ঢাকা ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

সংসার খরচ আরও বাড়লো

  • আপডেট সময় : ০২:৩৬:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মার্চ ২০২৩
  • ৭৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদ্যুৎ ব্যবহার করি খুব হিসাব করেই। তারপরও হাজার টাকার কমে হয় না। সামনে রমজান, গরমের মৌসুম। বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। কিন্তু সরকার যেভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে, তাতে কিছুদিন পর পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
একটি সংবাদসংস্থা সঙ্গে আলাপে এমন মন্তব্য করেন লালমাটিয়ার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী মনোয়ারা বেগম। এক মাসে দুই ধাপে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছে সরকার। যার প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক ব্যয়ে। কাজেই শুধু মনোয়ারা বেগমই নন, তার মতো অবস্থা রাজধানীর অধিকাংশ নি¤œ ও নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারের। যেমন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, দফায় দফায় সরকার যে বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে, একবারও কি সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করছে? বাজারে এখন সবকিছুর দাম বাড়তি। প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতেই সব টাকা চলে যাচ্ছে, বাড়তি বিদ্যুৎ বিলের বোঝা কীভাবে সামাল দেব?
পেশায় ব্যাংকার শামসুল আরেফিন পরিবার নিয়ে বসবাস করেন ধানমন্ডির সোবহানবাগে। তিনি বলেন, গত এক বছর ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়া। পাইপলাইনের গ্যাসের দাম বেড়েছে, এলপিজি গ্যাসের দাম বেড়েছে, সর্বশেষ বাড়ল বিদ্যুতের দাম। কিন্তু সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়েনি। অনেক কাটছাঁট করে চলার পরও হাতে টাকা থাকছে না। আর বিদ্যুতের দাম বাড়া মানে সবকিছুর দাম আবার বাড়বে। যা জনগণের ওপর চাপ ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি বলেন, নির্বাহী আদেশে প্রতি মাসে বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তার মানে সব মাসেই দাম বাড়বে। এ দফায় দাম বৃদ্ধির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পর আরেক দফা দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসবে। কাজেই দাম বৃদ্ধির এ সাইকেল সহসা থামছে না।
গত মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) নির্বাহী আদেশে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে সরকার। এ নিয়ে গত ১৪ বছরে ১২ বার এবং গত দুই মাসে তিনবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হলো। এমন একটি সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো, যখন মূল্যস্ফীতির প্রভাবে সাধারণ মানুষ দিশেহারা।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে আবাসিক খাতে বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ বাড়বে ১০ থেকে ২০ শতাংশ। সর্বশেষ মূল্যবৃদ্ধিতে সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ (৫০ ইউনিটের কম) ব্যবহারকারী গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ৪.১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪.৩৫ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যমান দর ৪.৬২ থেকে বাড়িয়ে ৪.৮৫ টাকা, দ্বিতীয় ধাপে ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যমান দর ৬.৩১ থেকে বাড়িয়ে ৬.৬৩ টাকা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যমান দর ৬.৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬.৯৫ টাকা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের বিদ্যমান দর ৬.৯৯ থেকে বাড়িয়ে ৭.৩৪ টাকা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যমান দর ১০.৯৬ থেকে বাড়িয়ে ১১.৫১ টাকা, সর্বশেষ ধাপ ৬০০ ইউনিটের ঊর্ধ্বে ব্যবহারকারীদের বিদ্যমান দর ১২.৬৩ থেকে বাড়িয়ে ১৩.২৬ টাকা করা হয়েছে।
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এক অদূরদর্শী পরিকল্পনায় চলছে। যার দায়ভার পড়ছে সাধারণ জনগণের ওপর। বিদ্যুতের এভাবে মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে। আগে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, গণশুনানি করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত। এখন নির্বাহী আদেশে সরকার সরাসরি সেটা করছে। সরকার কোনোরকম জবাবদিহিতা ছাড়া মূল্যবৃদ্ধি করে যাচ্ছে। যা মূল্যস্ফীতি আর জনগণের বোঝা দুটোই বাড়িয়ে চলেছে।
বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো খুব বেশি নয়: জানুয়ারি মাসের ধারাবাহিকতায় ফেব্রুয়ারিতেও নির্বাহী আদেশে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। এটি খুব বেশি নয় বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘ধাপে ধাপে বিদ্যুতের দাম বাড়ালে তা সহনীয় হয়। খুব বেশি চাপও পড়ে না।’ গতকাল বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলনকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেট ঘাটতি কমাতে হবে। আর বাজেটে ঘাটতি কমাতে হলে এটা (বিদ্যুতের দাম বাড়াতে) করতে হয়। ঘাটতি সহনীয় রাখতে হলে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করতে হবে। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়বে না।’ শামসুল আলম বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিতে বহু দিক থেকে চাপ আসতে পারে। আন্তর্জাতিক মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সংসার খরচ আরও বাড়লো

