ঢাকা ০৪:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

সমস্যায় জর্জরিত পবিপ্রবি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র

  • আপডেট সময় : ০৯:১১:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৮১ বার পড়া হয়েছে

ক্যম্পাস ক্যারিয়ার ডেস্ক : পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে প্রতিষ্ঠার ২৩ বছরে পদার্পণ করেছে ৯০ একরের উচ্চ শিক্ষাঙ্গনটি। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। তবে উন্নত হয়নি ক্যাম্পাসের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মান। প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী এবং কয়েকশ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্রে সেবা নিতে গেলে শুধু প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঔষধ কিনতে হয় বাইরে থেকে। নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে তাদের, যাদের ওষুধ কেনা এবং অন্যান্য টেস্ট খরচের বাড়তি চাপ সামলাতে গিয়ে চরম অর্থকষ্টে পড়তে হয়। এমনকি রাতের বেলায় কেউ অসুস্থ হলে চারদিকে ছোটাছুটি করতে হয়। কারণ, তখন স্থানীয় দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
কেন্দ্রে কয়েক বছর আগে টেস্টের জন্য কিছু যন্ত্রপাতি এবং একজন ল্যাব টেকনোলজিস্ট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার জন্য ফি নেওয়ায় তাতে সবার আগ্রহ কম। সেখানে যে আলট্রাসনোগ্রাম করার যন্ত্র আছে, এটা জানার আগেই বিপুল অর্থ ব্যয়ে কেনা যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন আরেকটি কেনা হলেও তা প্যাকেট করা অবস্থায় পড়ে আছে। নেই কোনো এক্সরে যন্ত্র। মাত্র একজন নার্স রয়েছেন কেয়ারটিতে। ফলে বিকাল ৫টার পরে কিংবা সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে প্রাথমিক সব চিকিৎসা দেন ওখানকার এমএলএসএস (কর্মচারী)। তাদের চিকিৎসা বিষয়ে নেই কোনো ডিগ্রি বা প্রশিক্ষণ। দুই বছর আগে নতুন একটি ভবন হলেও তাতে কোনো বেড (শয্যা) স্থাপন করা হয়নি। ফলে ভবনটি অব্যবহৃত পড়ে আছে।
জরুরি অবস্থায় শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবা না দেওয়া, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায়ও অ্যাম্বুলেন্স পেতে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার-শনিবার বন্ধ থাকে এবং অন্য দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ফলে সাপ্তাহিক ছুটির দু’দিন কিংবা ৯টা-৫টার পরে কেউ অসুস্থ হলে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। কেয়ারের একমাত্র ওজন মাপার যন্ত্রটি নষ্ট। নেই কোনো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র।
১০ জন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেছেন, কোনো রোগের জন্য গেলে এন্টিবায়োটিক লিখে দেওয়া হয়। এজন্য শিক্ষার্থীদের কাছে হেলথ কেয়ারটি এন্টিবায়োটিক সেন্টার নামে অধিক পরিচিত। সব রোগের জন্যই এন্টিবায়োটিক, এই ভয়ে সেখান থেকে চিকিৎসা নেন না অনেকেই। কেউ কেউ স্থানীয় সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পটুয়াখালী অথবা বরিশাল শহরে যান চিকিৎসা নিতে। তবে হেলথ কেয়ার সেন্টারে প্রায় সময় বহিরাগতদের চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।
বিবিএ ১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী মহসিন বলেন, ‘হেলথ কেয়ারে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় সামান্য সমস্যায় পটুয়াখালী কিংবা বরিশাল শহরে যেতে হয়। ওষুধ সুবিধা না থাকায় রাতের বেলায় কেউ অসুস্থ হলে চারদিকে ছোটাছুটি করতে হয়। পর্যাপ্ত ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা হোক।’
হেলথ কেয়ার সেন্টারের চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. এ টি এম নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘প্রেসক্রিপশনের সঙ্গে ওষুধ দিলে তার অপব্যবহার হতে পারে। ওষুদের বিষয়টি নিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছে। হেলথ কেয়ারের বাৎসরিক বাজেট আরও বৃদ্ধি করলে ওষুধ দেওয়া সম্ভব হবে।’
সেন্টারে কর্মরত স্টাফরা বলছেন, প্রতি মাসে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা ৪ হাজার শিক্ষার্থী এবং কয়েকশ শিক্ষক, কর্মকর্তা,কর্মচারীর জন্য স্যালাইন কিনতেই শেষ হয়ে যায়।
এসব বিষয়ে বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, ‘বাজেটের স্বল্পতা থাকায় প্রেসক্রিপশনের কোনো ওষুধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া, সেন্টারে দক্ষ জনবল সংকট রয়েছে। দ্রুত সব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সমস্যায় জর্জরিত পবিপ্রবি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র

