নিজস্ব প্রতিবেদক : মূল্যস্ফীতির চাপ, আর্থিক সংকট ও বিনিয়োগে নানা শর্তের কারণে কমেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। ফলে আগের কেনা সঞ্চয়পত্র মেয়াদপূর্তির পর যে হারে ভাঙানো হচ্ছে, সেই হারে নতুন বিনিয়োগ বাড়ছে না। যার কারণে ছয় মাসে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না বেড়ে কমেছে অর্থাৎ ঋণাত্মক (নেগেটিভ) প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটা সময় কোনো স্কিমের মেয়াদ শেষ হলে বেশিরভাগ গ্রাহক আবার সেখানেই বিনিয়োগ করতেন। কিন্তু এখন যাদের সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হচ্ছে তারা আর নতুন করে এখানে বিনিয়োগ করছেন না। ফলে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এখন বিক্রির চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ বেশি করা হচ্ছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে তা দিয়ে গ্রাহকদের আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। উল্টো ৩ হাজার ১০৭ কোটি টাকা সরকার তার কোষাগার ও ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা কড়াকড়ির কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস নেমেছে। নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে বিনিয়োগসীমা। তাই মেয়াদ শেষে অনেকেই আর নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। এছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ খুব বেশি মুনাফা পাচ্ছে না। এটাও সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ার বড় কারণ। তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসে মোট ৫ হাজার ৫৪২ কোটি ৩৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। মুনাফা ও আসল পরিশোধ করা হয়েছে ৭ হাজার ৩৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ফলে নিট বিক্রির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১৪৯০ কোটি ৯৪ লাখ টাকায়। এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৪০ হাজার ৪৭১ কোটি ৬৮ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর বিপরীতে মুনাফা ও মূল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৪৩ হাজার ৫৭৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে ছয় মাসে যা বিনিয়োগ হয়েছে তার চেয়ে ৩ হাজার ১০৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা থাকে। সরকার তা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির ভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
চলতি অর্থবছরে ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে রিটার্নের সনদ দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর আগে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব রকম সঞ্চয়পত্রের সুদহার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগসীমা কমিয়ে আনা হয়। এছাড়া ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। দুর্নীতি বা কালো টাকায় সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধে ক্রেতার তথ্যের একটি ডাটাবেজ তৈরি হয়েছে। এসব কড়াকড়ির প্রভাবে বর্তমানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে ঠেকেছে। বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে— পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৫২, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৭৬, পাঁচ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ২৮, তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। কয়েক দফায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হলেও এখনো তা ব্যাংকের তুলনায় বেশি।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। এর বিপরীতে প্রথম ছয় মাসে এই খাত থেকে কোনো ঋণ পায়নি সরকার, উল্টো ৩ হাজার ১০৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা কোষাগার ও ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেছে।
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে আইটি
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে আইটি খাত। গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেনের ২৪ শতাংশ করে অবদান রয়েছে এই দুই খাতে।
সূত্র জানায়, ঔষুধ খাতে ১০ শতাংশ লেনদেন করে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। জীবন বীমা খাতে ৯ শতাংশ লেনদেন করে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তালিকায় থাকা অন্য খাতগুলোর মধ্যে সেবা-আবাসন খাতে ৮ শতাংশ, খাদ্য-আনুসঙ্গিক ও কাগজ খাতে ৫ শতাংশ, খাদ্য, সাধারণ বীমা খাতে ৪ শতাংশ, বস্ত্র, সিরামিক খাতে ২ শতাংশ। এছাড়া আর্থিক, সিমেন্ট ও ট্যানারি খাতে ১ শতাংশ করে লেনদেন হয়েছে।
ডিএসইতে পিই রেশিও বেড়েছে
