ঢাকা ১০:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

সঙ্কটে ডাইস কেমিক্যাল-রং ব্যবসা

  • আপডেট সময় : ০৬:১২:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে ভালো নেই রঙ ব্যবসায়ীরা। তাদের কেনা-বেচা যেন একেবারেই কমে গেছে। কোনো কোনো ব্যবসায়ী সারাদিন বসে থেকেও কোনো ক্রেতা পান না বলে জানা গেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি, ডলার সংকট, ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধি ও আমেরিকার শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা সব মিলিয়ে রং ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। তবে তারা আশাবাদী কিছুদিনের মধ্যে তাদের দিন ফিরবে। সেইসঙ্গে তাদের ব্যবসার পরিস্থিতিও ভালো হয়ে যাবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- রং, বার্নিশ, ডাইস অ্যান্ড ক্যামিকেলের সব ব্যবসাই মন্দ যাচ্ছে। বর্তমান সরকার মানুষের আয় ব্যয়ের সমন্বয় করতে গিয়ে লাক্সারিয়াস পণ্যের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়িয়েছে। সেইসঙ্গে ডলারের ওপর চাপ কমানোর চেষ্টা করছে। ফলে এর প্রভাব পড়েছে রং ব্যবসায়। পাশাপাশি আমেরিকার শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণাও ব্যবসায় প্রভাব ফেলছে। এদিকে বার্নিশের ক্ষেত্রে অনেক ক্যাটাগরির রং আছে। আগে বেশিরভাগ মানুষ সাধারণ চুনা রং করতো। এখন অনেক আপডেট হয়েছে। জনসাধারণের চাহিদার পরিবর্তন হয়েছে।

এখন চুনা রঙের পরিবর্তে অন্য রং ব্যবহার করা হয়। আর এই প্রতিটি পণ্যের দামই বেড়েছে। গত এক বছরের ব্যবধানে প্রতিটির দাম প্রায় এক হাজার টাকা বেড়েছে। সেইসঙ্গে ডাইস অ্যান্ড ক্যামিকেলের ক্ষেত্রেও অনেক রং রয়েছে। এই রঙের ক্ষেত্রেও প্রতিটি পণ্যর দাম বেড়েছে। প্রতিটি পণ্যে কেজিতে প্রায় ২০ টাকা করে বেড়েছে। যার কারণে ব্যবসায়ীদের বেগ পোহাতে হচ্ছে। শহরের কালিরবাজার এলাকার মেসার্স রাজধানী পেইন্টের প্রোপ্রাইটর মো. শাহজালাল বলেন, আমাদের ব্যবসা তেমন ভালো যাচ্ছে না। সবকিছুই মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে দিন দিন। যার কারণে আমাদের বেচাকেনা তেমন হয় না। আর আমাদের ব্যবসা লাক্সারিয়াস পণ্য নিয়ে। মানুষের কাছে যখন টাকা থাকে তখনই মানুষ এই পণ্যের দিকে আগ্রহী হয়ে থাকে। আশা করি কিছুদিন পর হয়ত এই পরিস্থিতি থাকবে না। শহরের নিতাইগঞ্জ এলাকার এম টেক্স বিডির ব্রাঞ্চ ইনচার্জ মো. হিরন মোল্লা বলেন, গার্মেন্ট ব্যবসা ভালো হলে আমাদের ব্যবসাও ভালো হয়। কিছু কিছু গার্মেন্ট পণ্য এক্সপোর্ট কোয়ালিটির, যারা দেশের বাইরের কাজ করে তারা মালামাল নিয়ে থাকে। তাদের কেনাবেচা বেশি হয়ে থাকে বড় কোম্পানির সঙ্গে।

