নিজস্ব প্রতিবেদক: ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলীয় প্রতীকসহ নিবন্ধন পুনর্বহাল করে গেজেট প্রকাশের পরদিন বুধবার (২৫ জুন) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে করে এই দাবি তুলে ধরেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ।
এছাড়া প্রবাসী ভোট, পিআর ভোট পদ্ধতি নিয়েও কমিশনের সঙ্গে আলোচনা সেরেছে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দল। বুধবার (২৫ জুন) সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক পুনর্বহালের পর এটি দলটির পক্ষ থেকে প্রথম কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক। আদালতের আদেশে জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক পুনর্বহাল করে আগেরদিন প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। রাজধানীর আগারগারঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে এ বৈঠকের পর আযাদ বলেন, আমাদের আজকের ইস্যু ছিল, সেটা হল লোকাল গভর্নমেন্ট ইলেকশন। আমরা বারবার দাবি করেছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, কেয়ারটেকার সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে ফর্মে সরকার থাকুক না কেন, নির্বাচনের আগে একটি সরকার আছে এবং সেই কিন্তু ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে এবং সব দল কিন্তু এভাবে একমত হয়েছে।
এই সরকারে অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন জলে তা অনেক বেশি ‘নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য’ হবে বলেও মন্তব্য করেছেন আযাদ।
তিনি বলেন, ন্যাশনাল ইলেকশন সামনে হবে। আমাদের দাবি, ন্যাশনাল ইলেকশনের আগে লোকাল গভমেন্ট ইলেকশন করা। এটা এবারের জন্য, ভবিষ্যতের জন্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেই ফর্মে নির্দলীয় সরকারে আসবে তার অধীনে করা। এ নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা আছে কী না জানতে চাইলে আযাদ বলেন, “আমরা আগেও বলেছি আমরা ইলেকশন কমিশন, সরকার সবকিছু আমরা অবজার্ভ করে চলেছি। সুতরাং এই জায়গায় আস্থা অনাস্থার বিষয়টা নিয়ে আমরা আবার মন্তব্য করছি না। আমরা অবজার্ভ করছি এবং এ পর্যন্ত যে জায়গায় সঠিক কাজ করেছে আমরা সেটা সঠিক বলব। কালোকে কালো, সাদাকে সাদা বলবো। যদি ব্যত্যয় ঘটে সে জায়গায় কথা বলতে হবে। এজন্য আমরা অবজার্ভ করছি। আমরা আশাবাদী উনারা ভবিষ্যতে জনস্থাকে সামনে রেখে এগিয়ে যাবে।
এদিনের বৈঠকে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে (পিআর) ভোটের বিষয়েও আলোচনা করেছে জামায়াত। আযাদ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পিআর পদ্ধতি হচ্ছে সুন্দর পদ্ধতি। ইসির কাছেও আমরা আনুষ্ঠানিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে এটা দাবি উত্থাপন করেছি। প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগের মধ্যে পোস্টাল ব্যালট ও অনলাইন পদ্ধতিতে ভোটের পক্ষে মতামতও তুলে ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আমাদের পক্ষ থেকে পোস্টাল ভোটার, অনলাইন ভোটার পদ্ধতি যেগুলো আছে এগুলো ভোট গ্রহণের জন্য পদ্ধতি হিসেবে নিতে পারেন।
নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে: আদালতের আদেশের পর জামায়াতে ইসলামীকে ফের রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত করেছে নির্বাচন কমিশন; সঙ্গে ফিরিয়ে দিয়েছে প্রতীক দাঁড়িপাল্লা। মঙ্গলবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ। এর অর্থ দলটি আবার নির্বাচন করার সুযোগ পেল। এ বিষয়ে ‘কেড়ে নেওয়া অধিকার ফিরে’ পাওয়া গেছে বলে মন্তব্য আযাদ বলেন, “প্রতীকসহ নিবন্ধন পুনর্বহাল করায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। অন্যায় অবিচার ধামাচাপা দিয়ে জোরপূর্বক রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ন্যায়কে চাপিয়ে রাখা যায় না। বিগত সরকারের আমলে ‘অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ও দলীয় প্রতীক কেড়ে নেওয়া হয়’ বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। আযাদ বলেন, চরম অন্যায় করা হয়েছিল। আমাদের অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিল। গতকালের গেজেট আমাদের সেই অধিকার আদালতের আদেশের মাধ্যমে ফিরে এসেছে এবং দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়েছে।
আদালতের আদেশের পর গেজেট প্রকাশে ‘গণাভ্যুত্থানের প্রত্যাশার প্রতিফলন হয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেছেন জামায়াতের এই নেতা। আমরা এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছি। এখন আগামী নির্বাচনে প্রতীক নিয়ে অংশ নেবে। জনগণের পছন্দের প্রতীক দাঁড়িপাল্লায় ভোট দেওয়ার যে বাধা ছিল এটা উঠে গিয়েছে এবং এটা আরেকটা নতুন দৃষ্টান্ত হয়েছে। আযাদের সঙ্গে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকারও নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত ছিলেন।