ঢাকা ০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

সচিবালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় আহত ৮৫ জন ঢামেকে

  • আপডেট সময় : ০৯:০৮:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে

সচিবালয়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় আহত হন অনেকেই -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিভিন্ন দাবিতে সচিবালয়ে ঢুকে পড়া শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসময় তাদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ঘটে। এতে আহত হয়ে অন্তত ৮৫ জন শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেলে পৌনে ৪টার দিকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এর আগে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে সচিবালয়ের এক নম্বর গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা গাড়ি ভাঙচুর চালালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে ঢুকে ১০টির মতো গাড়ি ভাঙচুর করে। এরপর পুলিশ ও সেনাবাহিনী শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু হাজার হাজার শিক্ষার্থী সচিবালয়ে ঢুকে পড়ে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্যও শিক্ষার্থীদের ছোড়া ঢিলে আহত হয়েছেন। এরপর শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টের দিকে অবস্থান নেন। জিরো পয়েন্টের দিকে পুলিশ কয়েক দফা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে সচিবালয় এলাকা রণক্ষেত্র: শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘাতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পুলিশ লাঠিপেটা করে, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের সচিবালয়ের ভেতর থেকে বের করতে পারলেও আশপাশের এলাকায় কয়েক ঘণ্টা ধরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষ চলে।
দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সোমবার জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের দাবি ওঠে। মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতায় পরীক্ষা স্থগিতের সেই ঘোষণা আসে সোমবার রাত ৩টার দিকে। অনেক শিক্ষার্থীর কাছে সেই খবর না পৌঁছানোয় কেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসতে হয় তাদের। শিক্ষা উপদেষ্টার বরাতে তথ্য উপদেষ্টা সোমবার গভীর রাতে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি ফেসবুকে জানান। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে অনেক পরে, যা নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার দুপুরে প্রথমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করতে যায়। সেখান থেকে বেলা দেড়টার দিকে তারা সচিবালয়ের সামনে জড়ো হন। ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, নূর মোহাম্মদ কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ, কমার্স কলেজ, আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, মিরপুর কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ আরো কিছু শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। শুরুতে তারা সচিবালয়ের তিন নম্বর ফটকের সামনে বিক্ষোভ দেখান। পরে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রের বাকি ফটোগুলোও বন্ধ করে দেন। সিটি কলেজের শিক্ষার্থীর তানভীর বলেন, গোপালগঞ্জের সামান্য কারণে এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত করেছে। অথচ কালকে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, বারবার বলার পরও তারা এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত করেনি। রাত ৩টা বাজে যখন স্থগিত করেছে ততক্ষণের সব শিক্ষার্থীরা জানতেও পারেনি। সকালবেলা অনেকের পরীক্ষা দিতে বেরিয়েছে। এগুলো স্পষ্ট দায়িত্ব অবহেলা এবং একঘেয়েমি। আমরা এই শিক্ষা সচিব, শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ চাই। তাদের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে ঘরে ফিরে যাব না।

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান আরেফিন বলেন, প্রশ্নপত্রে ভুল, দায়িত্বে অবহেলাসহ বিভিন্ন কারণে আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ চাইছি। শিক্ষা বোর্ড সংক্রান্ত সব দায়িত্বশীলকে বহিষ্কার করতে হবে। সব শিক্ষা বোর্ডে একই প্রশ্নের পরীক্ষা হতে হবে। মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং সঠিক তথ্য প্রকাশেরও দাবি জানান তিনি। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের দাবি মুখে শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় সরকার। তাদের অন্যান্য দাবি পর্যালোচনার জন্য কমিটি করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান। কিন্তু শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে তিন নম্বর গেইট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়তে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। তারা সচিবালয়ের ভেতরে রাখা গাড়ি ভাঙচুর শুরু করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর হন। শিক্ষার্থীদের সচিবালয়ের বাইরে সরিয়ে দিতে তারা লঠিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়তে শুরু করেন। কিছু সময় পর সচিবালয়ের সামনের এলাকা অনেকটা ফাঁকা দেখা যায়। তবে পরে জিরো পয়েন্টে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ পাওয়া যায়। সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ উপ কমিশনার মোহাম্মদ বিল্লাল বলেন, পরিস্থিতি উত্তপ্ত। নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। আমরা খুবই ব্যস্ত। কথা বলা সময় নাই। বিকেল ৫টার দিকেও শিক্ষার্থীরা গুলিস্তান ও জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছিল। সচিবালয়ের অনেকগুলো ফটক তখন খুলে দেওয়া হয়। আটকা পড়া কর্মকর্তা কর্মচারীরা সেই সুযোগে বেরিয়ে যেতে পারেন। পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুড়ে গুলিস্তানের দিক থেকেও শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। বিকাল পৌনে ৬টার দিকে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট এলাকা স্বাভাবিক হয়। এদিকে সংঘর্ষ চলার মধ্যে ৮৫ জন শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, তাদেরকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- আশিক (১৯) রাকিবুল হাসান (২১) আসাদ আহমেদ (১৮), হাসান (১৮), আফসানা (১৮) মুগ্ধ (১৯) অন্তর(২০) শাকিল (২৩) শাওন (১৯), তানসিন (২০) সিয়াম (১৮),মাহিম (১৮), রেদোয়ান ইসলাম (২০), হাসিব (১৮) ও নেহাল (২০)।

সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ: মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার সঠিক তদন্ত ও নিহতের সঠিক তথ্য প্রকাশ এবং শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ দাবিতে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর ১২টার পর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এতে যানচলাচল সীমিত হয়ে পড়ে। বিক্ষোভে ঢাকা কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছেন।

৬ ঘণ্টা ধরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ: রাজধানীর উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুলের হতাহত শিক্ষার্থীদের সঠিক তথ্য প্রদান ও গভীর রাতে চলমান এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে নগরীর নথুল্লাবাদ সংলগ্ন বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের সামনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন দূর-দূরান্তের যাত্রীরা। শিক্ষার্থীরা বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সড়কের কিছু অংশ ছাড়লেও কিছুক্ষণ পরে পুনরায় সড়ক আটকে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টায়ও শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান করছিলেন।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে তালা, মহাসড়ক অবরোধ: শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারসহ সংশ্লিষ্টদের পদত্যাগের দাবিতে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষা বোর্ডের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করেছেন তারা। এতে দিনাজপুর ঢাকা মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকাল ৩টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের সামনে এসে জড়ো হন। পরে তারা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ফটকে তালা মেরে দেন। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। পরে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডের সামনে মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে করে দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে শিক্ষার্থীরা দিনাজপুর কোতোয়ালি থানা ঘেরাও করেন। পরে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যায়। এ সময় তারা সেখানে বিক্ষোভ করেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনবহুল এলাকায় যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন

সচিবালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় আহত ৮৫ জন ঢামেকে

আপডেট সময় : ০৯:০৮:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিভিন্ন দাবিতে সচিবালয়ে ঢুকে পড়া শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসময় তাদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ঘটে। এতে আহত হয়ে অন্তত ৮৫ জন শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেলে পৌনে ৪টার দিকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এর আগে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে সচিবালয়ের এক নম্বর গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা গাড়ি ভাঙচুর চালালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে ঢুকে ১০টির মতো গাড়ি ভাঙচুর করে। এরপর পুলিশ ও সেনাবাহিনী শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু হাজার হাজার শিক্ষার্থী সচিবালয়ে ঢুকে পড়ে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্যও শিক্ষার্থীদের ছোড়া ঢিলে আহত হয়েছেন। এরপর শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টের দিকে অবস্থান নেন। জিরো পয়েন্টের দিকে পুলিশ কয়েক দফা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে সচিবালয় এলাকা রণক্ষেত্র: শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘাতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পুলিশ লাঠিপেটা করে, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের সচিবালয়ের ভেতর থেকে বের করতে পারলেও আশপাশের এলাকায় কয়েক ঘণ্টা ধরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষ চলে।
দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সোমবার জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের দাবি ওঠে। মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতায় পরীক্ষা স্থগিতের সেই ঘোষণা আসে সোমবার রাত ৩টার দিকে। অনেক শিক্ষার্থীর কাছে সেই খবর না পৌঁছানোয় কেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসতে হয় তাদের। শিক্ষা উপদেষ্টার বরাতে তথ্য উপদেষ্টা সোমবার গভীর রাতে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি ফেসবুকে জানান। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে অনেক পরে, যা নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার দুপুরে প্রথমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করতে যায়। সেখান থেকে বেলা দেড়টার দিকে তারা সচিবালয়ের সামনে জড়ো হন। ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, নূর মোহাম্মদ কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ, কমার্স কলেজ, আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, মিরপুর কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ আরো কিছু শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। শুরুতে তারা সচিবালয়ের তিন নম্বর ফটকের সামনে বিক্ষোভ দেখান। পরে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রের বাকি ফটোগুলোও বন্ধ করে দেন। সিটি কলেজের শিক্ষার্থীর তানভীর বলেন, গোপালগঞ্জের সামান্য কারণে এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত করেছে। অথচ কালকে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, বারবার বলার পরও তারা এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত করেনি। রাত ৩টা বাজে যখন স্থগিত করেছে ততক্ষণের সব শিক্ষার্থীরা জানতেও পারেনি। সকালবেলা অনেকের পরীক্ষা দিতে বেরিয়েছে। এগুলো স্পষ্ট দায়িত্ব অবহেলা এবং একঘেয়েমি। আমরা এই শিক্ষা সচিব, শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ চাই। তাদের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে ঘরে ফিরে যাব না।