কিন্তু আমরা যারা মধ্যবিত্ত আছি তাদের সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। অনেক ছোট গার্মেন্ট আছে, যাদের কাজ নেই। যার কারণে আমাদের বেচাকেনা কম। নারায়ণগঞ্জ পেইন্ট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. মিলন বলেন, আমাদের জিনিসগুলো বেশিরভাগ বাইরে থেকে আসে। বাইরে থেকে জিনিসপত্র আনলে ডলারের ওপর চাপ বাড়ে। সরকার চাচ্ছে ডলারের চাপ কমিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে। এতে আমরা একমত আছি। তবে এটাকে সহনীয় পর্যায়ে রাখা উচিত। কারণ হঠাৎ করে সবকিছু বাদ দেওয়া যায় না। প্রয়োজন ছিল ভ্যাট ট্যাক্স আরেকটু কমিয়ে আনা। তিনি আরও বলেন, ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ার কারণে শতকরা ৪০ ভাগ বেচাকেনা কমে গেছে। পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। যার কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এর একমাত্র কারণ হলো ডলার। তবে সবাই মিলে ইচ্ছা করলে আমরা এটা মোকাবিলা করতে পারবো। ডলারের অপব্যবহার ঠেকাতে হবে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল ডাইস অ্যান্ড ক্যামিকেল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, অনেকগুলো কারণে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য কঠিন খারাপ যাচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির প্রভাব আমাদের ব্যবসাতেও পড়েছে। সেইসঙ্গে বিগত সরকারের সময়ের বিভিন্ন কারণে আমাদের ব্যবসা খারাপ যাচ্ছিল। এরপর সরকার পরিবর্তনের কারণে সেই প্রভাব আরও বেশি পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, ডলার রেট বেড়ে গেছে। মাঝখানে কিছুদিন ডলার রেট কমলেও আমেরিকা শুল্ক বাড়ানোর কারণে আমাদের ব্যবসা ভালো হওয়ার সুযোগ হয়নি। আমেরিকা শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থগিত করলেও সেটার রেশ থেকে যায়। সেইসঙ্গে এটার প্রভাব পড়েছে ডাইস ও ক্যামিকেলের রঙে।

 

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সঙ্কটে ডাইস কেমিক্যাল-রং ব্যবসা

আপডেট সময় : ০৬:১২:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে ভালো নেই রঙ ব্যবসায়ীরা। তাদের কেনা-বেচা যেন একেবারেই কমে গেছে। কোনো কোনো ব্যবসায়ী সারাদিন বসে থেকেও কোনো ক্রেতা পান না বলে জানা গেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি, ডলার সংকট, ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধি ও আমেরিকার শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা সব মিলিয়ে রং ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। তবে তারা আশাবাদী কিছুদিনের মধ্যে তাদের দিন ফিরবে। সেইসঙ্গে তাদের ব্যবসার পরিস্থিতিও ভালো হয়ে যাবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- রং, বার্নিশ, ডাইস অ্যান্ড ক্যামিকেলের সব ব্যবসাই মন্দ যাচ্ছে। বর্তমান সরকার মানুষের আয় ব্যয়ের সমন্বয় করতে গিয়ে লাক্সারিয়াস পণ্যের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়িয়েছে। সেইসঙ্গে ডলারের ওপর চাপ কমানোর চেষ্টা করছে। ফলে এর প্রভাব পড়েছে রং ব্যবসায়। পাশাপাশি আমেরিকার শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণাও ব্যবসায় প্রভাব ফেলছে। এদিকে বার্নিশের ক্ষেত্রে অনেক ক্যাটাগরির রং আছে। আগে বেশিরভাগ মানুষ সাধারণ চুনা রং করতো। এখন অনেক আপডেট হয়েছে। জনসাধারণের চাহিদার পরিবর্তন হয়েছে।

