লাইফস্টাইল ডেস্ক: প্রযুক্তি আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ। ছোট-বড় সবাই কোনো না কোনোভাবে ইন্টারনেট, স্মার্টফোন ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত। এ বাস্তবতায় সন্তানের সুরক্ষা ও সঠিক দিকনির্দেশনার জন্য শুধু প্রযুক্তি ব্যবহারে কিছু নিয়ম তৈরি করলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। অভিভাবকদেরও ডিজিটাল বা প্রযুক্তি নিয়ে সঠিক জানা-বোঝা জরুরি।
ডিজিটাল অভিভাবকত্ব: সন্তান পালনের নতুন একটি ধারা- যেখানে মা-বাবারা সন্তানের ডিজিটাল জীবন সম্পর্কে জানবেন, বুঝবেন এবং সঠিক দিকনির্দেশনা দেবেন। ডিজিটাল প্যারেন্টিংয়ের মধ্যে আরো আছে- সন্তানের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রযুক্তির সময়সীমা নির্ধারণ, শেখার জন্য প্রযুক্তিকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করা ইত্যাদি। ডিজিটালে দক্ষ অভিভাবক শুধু নিয়ন্ত্রণই করেন না; বরং সন্তানের জন্য ভারসাম্যপূর্ণ ডিজিটাল পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারেন। তা হলো-
নিজেকে প্রযুক্তিজ্ঞানে শিক্ষিত করা: আপনি যদি নিজেই ইন্টারনেট, অ্যাপ, গেম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সম্পর্কে না জানেন; তাহলে সন্তানকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেবেন কীভাবে? তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, এখন ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অসংখ্য ভিডিও, ব্লগ ও গাইড পাওয়া যায়। সেসব প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট অনুসরণ করলেই আপনি আপডেট থাকবেন। মা-বাবার উচিত নতুন প্রযুক্তি, ইন্টারনেট ব্যবহার, স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সুফল ও কুফল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখা। প্রথমে তাদেরই সচেতনভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের চর্চা করতে হবে, যাতে তারা বাস্তব উদাহরণ দিয়ে সন্তানদের শেখাতে পারেন।
স্ক্রিন টাইমে সীমা নির্ধারণ করা: ঘণ্টার পর ঘণ্টা মুঠোফোন বা টিভির পর্দায় তাকিয়ে থাকলে শিশুদের শুধু চোখেরই ক্ষতি হয় না, প্রভাব পড়ে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও। এতে চোখে সমস্যা, ঘুমের ব্যাঘাত এবং মনোযোগে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। পাশাপাশি অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বাড়িয়ে দিতে পারে। সন্তান প্রতিদিন কতক্ষণ মুঠোফোন, ট্যাব বা টিভি ব্যবহার করবে, তার একটি সুস্পষ্ট সীমা নির্ধারণ করে দিন। নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হলে ডিভাইসের ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়াই ভালো। শিশু যেন ‘ভারসাম্যপূর্ণ ডিজিটাল জীবনচর্চা’ অর্থাৎ সময়মতো, পরিমিতভাবে ও সচেতনভাবে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে। একই সঙ্গে অফলাইনে (যেমন- খেলা, পড়া, পারিবারিক সময়) পর্যাপ্ত সময় কাটায়, এদিকে লক্ষ রাখুন।
