ঢাকা ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

সবার চোখ আজ গাজীপুরে, সব কেন্দ্রেই সিসি ক্যামেরা

  • আপডেট সময় : ০১:৩২:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মে ২০২৩
  • ১০৯ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : বহুল আলোচিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে আজ বৃহস্পতিবার। সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৪৮০টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএমে) মাধ্যমে হবে ভোট গ্রহণ। সবগুলো কেন্দ্রেই লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাঁদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী এবং ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি। গাজীপুর সিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৩৩৩ জন প্রার্থী। এর মধ্যে মেয়র পদে ৮ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর সিটিতে ৪৮০টি কেন্দ্রে মোট ৪ হাজার ৪৩৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এর ফলে সবগুলো কেন্দ্র সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। এসব ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন। এ ক্ষেত্রে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বড় পর্দায় ভোটের পরিস্থিতি দেখবেন ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীরা। ফরিদুল ইসলাম বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরায় কোনো অনিয়ম দেখতে পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া যেহেতু সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হবে, তাই প্রতিটি কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভোটিং মেশিন রাখা হচ্ছে। মেশিন মেরামতের জন্য ট্রাবলশুটার রাখা হয়েছে।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুর শহরের শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ভোটকক্ষে লাগানো হয়েছে ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা। এসব ক্যামেরা দিয়ে গোপন কক্ষ ছাড়া পুরো কক্ষে কী হচ্ছে, তা দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া ভোটকক্ষের বাইরে ভোটারদের সারি যেখানে থাকবে, সেখানেও তিনটি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ক্যামেরাগুলো দিয়ে ভোটের পুরো চিত্র দেখা যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরা থাকায় ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করে কেউ তাঁদের প্রভাবিত করতে পারবেন না। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে তা তাৎক্ষণিক ঢাকা ও গাজীপুরের নির্বাচন কর্মকর্তারা দেখতে পারবেন এবং ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এবার গাজীপুরের ভোট সুষ্ঠু হবে বলে আশা করেন তিনি।
ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন: সাধারণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুলিশ, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৬ জন সদস্য দায়িত্বপালন করবেন। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে দায়িত্বপালন করবেন ১৭ জন। প্রতিটি ওয়ার্ডে ১টি করে মোট ৫৭টি মোবাইল ফোর্স, ৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১টি করে মোট ১৯টি স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং প্রতি থানায় ১টি করে মোট ৮টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া ২টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১টি করে ৩০টি র‌্যাবের টিম এবং ৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১ প্লাটুন করে ১৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হবে।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘সব কেন্দ্রই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ৩৫১টি কেন্দ্র। আর ১২৯টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে, সে যে দলের বা যে–ই হোক না কেন, তাকে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে।’
ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫১ কেন্দ্রে আলাদা গুরুত্ব: গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪৮০টির মধ্যে ৩৫১টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ কেন্দ্রে আলাদা করে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশ। গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, “নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার মাধ্যমে নাগরিকদের জন্য সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারি সেটা নিশ্চিত করব। নির্বাচনে ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫১টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং ৩৫১টি কেন্দ্রে আমরা আলাদাভাবে গুরুত্ব দিব।“ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ভোটের আগের দিন গাজীপুরের পুলিশপ্রধান এসব কথা বলেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি শহরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্রিফিং অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন। নির্বাচন একটি সমন্বিত প্রয়াস এবং সবাই মিলে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য কাজ করতে হবে জানিয়ে মহানগর পুলিশ কমিশনার বলেন, “আমাদের মূল উদ্দেশ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা। জনগণ আসবে এবং সুষ্ঠু, সুন্দরভাবে ভোট দিয়ে যাতে তারা চলে যেতে পারে। গাজীপুরসহ সারা বিশ্বের লোকজন তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আমরা যাতে একটি ভালো সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “প্রিজাইডিং অফিসারের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আছে। যে কোনো বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসাররের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনুনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে যাতে নির্বাচনটা সঠিকভাবে করতে পারি।