এখন চুনা রঙের পরিবর্তে অন্য রং ব্যবহার করা হয়। আর এই প্রতিটি পণ্যের দামই বেড়েছে। গত এক বছরের ব্যবধানে প্রতিটির দাম প্রায় এক হাজার টাকা বেড়েছে। সেইসঙ্গে ডাইস অ্যান্ড ক্যামিকেলের ক্ষেত্রেও অনেক রং রয়েছে। এই রঙের ক্ষেত্রেও প্রতিটি পণ্যর দাম বেড়েছে। প্রতিটি পণ্যে কেজিতে প্রায় ২০ টাকা করে বেড়েছে। যার কারণে ব্যবসায়ীদের বেগ পোহাতে হচ্ছে। শহরের কালিরবাজার এলাকার মেসার্স রাজধানী পেইন্টের প্রোপ্রাইটর মো. শাহজালাল বলেন, আমাদের ব্যবসা তেমন ভালো যাচ্ছে না। সবকিছুই মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে দিন দিন। যার কারণে আমাদের বেচাকেনা তেমন হয় না। আর আমাদের ব্যবসা লাক্সারিয়াস পণ্য নিয়ে। মানুষের কাছে যখন টাকা থাকে তখনই মানুষ এই পণ্যের দিকে আগ্রহী হয়ে থাকে। আশা করি কিছুদিন পর হয়ত এই পরিস্থিতি থাকবে না। শহরের নিতাইগঞ্জ এলাকার এম টেক্স বিডির ব্রাঞ্চ ইনচার্জ মো. হিরন মোল্লা বলেন, গার্মেন্ট ব্যবসা ভালো হলে আমাদের ব্যবসাও ভালো হয়। কিছু কিছু গার্মেন্ট পণ্য এক্সপোর্ট কোয়ালিটির, যারা দেশের বাইরের কাজ করে তারা মালামাল নিয়ে থাকে। তাদের কেনাবেচা বেশি হয়ে থাকে বড় কোম্পানির সঙ্গে।

কিন্তু আমরা যারা মধ্যবিত্ত আছি তাদের সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। অনেক ছোট গার্মেন্ট আছে, যাদের কাজ নেই। যার কারণে আমাদের বেচাকেনা কম। নারায়ণগঞ্জ পেইন্ট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. মিলন বলেন, আমাদের জিনিসগুলো বেশিরভাগ বাইরে থেকে আসে। বাইরে থেকে জিনিসপত্র আনলে ডলারের ওপর চাপ বাড়ে। সরকার চাচ্ছে ডলারের চাপ কমিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে। এতে আমরা একমত আছি। তবে এটাকে সহনীয় পর্যায়ে রাখা উচিত। কারণ হঠাৎ করে সবকিছু বাদ দেওয়া যায় না। প্রয়োজন ছিল ভ্যাট ট্যাক্স আরেকটু কমিয়ে আনা। তিনি আরও বলেন, ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ার কারণে শতকরা ৪০ ভাগ বেচাকেনা কমে গেছে। পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। যার কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এর একমাত্র কারণ হলো ডলার। তবে সবাই মিলে ইচ্ছা করলে আমরা এটা মোকাবিলা করতে পারবো। ডলারের অপব্যবহার ঠেকাতে হবে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল ডাইস অ্যান্ড ক্যামিকেল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, অনেকগুলো কারণে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য কঠিন খারাপ যাচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির প্রভাব আমাদের ব্যবসাতেও পড়েছে। সেইসঙ্গে বিগত সরকারের সময়ের বিভিন্ন কারণে আমাদের ব্যবসা খারাপ যাচ্ছিল। এরপর সরকার পরিবর্তনের কারণে সেই প্রভাব আরও বেশি পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, ডলার রেট বেড়ে গেছে। মাঝখানে কিছুদিন ডলার রেট কমলেও আমেরিকা শুল্ক বাড়ানোর কারণে আমাদের ব্যবসা ভালো হওয়ার সুযোগ হয়নি। আমেরিকা শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থগিত করলেও সেটার রেশ থেকে যায়। সেইসঙ্গে এটার প্রভাব পড়েছে ডাইস ও ক্যামিকেলের রঙে।