আপডেট সময় : ০২:৩৬:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মার্চ ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদ্যুৎ ব্যবহার করি খুব হিসাব করেই। তারপরও হাজার টাকার কমে হয় না। সামনে রমজান, গরমের মৌসুম। বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। কিন্তু সরকার যেভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে, তাতে কিছুদিন পর পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
একটি সংবাদসংস্থা সঙ্গে আলাপে এমন মন্তব্য করেন লালমাটিয়ার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী মনোয়ারা বেগম। এক মাসে দুই ধাপে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছে সরকার। যার প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক ব্যয়ে। কাজেই শুধু মনোয়ারা বেগমই নন, তার মতো অবস্থা রাজধানীর অধিকাংশ নি¤œ ও নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারের। যেমন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, দফায় দফায় সরকার যে বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে, একবারও কি সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করছে? বাজারে এখন সবকিছুর দাম বাড়তি। প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতেই সব টাকা চলে যাচ্ছে, বাড়তি বিদ্যুৎ বিলের বোঝা কীভাবে সামাল দেব?
পেশায় ব্যাংকার শামসুল আরেফিন পরিবার নিয়ে বসবাস করেন ধানমন্ডির সোবহানবাগে। তিনি বলেন, গত এক বছর ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়া। পাইপলাইনের গ্যাসের দাম বেড়েছে, এলপিজি গ্যাসের দাম বেড়েছে, সর্বশেষ বাড়ল বিদ্যুতের দাম। কিন্তু সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়েনি। অনেক কাটছাঁট করে চলার পরও হাতে টাকা থাকছে না। আর বিদ্যুতের দাম বাড়া মানে সবকিছুর দাম আবার বাড়বে। যা জনগণের ওপর চাপ ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি বলেন, নির্বাহী আদেশে প্রতি মাসে বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তার মানে সব মাসেই দাম বাড়বে। এ দফায় দাম বৃদ্ধির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পর আরেক দফা দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসবে। কাজেই দাম বৃদ্ধির এ সাইকেল সহসা থামছে না।
গত মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) নির্বাহী আদেশে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে সরকার। এ নিয়ে গত ১৪ বছরে ১২ বার এবং গত দুই মাসে তিনবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হলো। এমন একটি সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো, যখন মূল্যস্ফীতির প্রভাবে সাধারণ মানুষ দিশেহারা।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে আবাসিক খাতে বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ বাড়বে ১০ থেকে ২০ শতাংশ। সর্বশেষ মূল্যবৃদ্ধিতে সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ (৫০ ইউনিটের কম) ব্যবহারকারী গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ৪.১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪.৩৫ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যমান দর ৪.৬২ থেকে বাড়িয়ে ৪.৮৫ টাকা, দ্বিতীয় ধাপে ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যমান দর ৬.৩১ থেকে বাড়িয়ে ৬.৬৩ টাকা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যমান দর ৬.৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬.৯৫ টাকা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের বিদ্যমান দর ৬.৯৯ থেকে বাড়িয়ে ৭.৩৪ টাকা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যমান দর ১০.৯৬ থেকে বাড়িয়ে ১১.৫১ টাকা, সর্বশেষ ধাপ ৬০০ ইউনিটের ঊর্ধ্বে ব্যবহারকারীদের বিদ্যমান দর ১২.৬৩ থেকে বাড়িয়ে ১৩.২৬ টাকা করা হয়েছে।
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এক অদূরদর্শী পরিকল্পনায় চলছে। যার দায়ভার পড়ছে সাধারণ জনগণের ওপর। বিদ্যুতের এভাবে মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে। আগে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, গণশুনানি করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত। এখন নির্বাহী আদেশে সরকার সরাসরি সেটা করছে। সরকার কোনোরকম জবাবদিহিতা ছাড়া মূল্যবৃদ্ধি করে যাচ্ছে। যা মূল্যস্ফীতি আর জনগণের বোঝা দুটোই বাড়িয়ে চলেছে।
বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো খুব বেশি নয়: জানুয়ারি মাসের ধারাবাহিকতায় ফেব্রুয়ারিতেও নির্বাহী আদেশে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। এটি খুব বেশি নয় বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘ধাপে ধাপে বিদ্যুতের দাম বাড়ালে তা সহনীয় হয়। খুব বেশি চাপও পড়ে না।’ গতকাল বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলনকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেট ঘাটতি কমাতে হবে। আর বাজেটে ঘাটতি কমাতে হলে এটা (বিদ্যুতের দাম বাড়াতে) করতে হয়। ঘাটতি সহনীয় রাখতে হলে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করতে হবে। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব পড়বে না।’ শামসুল আলম বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিতে বহু দিক থেকে চাপ আসতে পারে। আন্তর্জাতিক মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।’