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান আরেফিন বলেন, প্রশ্নপত্রে ভুল, দায়িত্বে অবহেলাসহ বিভিন্ন কারণে আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ চাইছি। শিক্ষা বোর্ড সংক্রান্ত সব দায়িত্বশীলকে বহিষ্কার করতে হবে। সব শিক্ষা বোর্ডে একই প্রশ্নের পরীক্ষা হতে হবে। মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং সঠিক তথ্য প্রকাশেরও দাবি জানান তিনি। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের দাবি মুখে শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় সরকার। তাদের অন্যান্য দাবি পর্যালোচনার জন্য কমিটি করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান। কিন্তু শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে তিন নম্বর গেইট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়তে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। তারা সচিবালয়ের ভেতরে রাখা গাড়ি ভাঙচুর শুরু করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর হন। শিক্ষার্থীদের সচিবালয়ের বাইরে সরিয়ে দিতে তারা লঠিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়তে শুরু করেন। কিছু সময় পর সচিবালয়ের সামনের এলাকা অনেকটা ফাঁকা দেখা যায়। তবে পরে জিরো পয়েন্টে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ পাওয়া যায়। সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ উপ কমিশনার মোহাম্মদ বিল্লাল বলেন, পরিস্থিতি উত্তপ্ত। নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। আমরা খুবই ব্যস্ত। কথা বলা সময় নাই। বিকেল ৫টার দিকেও শিক্ষার্থীরা গুলিস্তান ও জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছিল। সচিবালয়ের অনেকগুলো ফটক তখন খুলে দেওয়া হয়। আটকা পড়া কর্মকর্তা কর্মচারীরা সেই সুযোগে বেরিয়ে যেতে পারেন। পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুড়ে গুলিস্তানের দিক থেকেও শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। বিকাল পৌনে ৬টার দিকে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট এলাকা স্বাভাবিক হয়। এদিকে সংঘর্ষ চলার মধ্যে ৮৫ জন শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, তাদেরকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- আশিক (১৯) রাকিবুল হাসান (২১) আসাদ আহমেদ (১৮), হাসান (১৮), আফসানা (১৮) মুগ্ধ (১৯) অন্তর(২০) শাকিল (২৩) শাওন (১৯), তানসিন (২০) সিয়াম (১৮),মাহিম (১৮), রেদোয়ান ইসলাম (২০), হাসিব (১৮) ও নেহাল (২০)।

সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ: মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার সঠিক তদন্ত ও নিহতের সঠিক তথ্য প্রকাশ এবং শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ দাবিতে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর ১২টার পর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এতে যানচলাচল সীমিত হয়ে পড়ে। বিক্ষোভে ঢাকা কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছেন।

৬ ঘণ্টা ধরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ: রাজধানীর উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুলের হতাহত শিক্ষার্থীদের সঠিক তথ্য প্রদান ও গভীর রাতে চলমান এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে নগরীর নথুল্লাবাদ সংলগ্ন বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের সামনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন দূর-দূরান্তের যাত্রীরা। শিক্ষার্থীরা বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সড়কের কিছু অংশ ছাড়লেও কিছুক্ষণ পরে পুনরায় সড়ক আটকে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টায়ও শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান করছিলেন।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে তালা, মহাসড়ক অবরোধ: শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারসহ সংশ্লিষ্টদের পদত্যাগের দাবিতে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষা বোর্ডের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করেছেন তারা। এতে দিনাজপুর ঢাকা মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকাল ৩টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের সামনে এসে জড়ো হন। পরে তারা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ফটকে তালা মেরে দেন। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। পরে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডের সামনে মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে করে দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে শিক্ষার্থীরা দিনাজপুর কোতোয়ালি থানা ঘেরাও করেন। পরে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যায়। এ সময় তারা সেখানে বিক্ষোভ করেন।