“যখন ভোটগ্রহণ শুরু হবে সবাই যাতে লাইনে দাঁড়াতে পারে, কেউ যেন পেশীশক্তি ব্যবহার করতে না পারে, কেউ যাতে মাস্তানি করতে না পারে এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। ভোটার ও জনগণের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করতে হবে। মা-বোনদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করতে হবে। অনেক বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধ্বী ভোটার আসবেন তাদেরকে যেভাবে সাহায্য করা যায় সাহায্য করবেন“, যোগ করেন নজরুল। অনুষ্ঠানে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, সবার সহযোগিতায় মাধ্যমে আমরা যেন গাজীপুরে মডেল নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারি। সিটি নির্বাচনে পাঁচ স্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করে গাজীপুরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (এসবি) আবুল বাশার মো. আতিকুর রহমান জানান, পাঁচ হাজার পুলিশ সদস্য, প্রতি কেন্দ্রে ২ জন করে মোট ৯৬০ জন আনসার ব্যাটালিয়ান, প্রতি কেন্দ্রে ১০ জন করে চার হাজার ৮০০ গ্রাম পুলিশ, ৫৭টি ওয়ার্ডে একজন নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া নগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ২০ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব) সদস্য মোতায়েন থাকবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ, অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. জিয়াউল হক, বিজিবির মেজর মো. ইকবাল, রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার ইব্রাহিম হোসেন, গাজীপুর জেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা (ডিস্ট্রিক অ্যাডজুটেন্ট) আশরাফুল ইসলাম।
মেয়র পদে যারা লড়ছেন: নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মো. আজমত উল্লা খান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ এরশাদ, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম।
ভোট যুদ্ধে ৩৩৩ প্রার্থী: গাজীপুর সিটি নির্বাচনে এবার আট মেয়র প্রার্থীসহ সংরক্ষিত কাউন্সিলর, সাধারণ কাউন্সিলর পদে মোট ৩৩৩ জন সরাসরি ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে আটজন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ফয়সাল আহমেদ সরকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তাকে নিয়ে এবার নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩৩৪ জন।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সবার চোখ আজ গাজীপুরে, সব কেন্দ্রেই সিসি ক্যামেরা

আপডেট সময় : ০১:৩২:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মে ২০২৩

প্রত্যাশা ডেস্ক : বহুল আলোচিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে আজ বৃহস্পতিবার। সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৪৮০টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএমে) মাধ্যমে হবে ভোট গ্রহণ। সবগুলো কেন্দ্রেই লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাঁদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী এবং ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি। গাজীপুর সিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৩৩৩ জন প্রার্থী। এর মধ্যে মেয়র পদে ৮ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর সিটিতে ৪৮০টি কেন্দ্রে মোট ৪ হাজার ৪৩৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এর ফলে সবগুলো কেন্দ্র সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। এসব ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন। এ ক্ষেত্রে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বড় পর্দায় ভোটের পরিস্থিতি দেখবেন ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীরা। ফরিদুল ইসলাম বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরায় কোনো অনিয়ম দেখতে পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া যেহেতু সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হবে, তাই প্রতিটি কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভোটিং মেশিন রাখা হচ্ছে। মেশিন মেরামতের জন্য ট্রাবলশুটার রাখা হয়েছে।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুর শহরের শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ভোটকক্ষে লাগানো হয়েছে ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা। এসব ক্যামেরা দিয়ে গোপন কক্ষ ছাড়া পুরো কক্ষে কী হচ্ছে, তা দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া ভোটকক্ষের বাইরে ভোটারদের সারি যেখানে থাকবে, সেখানেও তিনটি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ক্যামেরাগুলো দিয়ে ভোটের পুরো চিত্র দেখা যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরা থাকায় ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করে কেউ তাঁদের প্রভাবিত করতে পারবেন না। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে তা তাৎক্ষণিক ঢাকা ও গাজীপুরের নির্বাচন কর্মকর্তারা দেখতে পারবেন এবং ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এবার গাজীপুরের ভোট সুষ্ঠু হবে বলে আশা করেন তিনি।
ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন: সাধারণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুলিশ, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৬ জন সদস্য দায়িত্বপালন করবেন। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে দায়িত্বপালন করবেন ১৭ জন। প্রতিটি ওয়ার্ডে ১টি করে মোট ৫৭টি মোবাইল ফোর্স, ৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১টি করে মোট ১৯টি স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং প্রতি থানায় ১টি করে মোট ৮টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া ২টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১টি করে ৩০টি র‌্যাবের টিম এবং ৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১ প্লাটুন করে ১৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হবে।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘সব কেন্দ্রই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ৩৫১টি কেন্দ্র। আর ১২৯টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে, সে যে দলের বা যে–ই হোক না কেন, তাকে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে।’
ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫১ কেন্দ্রে আলাদা গুরুত্ব: গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪৮০টির মধ্যে ৩৫১টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ কেন্দ্রে আলাদা করে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশ। গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, “নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার মাধ্যমে নাগরিকদের জন্য সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারি সেটা নিশ্চিত করব। নির্বাচনে ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫১টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং ৩৫১টি কেন্দ্রে আমরা আলাদাভাবে গুরুত্ব দিব।“ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ভোটের আগের দিন গাজীপুরের পুলিশপ্রধান এসব কথা বলেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি শহরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্রিফিং অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন। নির্বাচন একটি সমন্বিত প্রয়াস এবং সবাই মিলে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য কাজ করতে হবে জানিয়ে মহানগর পুলিশ কমিশনার বলেন, “আমাদের মূল উদ্দেশ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা। জনগণ আসবে এবং সুষ্ঠু, সুন্দরভাবে ভোট দিয়ে যাতে তারা চলে যেতে পারে। গাজীপুরসহ সারা বিশ্বের লোকজন তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আমরা যাতে একটি ভালো সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “প্রিজাইডিং অফিসারের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আছে। যে কোনো বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসাররের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনুনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে যাতে নির্বাচনটা সঠিকভাবে করতে পারি।
“যখন ভোটগ্রহণ শুরু হবে সবাই যাতে লাইনে দাঁড়াতে পারে, কেউ যেন পেশীশক্তি ব্যবহার করতে না পারে, কেউ যাতে মাস্তানি করতে না পারে এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। ভোটার ও জনগণের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করতে হবে। মা-বোনদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করতে হবে। অনেক বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধ্বী ভোটার আসবেন তাদেরকে যেভাবে সাহায্য করা যায় সাহায্য করবেন“, যোগ করেন নজরুল। অনুষ্ঠানে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, সবার সহযোগিতায় মাধ্যমে আমরা যেন গাজীপুরে মডেল নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারি। সিটি নির্বাচনে পাঁচ স্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করে গাজীপুরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (এসবি) আবুল বাশার মো. আতিকুর রহমান জানান, পাঁচ হাজার পুলিশ সদস্য, প্রতি কেন্দ্রে ২ জন করে মোট ৯৬০ জন আনসার ব্যাটালিয়ান, প্রতি কেন্দ্রে ১০ জন করে চার হাজার ৮০০ গ্রাম পুলিশ, ৫৭টি ওয়ার্ডে একজন নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া নগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ২০ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব) সদস্য মোতায়েন থাকবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ, অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. জিয়াউল হক, বিজিবির মেজর মো. ইকবাল, রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার ইব্রাহিম হোসেন, গাজীপুর জেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা (ডিস্ট্রিক অ্যাডজুটেন্ট) আশরাফুল ইসলাম।
মেয়র পদে যারা লড়ছেন: নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মো. আজমত উল্লা খান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ এরশাদ, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম।
ভোট যুদ্ধে ৩৩৩ প্রার্থী: গাজীপুর সিটি নির্বাচনে এবার আট মেয়র প্রার্থীসহ সংরক্ষিত কাউন্সিলর, সাধারণ কাউন্সিলর পদে মোট ৩৩৩ জন সরাসরি ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে আটজন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ফয়সাল আহমেদ সরকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তাকে নিয়ে এবার নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩৩৪ জন।