নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রায় এক মাসে হতে চলল রাজধানীর মিরপুর থেকে নিখোঁজ স্কুলছাত্র মো. আহানাফ রহমান। গত ৩১ আগস্ট বিকেলে মিরপুরের দারুস সালাম থানার গৈদারটেক এলাকা থেকে নিখোঁজ হয় সে। এরপর থেকে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, থানা-পুলিশ-হাসপাতাল-কোনো জায়গা বাকি নেই যেখানে তাকে খোঁজা হয়নি। কিন্তু কোথাও আহানাফের সন্ধান নেই।
আহানাফ রহমান দারুস সালাম সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। বয়স ১৫ বছর। মেধাবী ছাত্র এবং ভালো ছেলে হিসেবে এলাকায় তার নাম আছে। গত ৩১ আগস্ট বিকেল পাঁচটার দিকে আহানাফ চা খাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়। এরপর আর ফেরেনি। তার মুঠোফোনটি বাসায় রেখে যায়। সেদিন সন্ধ্যা থেকে সারা রাত সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে পরদিন ১ সেপ্টেম্বর দারুস সালাম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মা আঞ্জুমান আরা বেগম। সে থেকে আহানাফের সন্ধানে থানা-পুলিশ, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশসহ (ডিবি) একাধিক সংস্থা মাঠে নেমেছে, কিন্তু কোথাও তার হদিস মিলছে না।
দারুস সালাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু জাফর মানিক বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজেছি। একই সঙ্গে ডিবি পুলিশ, সাইবার ক্রাইম টিম-সবাই কাজ করছে। এ বিষয়ে আমাদের তরফ থেকে কোনো রকম ঘাটতি নেই। অনেকগুলো দিক বিবেচনায় নিয়ে আমরা অনুসন্ধান চালাচ্ছি। এখন আমরা একটি বিষয়ের দিকে নজর দিচ্ছি, দেখা যাক কী হয়।’
আহনাফদের বাসা মিরপুরের ১০ নম্বর গৈদারটেকে। মা আঞ্জুমান আরা বেগম গৃহিণী। বাবা আতাউর রহমান ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার ফকিরপাড়ায়। প্রায় ১৬ বছর ধরে তাঁরা মিরপুর মাজার রোডের পাশে সোহাগ পেট্রলপাম্পের পেছনে গৈদারটেকে থাকেন। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। একমাত্র ছেলে আহানাফের হঠাৎ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় মা আঞ্জুমান আরা ও বাবা আতাউর রহমান শোকে পাথর হয়ে পড়েছেন। এমনকি আহানাফের পাড়া-প্রতিবেশী, স্কুলের ছাত্র-শিক্ষকেরাও এ ঘটনায় বেদনাহত।
দারুস সালাম সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাহিদা বেগম বলেন, ‘আহানাফ আমাদের খুব ভালো ছাত্র। তার চেনা-পরিচিত সবাই একবাক্যে বলে সে ভালো ছেলে। কিন্তু কী এমন ঘটনা ঘটল যে একটা ছেলে এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাবে বুঝতে পারছি না। আমরা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, পুলিশ-র্যাবের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি।’
কী কারণে আহানাফ রহমান নিখোঁজ হলো, কেউ কী তাকে গুম-অপহরণ করেছে-কিছুই বুঝতে পারছেন না বাবা-মা, থানা-পুলিশ। তথ্য-প্রযুক্তিসহ নানামুখী চেষ্টায় পুলিশও এর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারছে না।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, তাঁরা অনুসন্ধানের জন্য আহানাফ রহমানের ব্যবহার করা মুঠোফোন, বইপত্র, তার ফেসবুক আইডিসহ আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন। তার সঙ্গে উগ্র কোনো গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হয়েছে। কিন্তু সে রকমর সন্দেহজনক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি তদন্ত করছেন ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার মানস কুমার পা-ে। তিনি বলেন, ‘তার জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে কি না, সেটা নিয়েও আমরা কাজ করেছি। কার্যত এখন পর্যন্ত আমরা ক্লুলেস। তবে আমরা আশাবাদী তাকে খুঁজে পাব।’ ছেলের অপেক্ষায় থাকা আহানাফের বাবা আতাউর রহমান বলেন, ‘আমাদের এখন একটি দিন যেন একটি বছরের চেয়েও বেশি লাগছে।’ আর মা আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ‘ছেলে আমার সঙ্গেই এক বিছানায় ঘুমাত। এখন তো আর ঘুম আসে না।’
সন্তানের খোঁজে দিশেহারা বাবা-মা, কূলকিনারা পাচ্ছে না পুলিশ
ট্যাগস :
সন্তানের খোঁজে দিশেহারা বাবা-মা
জনপ্রিয় সংবাদ




