স্মার্টফোনে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ফিচার ব্যবহার করা: অধিকাংশ আধুনিক স্মার্টফোনে আছে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ফিচার, যার মাধ্যমে আপনি নির্দিষ্ট অ্যাপের ব্যবহার সীমিত করতে, অনুপযুক্ত কনটেন্ট ব্লক করতে এবং দৈনিক স্ক্রিন টাইম নির্ধারণ করতে পারবেন। গুগল ফ্যামিলি লিংক (এড়ড়মষব ঋধসরষু খরহশ), কুস্টোডিও (ছঁংঃড়ফরড়), বার্ক (ইধৎশ), নর্টন ফ্যামিলি (ঘড়ৎঃড়হ ঋধসরষু), নেট ন্যানির (ঘবঃ ঘধহহু) মতো প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ ব্যবহার করে সন্তানদের নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবহারে সহায়তা করতে পারেন। এসব অ্যাপ সময় নির্ধারণ, কনটেন্ট ফিল্টার, অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ এবং অনলাইন কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণে অত্যন্ত কার্যকর। এসব ফিচার একবার ভালোভাবে বুঝে নিলে আপনি সন্তানকে কিছতা স্বাধীনতা দিয়েও প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারবেন।
নিরাপদ ও সচেতন ব্রাউজিংয়ের শিক্ষা দেওয়া: ইন্টারনেটে অনেক ধরনের কনটেন্ট থাকে, যা বয়সের জন্য অনুপযুক্ত, বিভ্রান্তিকর কিংবা বিপজ্জনক হতে পারে। তাই সন্তানের সঙ্গে বসে তাকে শেখান, কীভাবে নিরাপদ ওয়েবসাইট চেনা যায়, অজানা লিংক বা বিজ্ঞাপন এড়িয়ে চলতে হয় এবং কেন প্রাইভেসি ও ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে অনেক ওয়েবসাইট ও অ্যাপ ব্যবহারকারীদের ট্র্যাক করে, তাদের অবস্থান শনাক্ত করে এবং ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে। এ জন্য কিশোর-কিশোরীদের শেখানো প্রয়োজন, কীভাবে তারা সচেতনভাবে ও নিরাপদ উপায়ে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করতে পারে। এ ছাড়া গুগল সেফসার্চ (এড়ড়মষব ঝধভবঝবধৎপয) ও ইউটিউব কিডস (ণড়ঁঞঁনব করফং) ব্যবহার করে সন্তানকে নিরাপদ ও বয়স উপযোগী কনটেন্টের সংস্পর্শে রাখা যেতে পারে। সেফসার্চ অনুপযুক্ত ওয়েবসাইট ও ছবিগুলো ফিল্টার করে দেয়, আর ইউটিউব কিডসে থাকে শিশুদের উপযোগী ভিডিও। এ ধরনের টুল ব্যবহার করলে শিশুরা অনলাইনে থাকলেও আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে তারা নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশে আছে।
অনলাইন নিরাপত্তা ও হোম কম্পিউটার সুরক্ষা: অনলাইনে আছে সাইবার বুলিং, ছদ্মবেশী ব্যক্তি ও ভুয়া তথ্য, যা শিশুদের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করে। মা-বাবাদের উচিত সন্তানকে নিরাপদ অনলাইন ব্যবহারের নিয়ম শেখানো এবং খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করা। বাড়ির সব কম্পিউটারে অ্যান্টিভাইরাস ও অ্যান্টিম্যালওয়্যার সফটওয়্যার ইনস্টল রাখুন এবং নিয়মিত আপডেট করুন, যেন ডিভাইস ও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকে।
ওইসব নিয়ম যেন পরিবারের সবাই মেনে চলে, এ জন্য দৃঢ়তা ও ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। চাইলে আপনি একটি ছোট নোটিশ বোর্ডে নিয়মগুলো লিখে টাঙিয়ে রাখতে পারেন, অথবা ফ্রিজের গায়ে রঙিন স্টিকারে নিয়মগুলো লিখে রাখতে পারেন। এই নিয়মের লক্ষ্য হলো প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের প্রতি আসক্তি কমিয়ে শিশুদের স্বাস্থ্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার শেখানো। শিশুদের শুধু ডিজিটাল পর্দায় সময় না কাটিয়ে বাস্তব জীবনে শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্রিয় থাকতে উৎসাহিত করা; যেন তারা খেলাধুলা, কল্পনাশক্তি ও চিন্তাভাবনার মাধ্যমে তাদের সৃজনশীলতা ও মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটাতে পারে। সূত্র: দ্য মম কাইন্ড ডটকম।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