নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, তফসিল বাতিল, দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আগামী ২৬ ও ২৭ নভেম্বর (রবি ও সোমবার) সপ্তমবারের মতো ৪৮ ঘণ্টা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই ঘোষণা দেন। বিএনপি ছাড়াও তাদের সঙ্গে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিক দলগুলোসহ অন্যান্য সমমনা বিরোধী দলও এই অবরোধ সমর্থন করে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করবে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে দলটি। এর আগে ছয় দফা অবরোধ ও দুইবার হরতাল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ করতে না পারার প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর সকাল-সন্ধ্যা হরতাল, ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত অবরোধ, দ্বিতীয় দফায় ৫ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে ৭ নভেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত অবরোধ, তৃতীয় দফায় ৮ ও ৯ নভেম্বর, চতুর্থ দফায় ১২ ও ১৩ নভেম্বর, পঞ্চম দফায় ১৫ ও ১৬ নভেম্বর এবং ষষ্ঠ দফায় ২২ ও ২৩ নভেম্বর অবরোধ ঘোষণা করা হয়। গত ১৯ নভেম্বর ভোর ৬টা থেকে ২১ নভেম্বর ভোর ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয় দলটি।
২৬-২৭ নভেম্বর ফের অবরোধের ডাক দিলেন অলি আহমদ
সরকারের পতন ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আবারও দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের ডাক দিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রমও। আগামী রোববার ও সোমবার (২৬ ও ২৭ নভেম্বর) অবরোধ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে শান্তিপূর্ণভাবে এ অবরোধ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান অলি আহমদ। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে অলি আহমদ বলেন, ‘মেহেরবানি করে আপনারা অবরোধ পালন করুন। সাহসিকতার সঙ্গে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিগুলোতে অংশগ্রহণ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করুন। ভয় পেলে চলবে না। মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো তার আত্মসম্মান। সেই সম্মান হারিয়ে কী হবে, একবার ভেবে দেখুন। আপনাদের নীরবতা দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে। নিজের নাগরিক অধিকার আদায়ে সোচ্চার হোন। অন্যথায় কেউ এ সমস্যা থেকে বের হওয়ার পথ পাবেন না।
অবরোধের সমর্থনে বিএনপির বিক্ষোভ, পুলিশের বাধা
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল বাতিল, বিএনপি মহাসচিবসহ শীর্ষনেতাদের মুক্তি ও সরকার পতনের একদফা দাবিতে সারাদেশে ডাকা অবরোধের ষষ্ঠ দফার দ্বিতীয় দিনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বিভিন্ন জায়গায় মিছিলে সরকার সমর্থক ও পুলিশ সদস্যরা বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির দপ্তর থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হামলায় আহত নেতারা পুলিশের ভয়ে হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে পারেনি। এ সময় বিভিন্নস্থান থেকে ২২ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর ও গেন্ডারিয়া থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হাফেজ এনায়েত উল্লাহ খোকন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, বিএনপি নেতা হাসান, নিউমার্কেট থানা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক পারভীনসহ অন্যান্যরা। শ্যামপুর-কদমতলী থানা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নগরীর মীর হাজারীবাগ-দোলাইপাড় সড়কে অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করে। লালবাগ থানা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নগরীর লালবাগ মোড় এলাকায় অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ হামলা চালিয়ে ২৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হাফেজ খোকন, ২৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, মহিলা দল নেত্রী পারভীন আক্তারসহ ৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। এসময় পুলিশের হামলায় নগর বিএনপির যুগ্ম- আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকনসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়।
সবুজবাগ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজধানীর বাসাবো এলাকায় অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করলে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এতে ওয়ার্ড বিএনপির পাঁচজন নেতা আহত হন। যাত্রাবাড়ী-ডেমরা থানা বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল বের করে এবং কাজলা এবং জনপদ মোড়ে পিকেটিং করে। এছাড়াও যাত্রাবাড়ী এলাকায় আগের রাতে মশাল মিছিল বের করে। ওয়ারী-গেন্ডারিয়া-সূত্রাপুর ও কোতয়ালী থানা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুরাতন ঢাকার আরমানী টোলা এলাকায় অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করে। পুলিশ পেছন থেকে হামলা চালিয়ে বংশাল থানাধীন ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মো. রাহাত এবং মো. মাসুমসহ আটজন নেতাকর্মীকে গ্ৰেপ্তার করে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের লালবাগ থানা যুবদলের নেতাকর্মীরা সোয়ারীঘাট এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে মিছিল করে। ঢাকা মহানগর পূর্ব ও দক্ষিণ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অবরোধের সমর্থনে খিলগাঁও চৌরাস্তা, ওয়ারী এবং মানিকনগরে মিছিল বের করে। মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃবৃন্দ নগরীর খিলগাঁও জোনের নেতাকর্মীরা খিলগাঁও রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে। ঢাকা দক্ষিণ শ্রমিক দলের নেতৃবৃন্দ অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর কমলাপুরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি পীরজঙ্গী মাজার হয়ে ফকিরাপুল পেট্রোল পাম্পের সামনে এসে শেষ হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মহিলা দলের মতিঝিল থানার নেতাকর্মীরা শাহাজাহানপুর আমতলায় অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাসাসের নেতাকর্মীরা রাজধানীর শান্তিনগরে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে। পরে মিছিলটি মালিবাগ মোড় হয়ে মৌচাক গিয়ে শেষ হয়। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক আব্দুস সালাম এবং ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদ এক বিবৃতিতে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাকর্মী এবং পুলিশের হামলার নিন্দা জানিয়ে আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) ভোরে রাজধানীর নটরডেম কলেজের সামনে থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা জেলা বিএনপি। এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী। মিছিলে ঢাকা জেলা বিএনপির ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। এদিকে, অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় ঝটিকা মিছিল করে স্বেচ্ছাসেবক দল। এতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ইয়াছিন আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান। এছাড়া, মিছিলে অংশ নেন স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক, কামরুজ্জামান বিপ্লব, আব্দুল কুদ্দুস, সরদার নুরুজ্জামান, যুগ্ম সম্পাদক জসিম উদ্দিন, জেড আই কামাল, ফয়সাল আহমেদ ও আলাউদ্দিন জুয়েলসহ অনেকে।