রংপুর সংবাদদাতা: মবের (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ আক্রমণ) মাধ্যমে দেশে চরমভাবে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘এই মবকে যেকোনোভাবে মদদ দেওয়া হয়েছিল, ব্যবহার করা হয়েছিল। এখন বোঝা যাচ্ছে, এই মব যাঁরা তৈরি করেছিলেন, শক্তি প্রদর্শন করেছিলেন, ফায়দা লুটেছেন-তাঁরা আর কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) করতে পারছেন না।’
সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে রংপুরে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভায় এ কথা বলেন জি এম কাদের। নগরের দর্শনা এলাকায় এরশাদের সমাধিস্থলে রংপুর মহানগর, জেলা জাতীয় পার্টিসহ সব অঙ্গসংগঠনের সমন্বয়ে এ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান বলেন, ‘দলীয়করণের মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসনের মনোবল ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। এখন তাদের মাধ্যমে কোনো কাজ করাতে পারছেন না। আপনি যদি পুলিশ বা প্রশাসনকে কাজ করাতে না পারেন, মব দিয়ে আপনি ইলেকশন (নির্বাচন) করাতে পারবেন। কিন্তু যে ইলেকশন করবেন সেই মবের ইলেকশন (নির্বাচন) কি দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে?’
অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশের জনগণ সংবিধান ছুড়ে ফেলার ম্যান্ডেট দেয়নি মন্তব্য করেন জি এম কাদের বলেন, ‘এখন বলছেন, নির্বাচনের সঙ্গে লাগবে সংস্কার ও বিচার। সংস্কার ও বিচার চলমান প্রক্রিয়া। বিচার তো চলতেই পারে। এক বছরে আপনি না করেন, ১০ বছর পরও বিচার হতে পারে। বিচারের জন্য অপেক্ষা করলে ৫০ বছরেও নির্বাচন করতে পারবেন না।’ জি এম কাদের বলেন, সংস্কারের নামে যেটা চলছে, তা সার্কাস। জ্ঞানীগুণীরা সংস্কারের কথা বলছেন। কিন্তু দেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি, ইতিহাস কোনটি এবং কতটুকু গ্রহণ করবেন-এটা তাঁরা জানেন না। কীভাবে সরকার চলে, এটাও তাঁদের ধারণা নেই। নারী, গণমাধ্যম ও এনবিআর সংস্কারের কোনোটিই জনগণ গ্রহণ করছে না। কাজেই সংস্কার নিয়ে সার্কাসের উদ্দেশ্য একতরফা একটি নির্বাচন।
জাতীয় পার্টি আবার নতুনভাবে জেগে উঠেছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করতাম। কিন্তু পাশের লোকজন আওয়ামী লীগ থেকে সুবিধা নিত। সরকারের বিভিন্ন দোষত্রুটি, অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার তুলে ধরলে তাদের মধ্যে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা গেল। তারা বলল, সরকারবিরোধী বক্তব্য দিলে আপনার সঙ্গে রাজনীতি করতে পারব না।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘আজকে মবতন্ত্র হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তীব্র বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। এভাবে কোনো রাষ্ট্র চলতে পারে না। পুলিশকে উজ্জীবিত করতে হবে। প্রশাসনকে উজ্জীবিত করতে হবে।’
জাতীয় পার্টির কো–চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমানের সভাপতিত্বে এতে আরো উপস্থিত ছিলেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াছির, জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আজমল হোসেন, সদস্যসচিব আবদুর রাজ্জাক, পীরগাছা উপজেলার সভাপতি আবু নাছের মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।