ঢাকা ১২:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

সব গণহত্যায় জড়িতদের বিচার হবে : জামায়াত আমির

  • আপডেট সময় : ০৭:১৪:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
  • ৮২ বার পড়া হয়েছে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত সব গণহত্যায় জড়িত সবার বিচার করতে হবে বলে জানিয়েছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫ আগস্টে যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিচার আগে করতে হবে। তারা বলত (আওয়ামী লীগ) আইন সবার জন্য সমান। সেই সমান আইনে তাদের বিচারের অধিকার আছে কিনা? তাদের তৈরি করা কালা-কানুনে দ্রুত তাদের বিচার করতে হবে। তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে যেন তাদের মাহরুম (বঞ্চিত) করা না হয়। জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে গতকাল রোববারসকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বার্ষিক সদস্য (রুকন) সম্মেলন ২০২৪-এর প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নেতা, শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
ডা. শফিকুর বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে বাংলাদেশের মানবতা ও গণতন্ত্রকে জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাকে জবাই করা হয়েছে। ওই দিনটিতে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর বহু ত্যাগ প্রতীক্ষার পর গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ তার আপন পথ ফিরে পেয়েছে। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর সাজানো-পাতানো নির্বাচনে একটি দল ক্ষমতায় এসেছিল। সেই দলটির নাম এখন কেউ নিতে চায় না। আমরাও নেব না। তাদেরকে নিষিদ্ধ করার ইতিহাস আছে, যখন বাকশাল কায়েম করা হয়। সেই দলটিকে জনগণ আবার নিষিদ্ধ করেছে।
জামায়াত আমির বলেন, ক্ষমতায় আসার দুই মাস না যেতেই তারা সেনাবাহিনীর গায়ে হাত দিয়েছে। ৫৭ সেনা অফিসারকে হত্যা করেছে। সেনা অফিসারের মা বোনকে হত্যা করা হয়েছে। সেই জঘন্য ঘটনা জনগণ কখনো ভোলেনি। ঘটনার তদন্ত কমিটি হয়েছিল। কিন্তু একটা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সেনাবাহিনীকে পর্যন্ত জানতে দেওয়া হয়নি। নেপথ্যের নায়ক হুকুমদাতাদের আড়াল করা হয়েছে। তদন্তের নামে জনগণকে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। মিডিয়া হাতের পুতুল, বলির পাঁঠা ছিল। খুনিরাই ক্ষমতায় এসে খুনের রাজত্ব কায়েম করে দুঃশাসন উপহার দিয়েছে। তারা একসঙ্গে সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দিয়েছে, বিডিআরের নাম নিশানা মুছে ফেলেছে। শুধু ক্ষমতার লালসা ফুরানোর জন্য তারা এই কাজ করেছিল। ওই কুখ্যাত দলের নেতা-নেত্রীরা এ কাজ করেছিল।
ডা. শফিকুর বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে যাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছে তারা জেলে, কিন্তু যারা নেপথ্যের নায়ক-নায়িকা তাদের পাওয়া বাকি। তাদের পাওনা তাদের পেতে হবে। এত দল থাকতে জামায়াতে ইসলামীকে কেন টার্গেট করা হয়েছিল প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, কারণ তারা জানত একটি দল দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থ কারো কাছে কখনো বিলিয়ে দিতে, বিক্রি করতে রাজি হয়নি। কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি। এ জন্য তারা জামায়াতে ইসলামীর মাথায় হাত দিয়েছিল। বিচারিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে শীর্ষ নেতাদের দুনিয়া থেকে বিদায় করেছিল। আজ রাজপথের স্লোগান ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। জামায়াতে ইসলামীর স্লোগানও এটাই ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।
জামায়াত আমির বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত সব গণহত্যায় জড়িতদের হত্যার বিচার করতে হবে। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫ আগস্টে যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিচার আগে করতে হবে। শহীদের রক্ত এখনো তাজা, শহীদের পরিবার, স্বজনরা এখনো কাঁদছে। আহতরা এখনো কাতরাচ্ছে। আমাদের দাবি স্পষ্ট, বিচার হোক। এই বিচার করা খুবই সহজ সাক্ষীও জীবিত। এজন্য যতদ্রুত সম্ভব ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য গণহত্যায় জড়িতদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। আমরা অন্যায় জুলুম চাই না।
জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে হাজারো অপতৎপরতা চালানো হয়েছে দাবি করে ডা. শফিকুর বলেন, এর উদ্দেশ্য ছিল প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেওয়া। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ যাতে সোচ্চার হতে না পারে। চারদিক থেকে সব চাপ প্রয়োগ করে জামায়াতকে নড়তে দেওয়া হয়নি। মাঠে একতরফা খেলানো হয়েছে, শাহবাগে আসর বসানো হয়েছে। সেই আসরে আজেবাজে বিশেষ জিনিসও সাপ্লাই করা হয়েছে। সংসদ ভবন থেকে একজন চিৎকার করে বলেছিলেন, আমার দেহটা সংসদে, মনটা পড়ে আছে শাহবাগে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দুই-একজন আলেম নামের কলঙ্ক সেদিনের অপকর্মের অংশীদার হয়েছিলেন। আসলে তারা জ্ঞানী না, জ্ঞানপাপী। জাতি আজ তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে না।
জামায়াত আমির বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের ওপরে যে ক্র্যাকডাউন করা হয়েছিল, যা ছিল আরেকটি গণহত্যা। ঠিক কতোজনকে হত্যা করা হয়েছিল তা আজও জানি না। এবার ৫ আগস্টের ৪ দিন আগে জামায়াতে ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলা হলো, বেশি বাড়াবাড়ি করলে ২০১৩ সালের ৫ মে রাতে যা ঘটেছিল, আমরা সে রাতে সাফ করে দিয়েছিলাম, সেরকম সাফ করে দেওয়া হবে। সে কথা কিন্তু মিডিয়ার সামনেই বলা হয়েছিল। তাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, বংশধরেরা এখন দেশে আছে কিন্তু আপনারা কোথায় ভাই? সাফ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার এক সপ্তাহও জনগণের সামনে মুখ দেখাতে পারলেন না। গর্ব অহংকারের সীমালঙ্ঘন করতে নেই। এগুলো আল্লাহতালার চাদর। ক্ষমতার দাপটে দম্ভে তারা মানুষকে মানুষ মনে করেনি।
ডা. শফিকুর বলেন, আমরা আশা করি তারা যেন শুদ্ধ হয়ে ফিরে আসে। কিন্তু কয়লা ধুলে তো ময়লা যায় না। কালো কয়লা যতই ধুয়ে পরিষ্কার করেন না কেন আরো চিকচিকে কালো হয়। কালো রংটা আরো ফুটে ওঠে। তাদের অপকর্মের জন্য জাতির কাছে লজ্জিত হয়ে ক্ষমা চাওয়ার একটা পথ তারা রাখতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে তারা শ্রমিকের নামে, বিচার লীগ, দাবি লীগ নামে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। ইদানীং তারা মাশাল্লাহ, জানি না আসল না আর্টিফিশিয়াল দাড়িও রাখা শুরু করেছে। মাথায় টুপিও পরছেন। তিনি বলেন, অগণতান্ত্রিক যারা তারাই তাদের সন্তানদের হাতে হাতুড়ি মাথায় হেলমেট তুলে দিয়েছিল। তাদের চাইতে বড় চরমপন্থি সন্ত্রাসী বাংলাদেশে আর কেউ জন্ম নেয়নি। তাদের শাসনামলে পুরোটাই ছিল চরমপন্থা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের। তারা তো চরমপন্থা সন্ত্রাস করে গেল আমরা কি করবো? আমরাও কি সন্ত্রাসী কার্যক্রম করবো? নাহ! আমরা তা করবো না। আমরা সন্ত্রাসকে ঘৃণা করি। আমরা জাতিকে আশ্বস্ত করছি, কোনো সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে আমরা আইন হাতে তুলে নিয়ে প্রতিশোধ নেব না। তারা যেভাবে আইন হাতে তুলে নিয়ে মানুষকে কষ্ট দিয়েছে, জুলুম করেছে আমরা তা করব না। কিন্তু ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার প্রত্যেকটি নাগরিকের। আমরা প্রত্যেকটি জুলুমের বিচার চাইবো প্রচলিত আইনের মাধ্যমে। আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করতে চাই। সেজন্য আমাদের সীমাহীন মাত্রার ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। ইসলামকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। ইসলাম এসেছে উদারতা, মহানুভবতা, মানবতার কারণে।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সম্মলেন উদ্বোধন ঘোষণা করেন বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ নাসিব হাসান রিয়ানের বাবা মো. গোলাম রাজ্জাক।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুর রব, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুবারক হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, মহানগর উত্তর শিবির সভাপতি আনিসুর রহমান, পশ্চিমের সভাপতি সালাহ মাহমুদ।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সব গণহত্যায় জড়িতদের বিচার হবে : জামায়াত আমির

