ঢাকা ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫

সংস্কারহীন মহলে দায়বদ্ধ নীতি

  • আপডেট সময় : ১০:২৬:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২১
  • ৯৯ বার পড়া হয়েছে

ফারজানা কাশেমী : রক্ষণশীল সমাজে সংরক্ষণশীল নীতি অনেকাংশই প্রশ্নবিদ্ধ। উচ্চশিক্ষিত নারী যখন প্রাগৈতিহাসিক নিয়মের জালে নিজেকে আবদ্ধ করে তখনো সুরক্ষা নীতির বলয় তার জন্য বেস্টনী হয়না। প্রায় ছয় (৬) বছর আগের এক গবেষণার প্রতিবেদনে প্রতীয়মান হয় যে, ৩২% উচ্চশিক্ষিত নারী শিক্ষা জীবন সমাপ্ত হওয়ার পরেও পেশাগত জীবনে প্রবেশ করার সুযোগ গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করে শুধুমাত্র পারিবারিক, সামাজিক গতানুগতিক পশ্চাৎপদ বেড়াজালের নিয়ম নীতির রক্ষাকবচ-এর কাছে।
সুমাইয়া এক উচ্চশিক্ষিত নারী। নিজের পছন্দে ঘর বাঁধে। পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও ভালবাসার মানুষটিকে আঁকড়ে ধরেছিলেন এই নারী। সমাজ সংসারের আটপৌরে নারী হয়ে জীবন অতিবাহিত করছিলেন সদ্যপ্রয়াত এই নারী। নিজের পেশাগত জীবন উপেক্ষা করেছিলেন শুধু সুখী হবার সামাজিক রক্ষাকবচ ছোয়ার এক অধীর সংকল্পে। কোনো বিসর্জনেও তার জীবন রক্ষা হয়নি। হয়ত নিয়তি বা সংস্কারহীন নীতি, বৈষম্যের আদি ব্যবস্থায় তার প্রাণ বলিদান হয়েছে। রবিঠাকুরের অনবদ্য রচনা শাস্তি -এর এক উদ্বৃতি-‘বউ গেলে বউ পাবি, কিন্ত ভাই গেলে ভাই পাবি না।’ প্রিয়জন হতে চেয়ে প্রিয়জনের সংকুলনহীনতায় আজ প্রাণের স্পন্দন স্তব্ধ হয়।
মহামারির এই চলমান দিনে প্রতিদিন আমরা মৃত্যুর তাজা সংবাদের সাক্ষী হচ্ছি আর মোট মৃতের সংখ্যা গুনছি। এই মহামারিকালেও ঠক ব্যবসা আমাদের রন্ধ্র জুড়ে রয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর কারসাজিতে ভুতুড়ে, মনগড়া করোনা রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। জীবন-মৃত্যুর এই সন্ধিক্ষণেও বিবেক, দায়বদ্ধতা সবই তুচ্ছার্থক অর্থকড়ির কাছে। শরৎচন্দ্রের বিলাসী গল্পে ন্যাড়া আজও লোক ঠকায়, ন্যাড়া আজও রোগ সারানোর ঔষুধ হিসেবে শিকড় বিক্রি করে। জহির রায়হানের তুলে ধরা সমাজের অসঙ্গতির কেরানি আজও লেফাফাদুরস্ত। মুগদা হাসপাতালের এক রোগী পালিয়ে যাবার অপরাধে চিকিৎসক শোকচ নোটিশ পায়। কোনো চিকিৎসক মাঝরাতে যখন দুধের শিশু ফেলে হাসপাতালে দায়িত্বরত, তা আমাদের অনেকাংশেরই মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ। এই সমাজে বেঁচে থাকাই স্বার্থকতা, তাই আমরা স্বার্থক; তাই রুদ্বশ্বাসে প্রতিধ্বনিত হয়- স্বার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে!
লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সংস্কারহীন মহলে দায়বদ্ধ নীতি

আপডেট সময় : ১০:২৬:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২১

ফারজানা কাশেমী : রক্ষণশীল সমাজে সংরক্ষণশীল নীতি অনেকাংশই প্রশ্নবিদ্ধ। উচ্চশিক্ষিত নারী যখন প্রাগৈতিহাসিক নিয়মের জালে নিজেকে আবদ্ধ করে তখনো সুরক্ষা নীতির বলয় তার জন্য বেস্টনী হয়না। প্রায় ছয় (৬) বছর আগের এক গবেষণার প্রতিবেদনে প্রতীয়মান হয় যে, ৩২% উচ্চশিক্ষিত নারী শিক্ষা জীবন সমাপ্ত হওয়ার পরেও পেশাগত জীবনে প্রবেশ করার সুযোগ গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করে শুধুমাত্র পারিবারিক, সামাজিক গতানুগতিক পশ্চাৎপদ বেড়াজালের নিয়ম নীতির রক্ষাকবচ-এর কাছে।
সুমাইয়া এক উচ্চশিক্ষিত নারী। নিজের পছন্দে ঘর বাঁধে। পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও ভালবাসার মানুষটিকে আঁকড়ে ধরেছিলেন এই নারী। সমাজ সংসারের আটপৌরে নারী হয়ে জীবন অতিবাহিত করছিলেন সদ্যপ্রয়াত এই নারী। নিজের পেশাগত জীবন উপেক্ষা করেছিলেন শুধু সুখী হবার সামাজিক রক্ষাকবচ ছোয়ার এক অধীর সংকল্পে। কোনো বিসর্জনেও তার জীবন রক্ষা হয়নি। হয়ত নিয়তি বা সংস্কারহীন নীতি, বৈষম্যের আদি ব্যবস্থায় তার প্রাণ বলিদান হয়েছে। রবিঠাকুরের অনবদ্য রচনা শাস্তি -এর এক উদ্বৃতি-‘বউ গেলে বউ পাবি, কিন্ত ভাই গেলে ভাই পাবি না।’ প্রিয়জন হতে চেয়ে প্রিয়জনের সংকুলনহীনতায় আজ প্রাণের স্পন্দন স্তব্ধ হয়।
মহামারির এই চলমান দিনে প্রতিদিন আমরা মৃত্যুর তাজা সংবাদের সাক্ষী হচ্ছি আর মোট মৃতের সংখ্যা গুনছি। এই মহামারিকালেও ঠক ব্যবসা আমাদের রন্ধ্র জুড়ে রয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর কারসাজিতে ভুতুড়ে, মনগড়া করোনা রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। জীবন-মৃত্যুর এই সন্ধিক্ষণেও বিবেক, দায়বদ্ধতা সবই তুচ্ছার্থক অর্থকড়ির কাছে। শরৎচন্দ্রের বিলাসী গল্পে ন্যাড়া আজও লোক ঠকায়, ন্যাড়া আজও রোগ সারানোর ঔষুধ হিসেবে শিকড় বিক্রি করে। জহির রায়হানের তুলে ধরা সমাজের অসঙ্গতির কেরানি আজও লেফাফাদুরস্ত। মুগদা হাসপাতালের এক রোগী পালিয়ে যাবার অপরাধে চিকিৎসক শোকচ নোটিশ পায়। কোনো চিকিৎসক মাঝরাতে যখন দুধের শিশু ফেলে হাসপাতালে দায়িত্বরত, তা আমাদের অনেকাংশেরই মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ। এই সমাজে বেঁচে থাকাই স্বার্থকতা, তাই আমরা স্বার্থক; তাই রুদ্বশ্বাসে প্রতিধ্বনিত হয়- স্বার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে!
লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