নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পর্যায়ক্রমে সবাইকে করোনার ভ্যাকসিন দিতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। কোনও মানুষ যেন ভ্যাকসিন থেকে বাদ না থাকে, আমরা সেভাবে পদক্ষেপ নিয়েছি।
গতকাল রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহের বার্ষিক কর্ম সম্পাদনা চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর এবং শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ভ্যাকসিন দিতে শুরু করেছি। ভ্যাকসিন আসছে। আমাদের দেশের সবাই যেন ভ্যাকসিনটা নিতে পারে, সে জন্য যত দরকার, আমরা তা কিনবো এবং আমরা সেই ভ্যাকসিনটা দেবো। তিনি বলেন, কোনও মানুষ যেন ভ্যাকসিন থেকে বাদ না থাকে, সেভাবে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা চাচ্ছি, আমাদের দেশের মানুষ যেন কোনও রকম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, করোনার এ পরিস্থিতিতে সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
‘মহামারীতে আছি বড় জেলখানায়’ : করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সরাসরি কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পারার আক্ষেপ ঝরেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে। গতবছর দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে গণভবন থেকেই ভার্চুয়ালি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহের ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর এবং ‘এপিএ ও শুদ্ধাচার পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠান, ২০২১’ এ অংশ নেন তিনি। অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থাকতে না পারায় আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “করোনার কারণে আমি কিন্তু বলতে গেলে এক রকম বন্দি জীবনেই, তার আগে ছিলাম ছোট জেলখানায়। এখন আছি বড় জেলখানায়। কারণ এই গণভবন থেকে আর বের হতে পারি নাই।”
জরুরি অবস্থার সময় ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার হয়ে ১১ মাস বিশেষ কারাগারে কাটানোর দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “হ্যাৃঁ একটু বড় জেলখানা, এটা হলো কথা। একটু লিবার্টি আছে, দোতলা থেকে নিচে নামতে পারি, মাঠে হাঁটতে পারি, এই পর্যন্তই। কিন্তু আগে ছিলাম একটা ঘরের মধ্যে বন্দি। ওখান থেকে আর নড়ার উপায় ছিল না। কলাপসিবল গেইট দিয়ে বন্ধ করা ছিল। এখন অবশ্য ইলেকট্রনিক দরজা আছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের সামনে থাকতে পারলাম না এটাই একটা খুব দুঃখ। আজকে কর্মসম্পাদন চুক্তি হল, আমি নিজে হাতে দিতে পারলাম না বা থাকতে পারলাম না, সেই দুঃখটা আমার রয়ে গেল। পুরস্কারগুলো নিজের হাতে দিতে পারলে আমি আরও খুশি হতাম। এই করোনা মহামারীর কারণে সেটা সম্ভব হল না।”
করোনাভাইরাস মহামারী পুরো বিশ্বকে সংকটের মুখে ফেলেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রযুক্তির এই যুগে কোথায় কি ঘটছে এটা খুব দ্রুত জানা যাচ্ছে। ফলে এই মহামারীটা সর্বত্র যেমন ছড়িয়ে যাচ্ছে তার সংবাদগুলোও আমরা পাচ্ছি। এই অবস্থায় আমাদেরকে কীভাবে চলতে হবে আমরা সেই কর্মপন্থা সুনির্দিষ্ট করেছি। “করোনাভাইরাস মহামারী সব থেকে বেশি আঘাত হেনেছে আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথে। আর আমাদের দুঃখটা হল বাংলাদেশকে আমরা যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম সেখানে একটা বিরাট ধাক্কা লেগেছে।” দেশের কোনো মানুষ যেন করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়া থেকে বাদ না থাকে সরকার সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও আহ্বান জানান তিনি। “আমি জানি আমাদের মানুষগুলো একটু..সব গ্রামের ছুটতে পছন্দ করে, মাস্ক পরতে চায় না। কিন্তু যারা যেখানে দায়িত্বরত আছেন, আপনারা একটু চেষ্টা করবেন মানুষকে বোঝাতে এবং তারা যেন এই মাস্কটা পরে আর যেন সাবধানে থাকে,” বলেন শেখ হাসিনা। মহামারীর মধ্যে প্রশাসন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা বা সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গায় থেকে যে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন সেজন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
কর্মকর্তাদের মনোভাবে ইতিবাচক বদল দেখছেন প্রধানমন্ত্রী : পুরনো নেতিবাচক মনোভাব বদলে আরও বেশি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করায় সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহামারীর মধ্যে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা বা সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গায় থেকে সাহসী ভূমিকা রাখায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’ এমন মনোভাব এখন সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে তেমনটা নেই জানিয়ে তাদের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে প্রত্যেকেই নিজ নিজ কাজটাকে নিজের বলে গ্রহণ করছেন। আপনার দায়িত্বটা আপনি নিজে গ্রহণ করছেন এবং সেটা আপনি বাস্তবায়ন করার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন। আসলে এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কাজ, আমি মনে করি।” জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আজীবন কাজ করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেই আদর্শ নিয়েই আমার পথ চলা এবং সেভাবেই আমাদের সংগঠন কাজ করেছে, আমরাও প্রচেষ্টা চালিয়েছি এবং যখন সরকারে এসেছি বাংলাদেশের মানুষের সেবক হিসেবে কাজ করেছি।
“প্রধানমন্ত্রীত্ব আমার কাছে অন্য কিছু না, শুধু একটা সুযোগ। সুযোগটা হল মানুষের জন্য কাজ করা, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা এবং যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সে আদর্শটা বাস্তবায়ন করা, এটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।”
দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “আমাদের সব সময় একটা লক্ষ্য ছিল।ৃসরকার কী? সরকার হচ্ছে জনগণের সেবা করবে। যারা সেবা করবে তাদেরকে দক্ষ করে গড়ে তোলা, তাদের একটা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং জনসেবা করা। অর্থাৎ জনগণের সেবামূলক প্রশাসন গড়ে তোলা। সরকারে থেকে আমি শুধু সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করব তা নয়। এজন্য আমাদের একটা দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্বটা হচ্ছে জনগণের প্রতি, জনগণের কল্যাণে, জনগণের স্বার্থে এবং জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে।”
“সেই কথাটা চিন্তা করেই আমরা সকল কর্মকা-, যেমন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করি, বাজেট দেই বা প্রশাসনে যে সমস্ত কর্মকা- পরিচালনা করি সেগুলো যেন গতিশীলতা পায়, সেগুলো যেন জনগণের কল্যাণমুখী হয় এবং জনগণ যেন তার সুফলটা ভোগ করতে পারে, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করি।”
সরকার প্রধান বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ২০১৪-২০১৫ তে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে শুরু করে সমস্ত কাজগুলো যখন আমরা করব সেই কাজগুলোর একটা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং কাজগুলো যাতে সঠিকভাবে হয় সেটা নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি প্রবর্তন করি।
সবাই যাতে ভ্যাকসিন পায়, সে পদক্ষেপ নিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী
ট্যাগস :
সবাই যাতে ভ্যাকসিন পায়
জনপ্রিয় সংবাদ