নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সংস্কারকে সংসদের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
তিনি বলেন, এনসিপি মনে করে সংস্কারের ‘ম্যান্ডেট’ এ সরকারের হাতেই রয়েছে। আমরা যারা ঐকমত্য কমিশনে বসছি, জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছি। আমরা সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবার অধিকার রাখি। পরবর্তী সংসদের কাছে সংস্কারের কার্যভারকে ছেড়ে দেওয়ার আমরা পক্ষপাতী নই।
সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের দশম দিনের অধিবেশন শেষে এসব কথা বলেন তিনি। এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, “জুলাই সনদকে নিছক একটি দলিল হিসেবে উপস্থাপন করার যে চিন্তা অনেকের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তার বিপক্ষে অবস্থান করি। আমরা মনে করি যে জুলাই সনদের মধ্য দিয়ে যে মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা বাস্তবায়িত হবে, সেটা বাংলাদেশের সামনের রাজনীতিকে নির্ধারণ করবে। সেই কাঠামোকে কীভাবে বাস্তবে রূপান্তরিত করা যায়, রেকটিফিকেশনের পদ্ধতি কী হতে পারে, সেই ব্যাপারে যদি কেউ শুধু সংসদের উপর নির্ভর করতে চায় এবং কমিশন যদি সংসদের দিকেই তাদের আলোচনাকে অগ্রগতি করতে থাকে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আমরা মনে করব যে ঐকমত্যের আলোচনা অবশ্যই কার্যকর হবে না।
তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হলো অবশ্যই বাংলাদেশের নতুন কাঠামোকে বাস্তবায়ন করতে নতুন বন্দোবস্তকে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য কার্যকর করতে গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে সেখানকার আলাপ-আলোচনা তর্ক এবং নানা ধরনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন একটি সংবিধান প্রণয়ন করে সংস্কারের প্রস্তাবনাগুলোকে কার্যকর করতে হবে।
উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত স্থাপনে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হওয়ার কথা তুলে ধরে আখতার বলেন, যে উপজেলাগুলো জেলা সদরের কাছাকাছি, নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে এবং সেখানকার জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনা করে যোগাযোগ ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং মামলার চাপ বিবেচনা করে পর্যায়ক্রমে সেগুলোতে স্থায়ী অধস্তন আদালত স্থাপন করা যেতে পারে বলে মনে করে এনসিপি। চৌকি আদালতগুলোকে স্থায়ী আদালত করে সেখানকার অবকাঠামোর উন্নয়নের আহ্বান দলটি করে। অধস্তন আদালতের পুরো কার্যক্রমে পর্যাপ্ত বিচারক নিয়োগের প্রস্তাব করেছি।
বিভাগীয় পর্যায়ে হাই কোর্টের বেঞ্চ স্থাপনে ঐকমত্যের বিষয়ে আইনজীবীদের বিরোধিতা প্রসঙ্গে আখতার বলেন, ইতিপূর্বে ঢাকার বাইরে হাই কোর্টের বেঞ্চ স্থাপনের সময় গুটিকয়েক আইনজীবী বা বিচারপতিদের স্বার্থের কারণে জনকল্যাণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। আমরা দিন দশক আগের পরিস্থিতিতে নেই। নতুন বাংলাদেশে নতুনভাবে বাংলাদেশকে সাজানোর স্বপ্ন দেখছে। মানুষের দোরগোড়ায় বিচারের ব্যবস্থাপনা নিয়ে যেতে হবে। মানুষেরা সহজে বিচার প্রাপ্তি করতে পারবেন, এটা নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। আমরা মনে করি বাংলাদেশের আইনজীবীরা, বিচারপতিরা ব্যক্তিগত স্বার্থকে উপেক্ষা করে জনগণের স্বার্থের প্রতি তারা অবশ্যই মনোযোগী হবেন।
জরুরি অবস্থার বিষয়ে ১৪১ অনুচ্ছেদ সংশোধনের বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে বলেও তুলে ধরেন আখতার হোসেন। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জরুরি অবস্থার যাতে রাজনৈতিক অপব্যবহার করতে না পারে, সে ব্যাপারে নির্দেশনা উল্লেখ করা থাকে। আবার মানবাধিকার এবং নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন না করা হয়। সে বিষয়ে এখেনও ঐকমত্য হয়নি। জরুরি অবস্থার সংশোধনীর গাইডলাইন থাকা প্রয়োজন বলে মনে করে এনসিপি। জরুরি অবস্থার সময় কারও বিচারপ্রাপ্তির অধিকার কোনভাবেই ক্ষুন্ন না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। জরুরি অবস্থার সময় কোন মৌলিক অধিকার কার্যকর থাকবে তা নিয়ে আলোচনা হতে হবে।