আপডেট সময় : ০৯:১১:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২২

ক্যম্পাস ক্যারিয়ার ডেস্ক : পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে প্রতিষ্ঠার ২৩ বছরে পদার্পণ করেছে ৯০ একরের উচ্চ শিক্ষাঙ্গনটি। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। তবে উন্নত হয়নি ক্যাম্পাসের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মান। প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী এবং কয়েকশ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্রে সেবা নিতে গেলে শুধু প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঔষধ কিনতে হয় বাইরে থেকে। নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে তাদের, যাদের ওষুধ কেনা এবং অন্যান্য টেস্ট খরচের বাড়তি চাপ সামলাতে গিয়ে চরম অর্থকষ্টে পড়তে হয়। এমনকি রাতের বেলায় কেউ অসুস্থ হলে চারদিকে ছোটাছুটি করতে হয়। কারণ, তখন স্থানীয় দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
কেন্দ্রে কয়েক বছর আগে টেস্টের জন্য কিছু যন্ত্রপাতি এবং একজন ল্যাব টেকনোলজিস্ট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার জন্য ফি নেওয়ায় তাতে সবার আগ্রহ কম। সেখানে যে আলট্রাসনোগ্রাম করার যন্ত্র আছে, এটা জানার আগেই বিপুল অর্থ ব্যয়ে কেনা যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন আরেকটি কেনা হলেও তা প্যাকেট করা অবস্থায় পড়ে আছে। নেই কোনো এক্সরে যন্ত্র। মাত্র একজন নার্স রয়েছেন কেয়ারটিতে। ফলে বিকাল ৫টার পরে কিংবা সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে প্রাথমিক সব চিকিৎসা দেন ওখানকার এমএলএসএস (কর্মচারী)। তাদের চিকিৎসা বিষয়ে নেই কোনো ডিগ্রি বা প্রশিক্ষণ। দুই বছর আগে নতুন একটি ভবন হলেও তাতে কোনো বেড (শয্যা) স্থাপন করা হয়নি। ফলে ভবনটি অব্যবহৃত পড়ে আছে।
জরুরি অবস্থায় শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবা না দেওয়া, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায়ও অ্যাম্বুলেন্স পেতে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার-শনিবার বন্ধ থাকে এবং অন্য দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ফলে সাপ্তাহিক ছুটির দু’দিন কিংবা ৯টা-৫টার পরে কেউ অসুস্থ হলে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। কেয়ারের একমাত্র ওজন মাপার যন্ত্রটি নষ্ট। নেই কোনো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র।
১০ জন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেছেন, কোনো রোগের জন্য গেলে এন্টিবায়োটিক লিখে দেওয়া হয়। এজন্য শিক্ষার্থীদের কাছে হেলথ কেয়ারটি এন্টিবায়োটিক সেন্টার নামে অধিক পরিচিত। সব রোগের জন্যই এন্টিবায়োটিক, এই ভয়ে সেখান থেকে চিকিৎসা নেন না অনেকেই। কেউ কেউ স্থানীয় সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পটুয়াখালী অথবা বরিশাল শহরে যান চিকিৎসা নিতে। তবে হেলথ কেয়ার সেন্টারে প্রায় সময় বহিরাগতদের চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।
বিবিএ ১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী মহসিন বলেন, ‘হেলথ কেয়ারে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় সামান্য সমস্যায় পটুয়াখালী কিংবা বরিশাল শহরে যেতে হয়। ওষুধ সুবিধা না থাকায় রাতের বেলায় কেউ অসুস্থ হলে চারদিকে ছোটাছুটি করতে হয়। পর্যাপ্ত ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা হোক।’
হেলথ কেয়ার সেন্টারের চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. এ টি এম নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘প্রেসক্রিপশনের সঙ্গে ওষুধ দিলে তার অপব্যবহার হতে পারে। ওষুদের বিষয়টি নিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছে। হেলথ কেয়ারের বাৎসরিক বাজেট আরও বৃদ্ধি করলে ওষুধ দেওয়া সম্ভব হবে।’
সেন্টারে কর্মরত স্টাফরা বলছেন, প্রতি মাসে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা ৪ হাজার শিক্ষার্থী এবং কয়েকশ শিক্ষক, কর্মকর্তা,কর্মচারীর জন্য স্যালাইন কিনতেই শেষ হয়ে যায়।
এসব বিষয়ে বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, ‘বাজেটের স্বল্পতা থাকায় প্রেসক্রিপশনের কোনো ওষুধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া, সেন্টারে দক্ষ জনবল সংকট রয়েছে। দ্রুত সব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’