নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা বিল (সিএসএ)। পরে বিলটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে সংসদীয় কমিটিতে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রস্তাবিত আইনটি মঙ্গলবার সংসদে উপস্থাপন করেন। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিলটি উত্থাপনের আপত্তি করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম। কিন্তু সংসদ সদস্যদের কণ্ঠভোটে তা নাকচ হয়ে যায়। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা করে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে সংসদে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘রূপান্তর’ এবং ‘আধুনিকায়ন’ করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ করা হচ্ছে। এতে বিদ্যমান আইনের কিছু ধারা সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। গত ২৮ আগস্ট মন্ত্রিসভা সিএসএর চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদন করে।
হয়রানিমূলক মামলায় শাস্তির বিধান চায় বিএফইউজে
এদিকে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে কেউ মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা করলে তার (বাদী) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধানের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)। গতকাল মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে বিএফইউজের পক্ষে এ প্রস্তাব করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল। জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন বিষয়ে বিএফইউজের উপস্থাপনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় লিখিতভাবে এ প্রস্তাব করা হয়। সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিক সমাজের পক্ষে বিএফইউজের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ পড়ে শোনান মনজুরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মিসইউজ ও অ্যাবইউজ হয়েছে— এটা আইনমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন। অনেককে শুধু হয়রানি করার জন্যই মামলা করা হয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি আইন যাতে সেই একই পথে না হাঁটে, সেজন্য এ আইনে কয়েকটি ধারা বা উপধারা সংযোজন করার বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ আইনে কেউ মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা করলে তার (বাদীর) বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান থাকতে হবে। খসড়া আইনে ‘জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি’ গঠনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানে একজন সাংবাদিক বা গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ রাখার প্রস্তাব রাখছি। এতে আইনটি প্রয়োগের শুরুতেই অনেক ঝামেলা এড়ানো যাবে। জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিলে বিএফইউজের সুপারিশ অনুযায়ী একজন সাংবাদিক বা গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ রাখার প্রস্তাব করছি। এ সময় মনজুরুল আহসান বুলবুল আরও বলেন, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইনের কোনো ধারা মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় সংবিধানের বিধান, তথ্য অধিকার আইন ২০১৯ ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন, ২০১১-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় কিনা, তা আরও নিবিড়ভাবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার বক্তব্যে বিএফইউজের প্রস্তাবগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই সাংবাদিক সেজে অপরাধ করে। কিন্তু প্রকৃত সাংবাদিক এবং সাংবাদিক সেজে অপরাধ করাটা এক নয়। এর মধ্যে একটা বড় পার্থক্য আছে। সেই পার্থক্যটা যেন আমরা সবাই বুঝি, সেই অনুরোধ থাকবে। সাংবাদিক সমাজের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেন এ আইনটা (সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট) ভালোভাবে পরিচালনা করা যায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করলে বাদীর সাজা দেওয়ার বিধান রাখার ব্যাপারেও কাজ চলছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘মিথ্যা মামলা করলে বাদীকে যে উল্টো সাজা দেওয়ার ব্যাপারটা, সেটা নিয়েও কাজ করছি আমরা। এটার জন্য যা করা দরকার, তা নিয়ে আজকেই কথা শেষ করে ফেলবো। এটা আমি আপনাদের (সাংবাদিকদের) আশ্বস্ত করে গেলাম।’ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক। সংগঠনের মহাসচিব দীপ আজাদের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন— প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভূইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, বর্তমান সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন প্রমুখ।
সংসদে উঠল সাইবার নিরাপত্তা বিল
ট্যাগস :
সংসদে উঠল সাইবার নিরাপত্তা বিল
জনপ্রিয় সংবাদ


























