ঢাকা ০৭:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

সংসার চলেনা বেকার ১০ হাজার শ্রমিকের

  • আপডেট সময় : ০১:২৩:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ অগাস্ট ২০২১
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে

পঞ্চগড় সংবাদদাতা : করোনার সংক্রমণের কারণে দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে পঞ্চগড়ের ছোট বড় অর্ধশতাধিক হস্তশিল্প কারখানা। এতে বিপাকে পড়েছেন এসব কারখানায় কাজ করা প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক। লকডাউনের শুরু থেকে সব কারখানা বন্ধ। এতে থমকে গেছে প্রাণচাঞ্চল্য। বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা। লোকসানে পড়েছেন কারখানা মালিকরা। সবমিলে তাদের ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সারা বছর তাঁত বস্ত্র ও পরচুলা বানিয়ে সংসার চালাতেন তারা। কিন্তু সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে করোনা। দেবীগঞ্জ উপজেলার তাঁত কারখানা মেসার্স টাচ ফ্যাশনের শ্রমিক লাভলী বেগম ও রেশমা শাহনাজ জানান, স্বামী-স্ত্রী মিলে কারখানায় কাজ করে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চলতো। দীর্ঘ দুই বছর ধরে কারখানা বন্ধ। কাজ নেই। ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে পারছি না। সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তাও পাইনি। গরু ছাগল সব বিক্রি করেছি। ধারদেনা করে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছি। একই কারখানার শ্রমিক সুরতজাল, আমিনুল ও আনছারুল জানান, কাজ করলে আয় হয়। কিন্তু করোনার কারণে কারখানা বন্ধ। হ্যান্ড টাচ কারখানার শ্রমিক কিয়ামউদ্দিন ও রোমানা জানান, করোনায় অসহায় মানুষকে সরকারিভাবে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা কিছুই পাইনি। খেয়ে না খেয়ে দিন চলছে। দেবীগঞ্জ উপজেলার তাঁত কারখানা মেসার্স টাচ ফ্যাশনের ব্যবস্থাপক মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন, আমার কারখানায় দুই শতাধিক শ্রমিক কাজ করতো। করোনার কারণে মহাজনরা বকেয়া টাকা দিচ্ছে না। কারখানায় প্রায় ৩০ লাখ টাকার তৈরি পোশাক ও কাঁচামাল পড়ে আছে। বিক্রি করতে পারছি না। কারখানাও চালু করতে পারছি না। ফলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে পারছি না। আমাদেরই চলতে কষ্ট হয়।
দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের রায়হান হেয়ার ইন্টারন্যাশনাল কারখানার সুপারভাইজার অনন্ত রায় বলেন, আমার পরচুলার কারখানায় তিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করতো। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে কারখানা বন্ধ। কারখানার পরচুলা চীনে যায়। করোনার কারণে বিদেশিরা আসতে পারছে না। উৎপাদন বন্ধ, ক্রেতা নেই। এ কারণে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে পারছি না। কারখানার মেশিন ও জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তাঁত কারখানা হ্যান্ড টাচের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী খান বলেন, করোনায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো কিনা জানি না। টাচ ফ্যাশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, করোনায় আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। হাতে কোনও টাকা নেই। পুঁজি ছাড়া প্রতিষ্ঠান চালু করা সম্ভব না। ঋণ প্রস্তাব নিয়ে কর্মসংস্থান ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে একাধিকবার ধরনা দিয়েছি। ঋণ প্রস্তাব ফেরত দিয়েছে তারা। কেউ ঋণ দেয়নি। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় নেই। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) পঞ্চগড়ের উপ-ব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ জোনায়েদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কারখানা মালিকদের তালিকা করে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সংসার চলেনা বেকার ১০ হাজার শ্রমিকের

আপডেট সময় : ০১:২৩:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ অগাস্ট ২০২১

পঞ্চগড় সংবাদদাতা : করোনার সংক্রমণের কারণে দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে পঞ্চগড়ের ছোট বড় অর্ধশতাধিক হস্তশিল্প কারখানা। এতে বিপাকে পড়েছেন এসব কারখানায় কাজ করা প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক। লকডাউনের শুরু থেকে সব কারখানা বন্ধ। এতে থমকে গেছে প্রাণচাঞ্চল্য। বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা। লোকসানে পড়েছেন কারখানা মালিকরা। সবমিলে তাদের ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সারা বছর তাঁত বস্ত্র ও পরচুলা বানিয়ে সংসার চালাতেন তারা। কিন্তু সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে করোনা। দেবীগঞ্জ উপজেলার তাঁত কারখানা মেসার্স টাচ ফ্যাশনের শ্রমিক লাভলী বেগম ও রেশমা শাহনাজ জানান, স্বামী-স্ত্রী মিলে কারখানায় কাজ করে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চলতো। দীর্ঘ দুই বছর ধরে কারখানা বন্ধ। কাজ নেই। ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে পারছি না। সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তাও পাইনি। গরু ছাগল সব বিক্রি করেছি। ধারদেনা করে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছি। একই কারখানার শ্রমিক সুরতজাল, আমিনুল ও আনছারুল জানান, কাজ করলে আয় হয়। কিন্তু করোনার কারণে কারখানা বন্ধ। হ্যান্ড টাচ কারখানার শ্রমিক কিয়ামউদ্দিন ও রোমানা জানান, করোনায় অসহায় মানুষকে সরকারিভাবে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা কিছুই পাইনি। খেয়ে না খেয়ে দিন চলছে। দেবীগঞ্জ উপজেলার তাঁত কারখানা মেসার্স টাচ ফ্যাশনের ব্যবস্থাপক মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন, আমার কারখানায় দুই শতাধিক শ্রমিক কাজ করতো। করোনার কারণে মহাজনরা বকেয়া টাকা দিচ্ছে না। কারখানায় প্রায় ৩০ লাখ টাকার তৈরি পোশাক ও কাঁচামাল পড়ে আছে। বিক্রি করতে পারছি না। কারখানাও চালু করতে পারছি না। ফলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে পারছি না। আমাদেরই চলতে কষ্ট হয়।
দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের রায়হান হেয়ার ইন্টারন্যাশনাল কারখানার সুপারভাইজার অনন্ত রায় বলেন, আমার পরচুলার কারখানায় তিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করতো। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে কারখানা বন্ধ। কারখানার পরচুলা চীনে যায়। করোনার কারণে বিদেশিরা আসতে পারছে না। উৎপাদন বন্ধ, ক্রেতা নেই। এ কারণে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে পারছি না। কারখানার মেশিন ও জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তাঁত কারখানা হ্যান্ড টাচের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী খান বলেন, করোনায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো কিনা জানি না। টাচ ফ্যাশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, করোনায় আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। হাতে কোনও টাকা নেই। পুঁজি ছাড়া প্রতিষ্ঠান চালু করা সম্ভব না। ঋণ প্রস্তাব নিয়ে কর্মসংস্থান ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে একাধিকবার ধরনা দিয়েছি। ঋণ প্রস্তাব ফেরত দিয়েছে তারা। কেউ ঋণ দেয়নি। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় নেই। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) পঞ্চগড়ের উপ-ব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ জোনায়েদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কারখানা মালিকদের তালিকা করে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।