নিজস্ব প্রতিবেদক: সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে এমন ব্যক্তি বা সত্তা (সংগঠন) এবং তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
রোববার (১১ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সোমবার (১২ মে) সংশোধনীটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৈঠকের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, কতিপয় সন্ত্রাসী কার্য প্রতিরোধ এবং উহাদের কার্যকর শাস্তির বিধানসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করার নিমিত্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রয়েছে মর্মে যুক্তিসংগত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারে। তবে এই আইনে কোনো সত্তার (সংগঠনের) কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে কোনো বিধান নেই। এ বিষয়টি স্পষ্টীকরণসহ বিধান সংযোজন আবশ্যক হেতু সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-কে সময়োপযোগী করে উক্ত আইনের অধিকতর সংশোধন সমীচীন ও প্রয়োজন। এই প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, প্রয়োজনীয় অভিযোজন করা এবং অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধকরণের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল রাজনৈতিক দলকে শাস্তি দিতে পারবেন, অধ্যাদেশ জারি, যথোপযোগী বলছে প্রসিকিউশন: আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। এতে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবেন।
গত শনিবার (১০ মে) এ বিষয়ে গেজেট জারি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আজ রোববার বলেন, সংশোধনীর পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা রাখা হয়েছে। প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) মনে করে, এটি একটি যথোপযোগী উদ্যোগ।
গাজী মোনাওয়ার হুসাইন আরো বলেন, যদিও বাংলাদেশে প্রচলিত অন্যান্য আইনেও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বা সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তি নেওয়ার বিধান আছে। তারপরও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো একটি আন্তর্জাতিক মানের আইন বা ট্রাইব্যুনালে সংগঠন বা ব্যক্তির বিচার হলে তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। উপদেষ্টা পরিষদের ওই বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর পাশাপাশি, জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গৃহীত হয়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের পর এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করা হলো। এতে বলা হয়, এই আইন বা প্রযোজ্য অন্যান্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, যদি ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয় যে কোনো সংগঠন এই আইনের ৩ ধারা উপধারা (২)-এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেছে, আদেশ দিয়েছে, চেষ্টা করেছে, সহায়তা করেছে, উসকানি দিয়েছে, মদদ দিয়েছে, ষড়যন্ত্র করেছে, সহযোগিতা করেছে অথবা অন্য যেকোনোভাবে সেই অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছে, তবে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা থাকবে সংগঠনটির কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করার, সংগঠনের নিষিদ্ধ ঘোষণার, এর নিবন্ধন বা লাইসেন্স স্থগিত অথবা বাতিল করার এবং এর সম্পত্তি জব্দ করার।
আইনে সংগঠন শব্দটির সংজ্ঞায়নও করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় সংগঠন বলতে যেকোনো রাজনৈতিক দলকেও বোঝাবে। পাশাপাশি দলের অধীনস্থ, সম্পর্কিত বা সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন অথবা গোষ্ঠীকে বোঝাবে।