারা আওয়ামী লীগের তোয়াক্কা না করেই ভেঙ্গেছে তার ভাস্কর্য। কি ভয়ংকর কথা আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের সাথে আপসে সমাধান করার জন্য বৈঠকও করেছেন! একবার ভাবুন, সরকারবিরোধী কোনও রাজনৈতিক দল মাঠে নামতে পারে না আর এরা বঙ্গবন্ধুকে ভেঙ্গেও মন্ত্রীর সাথে দেখা করতে পারে। আরো একটি বিষয় বলি। যে ভাষায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলা উচিৎ সে ভাষায় কথা বললেন পুলিশ প্রধান পুলিশ সুপারেরা। তাঁদের স্যালুট জানাই। এতে প্রমানিত হয় আমাদের রাজনীতি কতো দুর্বল আর ভঙ্গুর এখন।
এই বছরে দেশের পাশাপাশি বিদেশের অর্থনীতির অবস্থাও খারাপ। কেউ কাউকে সাহায্য করার জায়গায় নাই। তারপরও বাংলাদেশের যেসব মেধাবী মানুষ, পরিশ্রমী মানুষেরা অর্থনীতিকে সচল রাখেন তাদের খবর নাই কোথাও। জাতির সেরা সন্তান কৃষক-শ্রমিক-পোশাক শিল্পীদের কোন খবর থাকে না গণমাধ্যমে। তারা সামনে থাকলে মানুষ এসব আজেবাজে নেতাদের মুখ দেখা থেকে মুক্তি পেতেন। সে কাজটি মিডিয়া করে না। করতে চায় না।
গতবছর দুনিয়াজুড়ে করোনাভাইরাসের যে তা-ব তার কোন ব্যাখ্যা কিংবা সমাধান মেলেনি। সবাই জানি শুরুতে চীনের একটি প্রদেশকে দায়ী করে উৎসভূমি বলাটা চালু হলেও, পরে সে বিষয়ে আর কোন ব্যাখ্যা মিললো না। যে কারণে যেভাবেই হোক এই মহামারীর আক্রমণে ছোট বড় সব দেশের জীবন কাহিল। এমন কি সম্প্রতি অ্যান্টার্কটিকার মতো বরফঢাকা নির্জন মহাদেশেও পাওয়া গেছে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী। অনেকে মনে করেন, দুনিয়ায় বসবাসরত দীর্ঘায়ু বয়স্কজনেদের চাপ আর নিতে রাজি না ধনী দেশের সরকার। তাই আমেরিকা-ইউরোপে তাদের বিদায়ে বা মৃত্যুতে রাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল নির্বিকার থাকা। এমন কি একসময় বয়স্ক মানুষদের মুখ থেকে শ্বাসযন্ত্র খুলে তাদের চলে যাওয়ার ব্যবস্থা দ্রুত নিশ্চিত করেছিল অনেক দেশের সরকার! এই ধরনের অমানবিক নিষ্ঠুর আচরণ আমরা আর দেখতে চাই না। যদি বাংলাদেশের কথা বলি সেখানে এমন কা- হয়নি, তবে আসলে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা কতো আর কারা রোগী কারা নন- এ পরিসংখ্যান অজানাই রয়ে গেছে।
এখন অবধি উন্নয়নের নামে ভাসমান জাতি এই জরুরী কাজ শেষ করতে পারেনি। বরং আমরা সাহেদের মতো করোনা ব্যবসায়ীদের চেহারা দেখে জেনেছি মহামারী এবং তার সার্টিফিকেটও ব্যবসার উপাদান হতে পারে। আমাদের সমাজ ও বাংলাদেশিদের জীবনে এখন প্রধান বৈরী মূলত মৌলবাদের থাবা। জাতি-জাতীয়তা ও আমাদের ভবিষ্যতের ওপর এই থাবা নতুন করে তার আধিপত্য বিস্তার করছে। এমন নয় যে এগুলো আগে ছিল না। কিন্তু এখন তারা মূলত অপ্রতিরোধ্য। সমাজে তাদের সংখ্যা এখন বেশি। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী ও সরকারের কঠোরতা না থাকলে কবেই গিলে খেত তারা। এখনও খাবে। কারণ সমাজে সত্তর আশি শতাংশ মানুষের মগজ ধোলাই করার কাজ শেষ। তারা মনে মনে এসব মৌলবাদের হয় প্রচ্ছন্ন নয়তো কড়া সমর্থক। ২০২২ সাল তো বটেই এর পরের বছরগুলোতে বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ এর মোকাবেলা। ব্যর্থ হলে দেশে পতাকা, সংগীতসহ বহু মৌলিক বিষয়ে যে পরিবর্তন ঘটবে তা কেউ ঠেকাতে পারবে না।
বিশ্বায়নের অপব্যাখ্যা আর ভুল প্রয়োগ এজন্য কম দায়ী না। সাথে আছে প্রতিবেশী দেশের জন্য যৌক্তিক ও অযৌক্তিক প্রেম এবং বিরোধিতা।
নতুন বছরে আমার ধারণা খালেদা জিয়াই হবেন টক অব দ্য কান্ট্রি। তার নিরাময় হোক বা না হোক তিনি এখন আছেন সহানুভূতি আর সমর্থনের শীর্ষে। একথা সবাই জানি তার আমলে নানাবিধ অন্যায়-অবিচার চলেছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিনে কেক কেটে জন্মদিনের বিকৃত উদযাপনসহ অনেককিছুর পরও তাকে বিদেশ যেতে দেওয়া, না দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মাঠ গরম হবে বলেই ধারণা। আওয়ামী লীগ যতো কঠোর হচ্ছে, যতোই যাবার ব্যাপারে নিষেধের বেড়াজাল দিচ্ছে- ততই বাড়ছে তার প্রিয়তা। খালেদা জিয়ার প্রতি এই সহানুভূতি বাঙালির সহজাত ব্যাপার। কোণঠাসা কারও প্রতি, তা সে দোষী ও নিপীড়ক হোক বা না হোক- বাঙালি সব সময়ই নিকট অতীত ভুলে যায়।
তবু আশা করি আগামী বছরে নতুন এক স্বদেশ নবীন তারুণ্য আর নব আন্তর্জাতিকতা মিলে রচিত হবে নতুন ভুবন। জয় হোক মানুষের। জয় হোক মানবিক বিশ্ব ও বাংলাদেশের।
লেখক : কলামিস্ট।