নিজস্ব প্রতিবেদক :সারাদেশের এক কোটি মানুষকে এক দিনে কোভিড টিকাদানের লক্ষ্যে দেওয়া হচ্ছে টিকার প্রথম ডোজ। এই গণটিকাদান কার্যক্রমকে ঘিরে রাজধানীর টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। মানুষের হুড়োহুড়ির পাশাপাশি কোনো কোনো কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা মানুষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।
আগ্রহী টিকাপ্রত্যাশীর তুলনায় বুথের সংখ্যা কম ও খোলামেলা জায়গায় না হওয়ায় এমন বিশৃঙ্খলার তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। গতকাল শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন টিকা কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘ লাইনে টিকা নেওয়ার জন্য দাড়িয়ে আছেন শত শত মানুষ। কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, কেউবা আবার একাই এসেছেন টিকা নিতে। নারী-পুরুষের আলাদা সারি তৈরি করা হয়েছে।
কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে, অনেকেই মাস্ক ছাড়াই এসেছেন টিকা নিতে। কিছু কেন্দ্র থেকে তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে মাস্ক। কিছু কেন্দ্রে লাইনে দাড়ানো নিয়েও সৃষ্টি হচ্ছে বাকবিতন্ডার। তাদেরকে নিয়ন্ত্রনে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন দ্বায়িত্বরতরা।
এদিকে অনেকেই জন্ম নিবন্ধন কার্ড বা এনআইডি কার্ড ছাড়াই এসেছেন টিকা নিতে তবে তাদের ক্ষেত্রে টিকা দেওয়া শেষে একটি টিকা কার্ড দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এই কার্ড দেখিয়ে দ্বিতীয় ডোজ গ্রহন করতে হবে এবং কার্ডটি ভালোভাবে সংরক্ষনের পরামর্শও দিচ্ছেন তারা।
টিকা কেন্দ্রর কর্মরত কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সকাল ১০ থেকে টিকা দেওয়া শুরু করলেও সকাল ৬টার পর পর সাধারন মানুষ এসে লাইন ধরেছেন। টিকা কেন্দ্রগুলোতে মানুষের উপস্থিতির তুলনায় টিকাদান বুথের সংক্ষ্যা কম থাকায় টিকা নিতে আসা লোকজন টিকা কেন্দ্রে আরও বুথ বাড়ানোর দরকার ছিল বলে জানান তারা।
এদিকে সকালে রাজধানীর সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে গণটিকা কার্যক্রম পরিদর্শনে আসতে দেখা গেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম আতিককে।
পরিদর্শনে এসে পর্যাপ্ত টিকা মজুদ আছে জানিয়ে সবাইকে সুশৃঙ্খলভাবে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান মেয়র আতিকুল। তিনি বলেন, ‘আজ টিকা নিতে যাওয়া মানুষকে টিকা না দিয়ে কেন্দ্র বন্ধ হবে না। সবাইকে টিকা দেওয়া হবে। টিকা না নিয়ে কেউ ফিরে যাবেন না। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত টিকা মজুত আছে।’
মেয়র আতিকুল আরও বলেন, টিকা না নিলে সিটি করপোরেশন থেকে কোনো ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। আগামী পহেলা মার্চ ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে প্রত্যেক দোকানে দোকানে আমরা অভিযান চালিয়ে দেখবো টিকা সনদ আছে কিনা। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের টিকার সনদ না থাকলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে। ট্রেড লাইসেন্স রিনিউ করতেও টিকার সনদ লাগবে, সনদ না থাকলে ট্রেড লাইসেন্স রিনিউ করা যাবে না।’
দেশে করোনার গণটিকাদান শুরু হয় গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি। এরপর থেকে গত বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত করোনার প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ১০ কোটি ৮ লাখের বেশি মানুষ। আর এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছেন ৮ কোটি ১৭ লাখের বেশি মানুষ।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ বি এম খুরশিদ আলম জানিয়েছিলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারির পর প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া বন্ধ থাকবে। পরে অবশ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, ২৬ ফেব্রুয়ারির পরও প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধ হবে না। তবে প্রথম ডোজের চেয়ে দ্বিতীয় ও বুস্টার (তৃতীয়) ডোজকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সব টিকাকেন্দ্রেই মানুষের ভিড়, হুড়োহুড়ি-বিশৃঙ্খলা
ট্যাগস :
সব টিকাকেন্দ্রেই মানুষের ভিড়
জনপ্রিয় সংবাদ