বিনোদন প্রতিবেদক: মনপুরা, মনের মানুষ, টেলিভিশন, আয়নাবাজি, দেবী, পাপ পুণ্য এবং সর্বশেষ ‘হাওয়া’ দিয়ে মাত করেছেন বড়পর্দা। প্রচলিত অর্থে তারমধ্যে নেই নায়কোচিত হাবভাব। ব্যক্তিত্ব, অভিনয়ে সতস্ফূর্ততার কারণে দর্শকের কাছে ভরসার নাম হয়ে উঠেছেন তিনি। সিনেমায় তার অভিনয় দেখতে আকালের দিনেও তাই প্রেক্ষাগৃহে হুমড়ি খেয়ে পড়ে হাজারও মানুষ। এর প্রমাণ তিনি বার বার দিয়েছেন। বলা হচ্ছে, সমকালের মেধাবী অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর কথা। থিয়েটার দিয়ে যার শুরু। এরপর ছোটপর্দা ও সিনেমায় সমানতালে দাপট দেখিয়ে চলেছেন। হাল সময়ের ওটিটিতে হয়ে উঠেছেন অপ্রতিরোধ্য। বাংলাদেশের গত এক যুগের সবচেয়ে আলোচিত এবং একইসঙ্গে ব্যবসা সফল সিনেমাগুলোর সাথেও জড়িয়ে চঞ্চলের নাম। কেউ কেউ তাকে বলেন, লম্বা রেসের ঘোড়া। অন্তত সিনেমার বেলায় এ কথাটি বিশ্বাস করেন তার সহকর্মী নির্মাতা, অভিনেতারাও। তবে চঞ্চল চৌধুরীর ভক্ত অনুরাগীদের বিরাট অংশ তাকে নিয়মিত চলচ্চিত্রে দেখতে চান।
যদিও চঞ্চল চৌধুরীর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের গ্রাফ বলে, তিনি দেখে শুনে এবং বুঝে প্রতিটি সিনেমায় পা রেখেছেন। একটি সিনেমা থেকে অন্য আরেকটি সিনেমার দূরত্ব কয়েক বছর! নাটকে তাকে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে পেলেও সিনেমার বেলায় কেন এমন? আয়নাবাজি মুক্তির পর এই অভিনেতাকে এমন প্রশ্ন করা হলে সেসময় তিনি জানিয়েছিলেন,‘প্রত্যেক বছর ভালো গল্পের, ভালো নির্মাণের ছবি করতে চাই। আর সেটা করার জন্য আমি বছরের পর বছর অপেক্ষা করি। এই যেমন মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর টেলিভিশনের পর চার বছর আমাকে অপেক্ষা করতে হলো ‘আয়নাবাজি’র জন্যে। এই যে অপেক্ষা এইটা মধুর। একটা ভালো গল্পের ছবির জন্য আমি আরো বেশিদিন অপেক্ষা করতে পারবো।’ তার মতে, ‘সিনেমা করি নিজের ভালো লাগা থেকে। এই কাজগুলোই আমি আসলে করতে চাই। আর আমার সাথে যায় বলেই কিন্তু অন্যদিকে সুযোগ থাকলেও নিজেকে বেচে দেইনি। জনপ্রিয়তাটা আমি টাকা কামানোর জন্য ব্যবহার করিনি। মনপুরা’র জনপ্রিয়তা বেচে দেইনি। বা অন্য ছবিতে অভিনয় করে যে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছি তা যেথায় সেথায় বিকিয়ে দেইনি। মনপুরা, টেলিভিশন বা আয়নাবাজি ছবিতে অভিনয়ের পর বহু সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু তা করেনি।’ সর্বশেষ মেজবাউর রহমান সুমনের প্রথম ছবি ‘হাওয়া’ দিয়ে শুধু দেশে নয়, পৌঁছে গেছেন ভারতীয় বিশাল দর্শক শ্রেণীর কাছেও। ছবিটি দেশের প্রেক্ষাগৃহে সুপারহিট হওয়ার পর কলকাতা সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মুক্তি পেয়েছে। কলকাতায় ছবিটি দেখতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এই ছবির বদৌলতে চঞ্চল এখন ভারতীয় বাংলা ভাষাভাষি মানুষের কাছেও তুমুল জনপ্রিয়। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যে সৃজিত মুখার্জীর আসন্ন সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয়ও করে ফেলেছেন। কিংবদন্তী নির্মাতা মৃণাল সেনকে নিয়ে নির্মিত ছবি শিগগির মুক্তি পাবে।
নাটক, সিনেমায় স্বকীয়তার স্বাক্ষর রাখা চঞ্চল আরো ধারালো হয়েছেন ওটিটির কল্যাণে। টিভি নাটক কিংবা সিনেমার পাশাপাশি এই মাধ্যমেও চঞ্চল অল্প সময়ে নিজের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন। ‘তাকদীর’ নামের ওয়েব সিরিজে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে সাড়া ফেলেছেন। তাকদীর ছাড়াও আরো কয়েকটি ওয়েব কন্টেন্ট তাকে পৌঁছে দেয় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। ওয়েব সিরিজ ‘কন্ট্রাক্ট’ এর ব্ল্যাক রঞ্জু বাংলাদেশ-ভারতের দর্শকদের কাছে তুমুল প্রশংসিত হয়েছে। ওয়েব সিরিজ ‘বলি’তেও দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন চঞ্চল। তবে জনপ্রিয়তায় বাংলা ভাষাভাষি মানুষের কাছে ছাড়িয়ে গেছে চঞ্চল অভিনীত তাকদীর খ্যাত নির্মাতা শাওকীর ‘কারাগার’ ওয়েব সিরিজটি। এতে চঞ্চলের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছেন আবালবৃদ্ধবনিতা। এরইমধ্যে চঞ্চল অভিনীত বেশকিছু কন্টেন্ট এসেছে ওটিটিতে। সেগুলোর মধ্যে সর্বশেষ স্ট্রিমিং হওয়া ‘কালপুরুষ’ এর জন্য প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি। বড়পর্দায় বেশ কয়েকটি ছবি আছে মুক্তির প্রতীক্ষায়। এরমধ্যে সৃজিত মুখার্জীর ‘পদাতিক’ ছাড়াও রায়হান রাফী পরিচালিত ‘তুফান’ আছে মুক্তির প্রতীক্ষায়। যেখানে সুপারস্টার শাকিব খানের সাথে প্রথমবার স্ক্রিন শেয়ার করতে চলেছেন এই তারকা। ছবিতে নেতিবাচক চরিত্রেই দেখা যাবে তাকে। বাংলাদেশ-ভারতের দর্শক এই ছবিতে শাকিব-চঞ্চলের দ্বৈরথ দেখতে মুখিয়ে আছেন!
সব মাধ্যমেই অপ্রতিরোধ্য চঞ্চল
ট্যাগস :
সব মাধ্যমেই অপ্রতিরোধ্য চঞ্চল
জনপ্রিয় সংবাদ