ঢাকা ০২:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সদরঘাট লঞ্চশূন্য, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

  • আপডেট সময় : ০২:৩৫:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২২
  • ৯৬ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : ১০ দফা দাবীতে নৌযান শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে রাজধানী ঢাকার প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার নদী পথ লঞ্চশূন্য হয়ে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। গতকাল রোববার সরেজমিনে সদরঘাট ঘুরে দেখা যায়, পল্টুনগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। সদরঘাট থেকে লঞ্চ সরিয়ে শ্যামবাজার ঘাটে সারি করে করে রাখা হয়েছে।

ধর্মঘটের বিষয়ে না জানা থাকায় যাত্রীরা এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন। সদরঘাট থেকে অনেকে বিকল্প বাহন হিসেবে পিকআপ ও মাইক্রোবাসে গন্তব্যে যাচ্ছেন। ঢাকা থেকে চাঁদপুর যেতে মাইক্রোবাসে জনপ্রতি খরচ পড়ছে ৭০০ টাকা ও পিকআপে ৪০০ টাকা। মিরপুর-১০ নম্বর থেকে আসা হোসনে আরা বানু বলেন, ‘চাঁদপুর যেতে এসে দেখি, সদরঘাটে কোনো লঞ্চ নেই। বাসে যাতায়াত করলে বমি করি, তাই লঞ্চেই যাওয়া-আসা করি। কিন্তু এখন লঞ্চ না চলায় বাধ্য হয়ে বাসে যেতে হচ্ছে।’ শ্যাওড়াপাড়া থেকে আসা আসাদুল বলেন, ‘লঞ্চ চলবে না জানলে আগেই বাসে যেতে পারতাম। অযথা সদরঘাট আসতাম না। এখন ঘুরে যাওয়া লাগছে।’ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবহন পরিদর্শক হুমায়ূন আহমেদ বলেন, ‘সকাল থেকে চাঁদপুর ও ইলিশা রুটে ১০টি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও যায়নি। ভোলার উদ্দেশ্য মাত্র একটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে।’ ধর্মঘটের বিষয়ে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য আতিকুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘আমাদের ১০ দফা দাবিতে চলমান কর্মবিরতিতে সারাদেশের নৌযান শ্রমিকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে। আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিলে কর্মসূচি তুলে নিব।’

লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘লঞ্চ না চলায় যেমন আমাদের ক্ষতি, তেমনই তাদেরও ক্ষতি। তাদের সঙ্গে এখনো আলোচনা হয়নি। দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক এটাই চাই।’
ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ বলেন, ‘শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে যাওয়ায় নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। লঞ্চ বন্ধ থাকবে, এটা জানা না থাকায় অনেক যাত্রী এসে ফিরে যাচ্ছেন।’ নৌশ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- নৌযান শ্রমিকদের বেতন সর্বনি¤œ ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে। ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিংপাস দিতে হবে। বাল্কহেডের রাত্রিকালীন চলাচলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে হবে। বাংলাদেশের বন্দরসমূহ থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে প্রোতাশ্রয় নির্মাণ ও চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিল করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের চলমান কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। কর্মস্থলে ও দুর্ঘটনায় মৃত্যুজনিত ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন করতে হবে। বাংলাদেশের বন্দরগুলো থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা ১০০ ভাগ কার্যকর করতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর ও ঘাটে অচলাবস্থা
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ডাকে রাত ১২টা ১মিনিট থেকে শুরু হয়েছে কর্মবিরতি। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাসে নিয়োজিত লাইটার জাহাজ, অয়েল ট্যাংকারসহ প্রায় সব ধরনের নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
কিছু কিছু লাইটার জাহাজে কাজ চললেও শ্রমিক নেতারা জোর করে তা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এর ফলে পণ্য খালাস, পরিবহনে অচলাবস্থা তৈরি হচ্ছে।
নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব মো. নূর ইসলাম (ড্রাইভার) বলেন, যতদিন ১০ দফা দাবি না মানবে ততদিন শ্রমিকদের আন্দোলন চলবে। লাইটার জাহাজ মালিকদের সংগঠন ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা গেছে, কর্মবিরতির কারণে লাইটার জাহাজ রোববার (২৭ নভেম্বর) থেকে বহির্নোঙরে যেতে পারেনি।
বরিশাল: ১০ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিকদের ডাকা কর্মবিরতির কারণে বরিশালে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শনিবার (২৬ নভেম্বর) দিনগত রাত ১২টা থেকে এ কর্মবিরতি শুরু করে নৌযান শ্রমিকরা। ফলে রোববার (২৭ নভেম্বর) সকাল থেকে বরিশাল নদীবন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদীবন্দর ও লঞ্চঘাট থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার যাত্রীবাহী লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। আর এতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন জানান, শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে সকাল থেকে বরিশাল নদীবন্দর থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি।
বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন বরিশালের সভাপতি আবুল হাসেম মাস্টার বলেন, ‘বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে সারাদেশে এ কর্মবিরতি শুরু করেছে নৌযান শ্রমিকরা। ফলে গত রাত ১২টা থেকে সারাদেশের সঙ্গে বরিশাল বিভাগে সব ধরনের পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মবিরতির এ আন্দোলন লাগাতার চলবে।’
বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন ও নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আবু সাঈদ বলেন, ‘শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে সারাদেশে তেলবাহী, বালুবাহীসহ সব পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমরা চাই আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মানা হোক। তবে এখন পর্যন্ত সরকারসহ কোনো পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। আর আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।’
মোংলায় পণ্য খালাস বন্ধের শঙ্কা
মোংলা প্রতিনিধি জানান, কর্মবিরতিতে সমর্থন দিয়ে রবিবার মোংলার পশুর চ্যানেলের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকশ’ লাইটার নোঙর করে রেখেছেন নৌযান শ্রমিকরা। এর ফলে লাইটার সংকটে যেকোনও মুহূর্তে মোংলা বন্দরে অবস্থারত বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। মজুরি বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে শনিবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে নৌ-শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি।
বন্দর ব্যবহারকারী এইচ এম দুলাল জানান, লাইটার সংকটের কারণে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস না করতে পারলে তাদের অনেক টাকার আর্থিক ক্ষতি হবে। শিপিং এজেন্টদেরও জাহাজ ভাড়া বাড়বে। তবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপটেন শাহীন মজিদ জানান, রাতে শুরু হওয়া নৌযান শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে পণ্য খালাসে এখনও কোনও প্রভাব পড়েনি।চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, নৌযান শ্রমিকদের সর্বনি¤œ মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণসহ ১০ দফা দাবিতে হঠাৎ দেওয়া ধর্মঘটে দুর্ভোগে পড়েছেন চাঁদপুরের লঞ্চ যাত্রীরা। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কিংবা সংগঠনের পক্ষ থেকে মাইকিং না করায় এ ধর্মঘটে ঘাটে এসে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। রবিবার সকাল থেকে চাঁদপুর-ঢাকাসহ সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুরের বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, শনিবার (২৬ নভেম্বর) দিনগত রাত ১২টার পর পর্যন্ত চাঁদপুর থেকে সিডিউলের সবগুলো লঞ্চ ছেড়েগেছে। সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। লঞ্চ মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। তাদের মধ্যে সুরাহা হলে আবার লঞ্চ চলাচল শুরু করবে। বেলা দেড়টার দিকে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে গিয়ে কোন লঞ্চ পাওয়া যায়নি। পুরো লঞ্চঘাট পাকা। যাত্রীবহনকারী কিছু অটোরিকশা ঘাটে অবস্থান করতে দেখা যায়। যেসব যাত্রী শ্রকিক ধর্মঘটের বিষয়ে জানেন না, তারা এসে ঘাটে উপস্থিত হচ্ছেন। লঞ্চ শ্রমিক আলমগীর হোসেন জানান, আমাদের যে দাবিদাওয়ার ছিল, ২০২২ সাল চলে যাচ্ছে কিন্তু মালিকপক্ষ ও শ্রম মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের বেতন বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে।
শ্রমিকদের ১০ দফা দাবি:
নৌযান শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক দেওয়াসহ শ্রমিকদের সর্বনি¤œ মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, খাদ্য ভাতা ও সমুদ্র ভাতার সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন করা, দুর্ঘটনা ও কর্মস্থলে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা, চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহে দেশের স্বার্থবিরোধী প্রকল্প বাস্তবায়নে চলমান কার্যক্রম বন্ধ করা, বালুবাহী বাল্কহেড ও ড্রেজারের রাত্রিকালীন চলাচলের ওপর ঢালাও নিষেধাজ্ঞা শিথিল, নৌ-পথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ করা, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস দেওয়াসহ ভারতীয় সীমানায় সব প্রকার হয়রানি বন্ধ করা, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা ১০০ শতাংশ কার্যকর করে সব লাইটার জাহাজকে সিরিয়াল মোতাবেক চলাচলে বাধ্য করা, চরপাড়া ঘাটে ইজারা বাতিল ও নৌ-পরিবহন অধিদফতরের সব ধরনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বন্ধ করা।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সদরঘাট লঞ্চশূন্য, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

