বান্দরবান সংবাদদাতা : টানা বর্ষণে রাস্তার ওপর পাহাড় ধসে পড়ে বান্দরবানের সঙ্গে থানচি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সকালে থানচি সড়কের জীবননগর এলাকায় পাহাড়ের বিশাল একটি অংশ সড়কের ওপর ধসে পড়ে। এতে বান্দরবানের সঙ্গে থানচির যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়ক থেকে ধসে পড়া মাটি অপসারণে কাজ করেন। এদিকে জরুরি প্রয়োজনে উভয় দিক থেকে ছেড়ে আসা পরিবহন আটকে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীসহ স্থানীয়রা। এ বিষয়ে বান্দরবান ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দি বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে সেনাবাহিনীর সহায়তায় মাটি অপসারণের কাজ করছি।’ দ্রুত মাটি অপসারণ করে যান চলাচল স্বাভাবিক করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। অপরদিকে লামায় মাতামুহুরি নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ওপরে। এতে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি পৌর এলাকার ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়ে তিন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় একশ পরিবার। লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি পৌর এলাকার ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ১০০ পরিবার পৌর এলাকার তিন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।’ বান্দরবান আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন কুমার মণ্ডল জানান, ‘মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত থাকার কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। যা আরও কয়েকদিন হতে পারে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’
বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৩০০ পরিবার
এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও লামাতে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০ পরিবার। গতকাল বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তের ঘুমধুম ১ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিমকূল, ক্যাম্পপাড়া, ঘোনারপাড়া, হিন্দুপাড়া, বাজারপাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের কোনারপাড়া ও মধ্যমপাড়াসহ অন্তত ২৫০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের বাড়ির চালা পর্যন্ত উঠে গেছে পানি। এছাড়া রাস্তার ওপর দিয়ে ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড় ধসে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অপরদিকে লামায় মাতামুহুরি নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ওপরে। এতে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি পৌর এলাকার ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে প্রায় ১০০ পরিবার। ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে আড়াইশ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট। লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বলেন, টানা বৃষ্টিতে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি পৌর এলাকার ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ১০০ পরিবার পৌর এলাকার তিন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুমের সীমান্ত এলাকাবর্তী ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকাটি তুলনামূলক নিচু হওয়ায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়ে ৭০-৮০ পরিবার পানিবন্দি ছিল। তবে আজ বৃষ্টি না হলে পানি নেমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অরুপ চক্রবর্তী বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আজ সকাল ৯টায় মাতামুহুরি নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৩ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সাঙ্গু নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৯.৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত রয়েছে।