আপডেট সময় : ০৭:১৪:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত সব গণহত্যায় জড়িত সবার বিচার করতে হবে বলে জানিয়েছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫ আগস্টে যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিচার আগে করতে হবে। তারা বলত (আওয়ামী লীগ) আইন সবার জন্য সমান। সেই সমান আইনে তাদের বিচারের অধিকার আছে কিনা? তাদের তৈরি করা কালা-কানুনে দ্রুত তাদের বিচার করতে হবে। তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে যেন তাদের মাহরুম (বঞ্চিত) করা না হয়। জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে গতকাল রোববারসকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বার্ষিক সদস্য (রুকন) সম্মেলন ২০২৪-এর প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নেতা, শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
ডা. শফিকুর বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে বাংলাদেশের মানবতা ও গণতন্ত্রকে জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাকে জবাই করা হয়েছে। ওই দিনটিতে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর বহু ত্যাগ প্রতীক্ষার পর গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ তার আপন পথ ফিরে পেয়েছে। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর সাজানো-পাতানো নির্বাচনে একটি দল ক্ষমতায় এসেছিল। সেই দলটির নাম এখন কেউ নিতে চায় না। আমরাও নেব না। তাদেরকে নিষিদ্ধ করার ইতিহাস আছে, যখন বাকশাল কায়েম করা হয়। সেই দলটিকে জনগণ আবার নিষিদ্ধ করেছে।
জামায়াত আমির বলেন, ক্ষমতায় আসার দুই মাস না যেতেই তারা সেনাবাহিনীর গায়ে হাত দিয়েছে। ৫৭ সেনা অফিসারকে হত্যা করেছে। সেনা অফিসারের মা বোনকে হত্যা করা হয়েছে। সেই জঘন্য ঘটনা জনগণ কখনো ভোলেনি। ঘটনার তদন্ত কমিটি হয়েছিল। কিন্তু একটা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সেনাবাহিনীকে পর্যন্ত জানতে দেওয়া হয়নি। নেপথ্যের নায়ক হুকুমদাতাদের আড়াল করা হয়েছে। তদন্তের নামে জনগণকে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। মিডিয়া হাতের পুতুল, বলির পাঁঠা ছিল। খুনিরাই ক্ষমতায় এসে খুনের রাজত্ব কায়েম করে দুঃশাসন উপহার দিয়েছে। তারা একসঙ্গে সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দিয়েছে, বিডিআরের নাম নিশানা মুছে ফেলেছে। শুধু ক্ষমতার লালসা ফুরানোর জন্য তারা এই কাজ করেছিল। ওই কুখ্যাত দলের নেতা-নেত্রীরা এ কাজ করেছিল।
ডা. শফিকুর বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে যাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছে তারা জেলে, কিন্তু যারা নেপথ্যের নায়ক-নায়িকা তাদের পাওয়া বাকি। তাদের পাওনা তাদের পেতে হবে। এত দল থাকতে জামায়াতে ইসলামীকে কেন টার্গেট করা হয়েছিল প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, কারণ তারা জানত একটি দল দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থ কারো কাছে কখনো বিলিয়ে দিতে, বিক্রি করতে রাজি হয়নি। কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি। এ জন্য তারা জামায়াতে ইসলামীর মাথায় হাত দিয়েছিল। বিচারিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে শীর্ষ নেতাদের দুনিয়া থেকে বিদায় করেছিল। আজ রাজপথের স্লোগান ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। জামায়াতে ইসলামীর স্লোগানও এটাই ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।
জামায়াত আমির বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত সব গণহত্যায় জড়িতদের হত্যার বিচার করতে হবে। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫ আগস্টে যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিচার আগে করতে হবে। শহীদের রক্ত এখনো তাজা, শহীদের পরিবার, স্বজনরা এখনো কাঁদছে। আহতরা এখনো কাতরাচ্ছে। আমাদের দাবি স্পষ্ট, বিচার হোক। এই বিচার করা খুবই সহজ সাক্ষীও জীবিত। এজন্য যতদ্রুত সম্ভব ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য গণহত্যায় জড়িতদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। আমরা অন্যায় জুলুম চাই না।
জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে হাজারো অপতৎপরতা চালানো হয়েছে দাবি করে ডা. শফিকুর বলেন, এর উদ্দেশ্য ছিল প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেওয়া। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ যাতে সোচ্চার হতে না পারে। চারদিক থেকে সব চাপ প্রয়োগ করে জামায়াতকে নড়তে দেওয়া হয়নি। মাঠে একতরফা খেলানো হয়েছে, শাহবাগে আসর বসানো হয়েছে। সেই আসরে আজেবাজে বিশেষ জিনিসও সাপ্লাই করা হয়েছে। সংসদ ভবন থেকে একজন চিৎকার করে বলেছিলেন, আমার দেহটা সংসদে, মনটা পড়ে আছে শাহবাগে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দুই-একজন আলেম নামের কলঙ্ক সেদিনের অপকর্মের অংশীদার হয়েছিলেন। আসলে তারা জ্ঞানী না, জ্ঞানপাপী। জাতি আজ তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে না।
জামায়াত আমির বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের ওপরে যে ক্র্যাকডাউন করা হয়েছিল, যা ছিল আরেকটি গণহত্যা। ঠিক কতোজনকে হত্যা করা হয়েছিল তা আজও জানি না। এবার ৫ আগস্টের ৪ দিন আগে জামায়াতে ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলা হলো, বেশি বাড়াবাড়ি করলে ২০১৩ সালের ৫ মে রাতে যা ঘটেছিল, আমরা সে রাতে সাফ করে দিয়েছিলাম, সেরকম সাফ করে দেওয়া হবে। সে কথা কিন্তু মিডিয়ার সামনেই বলা হয়েছিল। তাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, বংশধরেরা এখন দেশে আছে কিন্তু আপনারা কোথায় ভাই? সাফ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার এক সপ্তাহও জনগণের সামনে মুখ দেখাতে পারলেন না। গর্ব অহংকারের সীমালঙ্ঘন করতে নেই। এগুলো আল্লাহতালার চাদর। ক্ষমতার দাপটে দম্ভে তারা মানুষকে মানুষ মনে করেনি।
ডা. শফিকুর বলেন, আমরা আশা করি তারা যেন শুদ্ধ হয়ে ফিরে আসে। কিন্তু কয়লা ধুলে তো ময়লা যায় না। কালো কয়লা যতই ধুয়ে পরিষ্কার করেন না কেন আরো চিকচিকে কালো হয়। কালো রংটা আরো ফুটে ওঠে। তাদের অপকর্মের জন্য জাতির কাছে লজ্জিত হয়ে ক্ষমা চাওয়ার একটা পথ তারা রাখতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে তারা শ্রমিকের নামে, বিচার লীগ, দাবি লীগ নামে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। ইদানীং তারা মাশাল্লাহ, জানি না আসল না আর্টিফিশিয়াল দাড়িও রাখা শুরু করেছে। মাথায় টুপিও পরছেন। তিনি বলেন, অগণতান্ত্রিক যারা তারাই তাদের সন্তানদের হাতে হাতুড়ি মাথায় হেলমেট তুলে দিয়েছিল। তাদের চাইতে বড় চরমপন্থি সন্ত্রাসী বাংলাদেশে আর কেউ জন্ম নেয়নি। তাদের শাসনামলে পুরোটাই ছিল চরমপন্থা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের। তারা তো চরমপন্থা সন্ত্রাস করে গেল আমরা কি করবো? আমরাও কি সন্ত্রাসী কার্যক্রম করবো? নাহ! আমরা তা করবো না। আমরা সন্ত্রাসকে ঘৃণা করি। আমরা জাতিকে আশ্বস্ত করছি, কোনো সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে আমরা আইন হাতে তুলে নিয়ে প্রতিশোধ নেব না। তারা যেভাবে আইন হাতে তুলে নিয়ে মানুষকে কষ্ট দিয়েছে, জুলুম করেছে আমরা তা করব না। কিন্তু ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার প্রত্যেকটি নাগরিকের। আমরা প্রত্যেকটি জুলুমের বিচার চাইবো প্রচলিত আইনের মাধ্যমে। আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করতে চাই। সেজন্য আমাদের সীমাহীন মাত্রার ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। ইসলামকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। ইসলাম এসেছে উদারতা, মহানুভবতা, মানবতার কারণে।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সম্মলেন উদ্বোধন ঘোষণা করেন বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ নাসিব হাসান রিয়ানের বাবা মো. গোলাম রাজ্জাক।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুর রব, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুবারক হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, মহানগর উত্তর শিবির সভাপতি আনিসুর রহমান, পশ্চিমের সভাপতি সালাহ মাহমুদ।