রংপুর প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হাত জোর করে সন্তান হত্যার বিচার চাইলেন ঢাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত দন্ত চিকিৎসক আহমেদ মাহি বুলবুলের মা বুলবুলি বেগম। তিনি বুলবুলের সন্তানের পড়ালেখার দায়িত্ব সরকারকে নেওয়ার অনুরোধ জানান। এ সময় তিনি বুলবুলের সন্তান কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
গতকাল সোমবার রংপুরে নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. বুলবুলের সহপাঠী ও এসএসসি ৯৭ ব্যাচের বন্ধুরা বলেন, দন্ত চিকিৎসক আহমেদ মাহি বুলবুল একজন সামাজিক ও মানবিক মানুষ ছিলেন। শিশুদের নিয়ে কাজ করতেন। ডা. বুলবুল দেশের প্রথম শ্রেণির একজন নাগরিক। তার এই নৃশংস হত্যাকা-ের পেছনে আরো কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা, সেটা গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা উচিত। তার মৃত্যুতে দুটি সন্তান, স্ত্রী-মা সহ পরিবারটি এখন অসহায়। তার পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তারা। সহপাঠী ডা. মোস্তফা আলম জানান, আমরা অকালে একজন ভালো মানুষকে হারালাম। আমাদের এসএসসি ৯৭ ব্যাচের সারাদেশের বন্ধুদের দাবি, আওয়ামী লীগ নেতা টিপু হত্যাকারীকে যেভাবে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেভাবেই ডা. বুলবুল হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এসএসসি ৯৭ ব্যাচের তৌহিদুর রহমান, রাসেল আনোয়ার, হাফিজার রহমান, কানিজ আফরোজ কণাসহ অন্যান্য বন্ধুরা।
এর আগে, গত রোববার সকালে ঢাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন গরিবের ডাক্তার-খ্যাত দন্ত চিকিৎসক আহমেদ মাহি বুলবুলর (৩৪)।
বাবার কবরের পাশে শায়িত হলেন গরিবের ডাক্তার খ্যাত দন্ত চিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল। সোমবার সকালে ঢাকা থেকে মরদেহ বহনকারী ফ্রিজিয়ান অ্যাম্বুললেন্সটি রংপুর নগরীর রামপুরা ভগিবালা পাড়ার নিজ বাড়িতে পৌঁছালে হৃদয় বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন আত্মীয় স্বজনরা। প্রিয় বুলবুলকে শেষ বারের মতো দেখতে ছুটে আসেন এলাকাবাসী ও বন্ধুরা। বাদ জোহর রামপুরা জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত জানাজায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেয়। নিহতের ছোট ভাই বুকুল জানান, সকালে বড় ভাইয়ের মরদেহ আনা হয়। পরে গোসল করিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে রাখা হয়। বাদ জোহর রামপুরা জামে মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ’র কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়েছে।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় থাকলেও রংপুরে মায়ের কাছে টাকা পাঠাতেন ডা. বুলবুল। বুলবুল তার সন্তানদের জন্য দুধ কিনতেও টাকা পাঠাতেন। পাঠানো টাকায় দুধ কিনে ঢাকায় পাঠানো হতো। শনিবার (২৬ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকেও মায়ের কাছে দুই হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। দু’-একদিনের মধ্যে বাড়িতে এসে গরুর দুধ নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু তা আর হলো না।
বুলবুলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। চাকরিকালীন ১৯৯৯ সালে তিনি মারা যান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন বুলবুল। ১৯৯৭ সালে রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকার মগবাজারে একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে প্র্যাকটিস শুরু করেন বুলবুল। ২০০৮ সালে দিনাজপুরে বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে শেওড়াপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সামী নামে দেড় বছর বয়সী ছেলে ও আয়ন নামে ৬ বছরের মেয়ে রয়েছে বুলবুলের। নিহত বুলবুলের ছোট ভাই বকুল ঢাকা টাইমসকে জানান, সকালে ভাইয়ের মরদেহ এসেছে। গোসল করিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে রাখা হয়েছে। রামপুরা জামে মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
সন্তান হত্যার বিচার চাইলেন ডা. বুলবুলের মা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