আপডেট সময় : ০২:৩৫:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২২

বিশেষ সংবাদদাতা : ১০ দফা দাবীতে নৌযান শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে রাজধানী ঢাকার প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার নদী পথ লঞ্চশূন্য হয়ে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। গতকাল রোববার সরেজমিনে সদরঘাট ঘুরে দেখা যায়, পল্টুনগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। সদরঘাট থেকে লঞ্চ সরিয়ে শ্যামবাজার ঘাটে সারি করে করে রাখা হয়েছে।

ধর্মঘটের বিষয়ে না জানা থাকায় যাত্রীরা এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন। সদরঘাট থেকে অনেকে বিকল্প বাহন হিসেবে পিকআপ ও মাইক্রোবাসে গন্তব্যে যাচ্ছেন। ঢাকা থেকে চাঁদপুর যেতে মাইক্রোবাসে জনপ্রতি খরচ পড়ছে ৭০০ টাকা ও পিকআপে ৪০০ টাকা। মিরপুর-১০ নম্বর থেকে আসা হোসনে আরা বানু বলেন, ‘চাঁদপুর যেতে এসে দেখি, সদরঘাটে কোনো লঞ্চ নেই। বাসে যাতায়াত করলে বমি করি, তাই লঞ্চেই যাওয়া-আসা করি। কিন্তু এখন লঞ্চ না চলায় বাধ্য হয়ে বাসে যেতে হচ্ছে।’ শ্যাওড়াপাড়া থেকে আসা আসাদুল বলেন, ‘লঞ্চ চলবে না জানলে আগেই বাসে যেতে পারতাম। অযথা সদরঘাট আসতাম না। এখন ঘুরে যাওয়া লাগছে।’ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবহন পরিদর্শক হুমায়ূন আহমেদ বলেন, ‘সকাল থেকে চাঁদপুর ও ইলিশা রুটে ১০টি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও যায়নি। ভোলার উদ্দেশ্য মাত্র একটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে।’ ধর্মঘটের বিষয়ে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য আতিকুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘আমাদের ১০ দফা দাবিতে চলমান কর্মবিরতিতে সারাদেশের নৌযান শ্রমিকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে। আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিলে কর্মসূচি তুলে নিব।’

লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘লঞ্চ না চলায় যেমন আমাদের ক্ষতি, তেমনই তাদেরও ক্ষতি। তাদের সঙ্গে এখনো আলোচনা হয়নি। দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক এটাই চাই।’
ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ বলেন, ‘শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে যাওয়ায় নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। লঞ্চ বন্ধ থাকবে, এটা জানা না থাকায় অনেক যাত্রী এসে ফিরে যাচ্ছেন।’ নৌশ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- নৌযান শ্রমিকদের বেতন সর্বনি¤œ ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে। ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিংপাস দিতে হবে। বাল্কহেডের রাত্রিকালীন চলাচলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে হবে। বাংলাদেশের বন্দরসমূহ থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে প্রোতাশ্রয় নির্মাণ ও চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিল করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের চলমান কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। কর্মস্থলে ও দুর্ঘটনায় মৃত্যুজনিত ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন করতে হবে। বাংলাদেশের বন্দরগুলো থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা ১০০ ভাগ কার্যকর করতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর ও ঘাটে অচলাবস্থা
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ডাকে রাত ১২টা ১মিনিট থেকে শুরু হয়েছে কর্মবিরতি। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাসে নিয়োজিত লাইটার জাহাজ, অয়েল ট্যাংকারসহ প্রায় সব ধরনের নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
কিছু কিছু লাইটার জাহাজে কাজ চললেও শ্রমিক নেতারা জোর করে তা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এর ফলে পণ্য খালাস, পরিবহনে অচলাবস্থা তৈরি হচ্ছে।
নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব মো. নূর ইসলাম (ড্রাইভার) বলেন, যতদিন ১০ দফা দাবি না মানবে ততদিন শ্রমিকদের আন্দোলন চলবে। লাইটার জাহাজ মালিকদের সংগঠন ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা গেছে, কর্মবিরতির কারণে লাইটার জাহাজ রোববার (২৭ নভেম্বর) থেকে বহির্নোঙরে যেতে পারেনি।
বরিশাল: ১০ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিকদের ডাকা কর্মবিরতির কারণে বরিশালে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শনিবার (২৬ নভেম্বর) দিনগত রাত ১২টা থেকে এ কর্মবিরতি শুরু করে নৌযান শ্রমিকরা। ফলে রোববার (২৭ নভেম্বর) সকাল থেকে বরিশাল নদীবন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদীবন্দর ও লঞ্চঘাট থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার যাত্রীবাহী লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। আর এতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন জানান, শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে সকাল থেকে বরিশাল নদীবন্দর থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি।
বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন বরিশালের সভাপতি আবুল হাসেম মাস্টার বলেন, ‘বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে সারাদেশে এ কর্মবিরতি শুরু করেছে নৌযান শ্রমিকরা। ফলে গত রাত ১২টা থেকে সারাদেশের সঙ্গে বরিশাল বিভাগে সব ধরনের পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মবিরতির এ আন্দোলন লাগাতার চলবে।’
বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন ও নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আবু সাঈদ বলেন, ‘শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে সারাদেশে তেলবাহী, বালুবাহীসহ সব পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমরা চাই আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মানা হোক। তবে এখন পর্যন্ত সরকারসহ কোনো পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। আর আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।’
মোংলায় পণ্য খালাস বন্ধের শঙ্কা
মোংলা প্রতিনিধি জানান, কর্মবিরতিতে সমর্থন দিয়ে রবিবার মোংলার পশুর চ্যানেলের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকশ’ লাইটার নোঙর করে রেখেছেন নৌযান শ্রমিকরা। এর ফলে লাইটার সংকটে যেকোনও মুহূর্তে মোংলা বন্দরে অবস্থারত বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। মজুরি বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে শনিবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে নৌ-শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি।
বন্দর ব্যবহারকারী এইচ এম দুলাল জানান, লাইটার সংকটের কারণে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস না করতে পারলে তাদের অনেক টাকার আর্থিক ক্ষতি হবে। শিপিং এজেন্টদেরও জাহাজ ভাড়া বাড়বে। তবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপটেন শাহীন মজিদ জানান, রাতে শুরু হওয়া নৌযান শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে পণ্য খালাসে এখনও কোনও প্রভাব পড়েনি।চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, নৌযান শ্রমিকদের সর্বনি¤œ মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণসহ ১০ দফা দাবিতে হঠাৎ দেওয়া ধর্মঘটে দুর্ভোগে পড়েছেন চাঁদপুরের লঞ্চ যাত্রীরা। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কিংবা সংগঠনের পক্ষ থেকে মাইকিং না করায় এ ধর্মঘটে ঘাটে এসে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। রবিবার সকাল থেকে চাঁদপুর-ঢাকাসহ সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুরের বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, শনিবার (২৬ নভেম্বর) দিনগত রাত ১২টার পর পর্যন্ত চাঁদপুর থেকে সিডিউলের সবগুলো লঞ্চ ছেড়েগেছে। সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। লঞ্চ মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। তাদের মধ্যে সুরাহা হলে আবার লঞ্চ চলাচল শুরু করবে। বেলা দেড়টার দিকে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে গিয়ে কোন লঞ্চ পাওয়া যায়নি। পুরো লঞ্চঘাট পাকা। যাত্রীবহনকারী কিছু অটোরিকশা ঘাটে অবস্থান করতে দেখা যায়। যেসব যাত্রী শ্রকিক ধর্মঘটের বিষয়ে জানেন না, তারা এসে ঘাটে উপস্থিত হচ্ছেন। লঞ্চ শ্রমিক আলমগীর হোসেন জানান, আমাদের যে দাবিদাওয়ার ছিল, ২০২২ সাল চলে যাচ্ছে কিন্তু মালিকপক্ষ ও শ্রম মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের বেতন বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে।
শ্রমিকদের ১০ দফা দাবি:
নৌযান শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক দেওয়াসহ শ্রমিকদের সর্বনি¤œ মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, খাদ্য ভাতা ও সমুদ্র ভাতার সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন করা, দুর্ঘটনা ও কর্মস্থলে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা, চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহে দেশের স্বার্থবিরোধী প্রকল্প বাস্তবায়নে চলমান কার্যক্রম বন্ধ করা, বালুবাহী বাল্কহেড ও ড্রেজারের রাত্রিকালীন চলাচলের ওপর ঢালাও নিষেধাজ্ঞা শিথিল, নৌ-পথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ করা, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস দেওয়াসহ ভারতীয় সীমানায় সব প্রকার হয়রানি বন্ধ করা, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা ১০০ শতাংশ কার্যকর করে সব লাইটার জাহাজকে সিরিয়াল মোতাবেক চলাচলে বাধ্য করা, চরপাড়া ঘাটে ইজারা বাতিল ও নৌ-পরিবহন অধিদফতরের সব ধরনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বন্ধ করা।