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বেড়েছে। আগের সপ্তাহের চেয়ে পিই রেশিও বেড়েছে দশমিক ২৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ডিএসই সূত্রে সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র মতে, আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে পিই রেশিও অবস্থান করছে ১৪ দশমিক ৪৫ পয়েন্টে। এর আগের সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১৪ দশমিক ২১ পয়েন্ট। খাতভিত্তিক হিসাবে পিই রেশিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংক খাতের পিই রেশিও অবস্থান করছে ৭.৮ পয়েন্টে, সিমেন্ট খাতে ৬৪.২ পয়েন্ট, সিরামিকস খাতে ৪২.৬ পয়েন্ট, প্রকৌশল খাতে ৩৬.৬ পয়েন্ট, খাদ্য খাতে ২১.৫ পয়েন্ট, জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাতে ১৬.৪ পয়েন্ট, সাধারণ বিমা ১৬.৬ খাতে পয়েন্ট, আইটি খাতে ৫.৪১ পয়েন্ট, বিবিধ খাতে ২১ পয়েন্ট, আর্থিক খাতে ৩৯.৪ পয়েন্ট,ওষুধ খাতে ১৮.৪ পয়েন্ট, সেবা-আবাসন খাতে ২২.৩ পয়েন্ট, ট্যানারি খাতে ৪৯.৯ পয়েন্ট, টেলিকমিউনিকেশন খাতে ১৭.৫ পয়েন্ট অবস্থান করছে।
লেনদেনের শীর্ষে জেনেক্স ইনফোসিস
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে জেনেক্স ইনফেসিস লিমিটেড। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির ৩০০ কোটি ৯ লাখ ২৯ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে। আলোচ্য সপ্তাহে কোম্পানিটি ২ কোটি ৮৬ লাখ ৪৯ হাজার ২৩৪টি শেয়ার হাতবদল করেছে। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড। কোম্পানিটির ১ কোটি ৮৭ লাখ ৯৬ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ১৬৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ইস্টার্ণ হাউজিং লিমিটেড তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে। কোম্পানিটির ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮৪টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ১৪৮ কোটি ৪৮ লাখ ১১ হাজার টাকা। লেনদেনের তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে- আমরা নেটওয়ার্কস, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, ওরিয়ন ফার্মা, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, শাইনপুকুর সিরামিকস, সী পার্ল বীচ ও ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেড।
লুজারের শীর্ষে আমরা টেকনোলজি
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টপটেন লুজার বা দরপতনের শীর্ষে রয়েছে আমরা টেকনোলজি লিমিটেড। গত সপ্তাহে শেয়ারটির সর্বোচ্চ দর কমেছে ১০.৩৭ শতাংশ। তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটি সর্বমোট ২০ কোটি ২৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা লেনদেন করে। যা গড়ে প্রতিদিন ৪ কোটি ৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা। প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লুজার তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। গত সপ্তাহে শেয়ারটির সর্বোচ্চ দর কমেছে ১০.১৫ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে শেয়ারটি সর্বমোট ৩০ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার টাকা লেনদেন করে। যা গড়ে প্রতিদিন ৮ কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ই-জেনারেশন ৯.৯০ শতাংশ দর কমে লুজার তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে। লুজার তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে- মেট্রো স্পিনিং, বসুন্ধরা পেপার মিলস, ফঅরইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল হাউজিং ফিন্যান্স, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বিকন ফার্মা ও মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।
গেইনারের শীর্ষে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টপটেন গেইনার বা দর বাড়ার শীর্ষে রয়েছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে শেয়ারটির দর ১৩.৯৪ শতাংশ বেড়েছে। আলোচ্য সপ্তাহে শেয়ারটি সর্বমোট ১০০ কোটি ৭৫ লাখ ৫৩ হাজার টাকা লেনদেন করে। যা গড়ে প্রতিদিন ২০ কোটি ১৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। গেইনারের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড। গত সপ্তাহে শেয়ারটির সর্বচ্চো দর বেড়েছে ১০ দশমিক ৮২ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে শেয়ারটি সর্বমোট কোটি লাখ টাকা লেনদেন করে। যা গড়ে প্রতিদিন ৩৬ কোটি ১৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। জেমিনি সী লিমিটেড গেইনারের তৃতীয় স্থানে রয়েছে। সপ্তাহে শেয়ারটির সর্বচ্চো দর বেড়েছে ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে শেয়ারটি সর্বমোট ৬২ কোটি ১৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা লেনদেন করে। যা গড়ে প্রতিদিন ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৬ হাজার টাকা।
তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট,শাইনপুকুর সিরামিকস, ইস্টার্ণ লুব্রিকন্টস, জেনেক্স ইনফোসিস, ইস্টার্ণ হাউজিং ও হা-ওয়েল টেক্সটাইল বিডি লিমিটেড।