ঢাকা ০৪:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বক্তব্য ‘টুইস্ট’ করা হয়েছে, দাবি মোমেনের

  • আপডেট সময় : ০৯:৩০:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ অগাস্ট ২০২২
  • ৯০ বার পড়া হয়েছে

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : ‘বেহেশত’ মন্তব্যের জন্য বিপাকে পড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবার সমালোচনায় পড়েছেন ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বক্তব্যের জন্য; আর এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, তার কথাকে ‘টুইস্ট’ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের জেএম সেন হল মাঠে জন্মাষ্টমীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভারতে দেওয়া নিজের বক্তব্যের এমন ব্যাখ্যা দেন তিনি। এই অনুষ্ঠান চলার মধ্যেই অদূরে চেরাগী পাহাড় মোড়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘মিথ্যাচারের’ প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিল হয় ‘বিক্ষুব্ধ সনাতনী সমাজের’ ব্যানারে। তার নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যালের প্রসিকিউটার রানা দাশ গুপ্ত।
জেএম সেন হল মাঠের অনুষ্ঠানে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “একবছর আগে পূজার সময় কুমিল্লায় একটি দেবতার কাছে কোরআন শরিফ রেখে একটা ছবি তোলে। ওটা ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়ার পর কিছু মোল্লাগোষ্ঠী ওখানে আক্রমণ করে। আক্রমণ থামাতে গিয়ে পুলিশ গুলি করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে তখনও আমরা কিন্তু কুড়িগ্রামের কাহিনী জানতাম না।
“তখন আমাদের মন্ত্রণালয় যেসব কথা বলেছে, সত্যি কথা বলেছে। আমি শিক্ষক লোক, সত্য কথা বলি। শ্রীকৃষ্ণ সত্য কথাই বলতেন। আমরা বলেছি, তখন পর্যন্ত মোট ছয়জন লোক মারা যায়। এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, চারজন মুসলমান, দুজন হিন্দু। তবে আমরা একজন লোকও মারা যাক, সেটা চাই না। কিন্তু উসকানি দিলে…।”
মোমেন বলেন, “কিন্তু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে, বিভিন্ন প্রচারণায় বের হল যে কয়েকশত নারী নির্যাতিত হয়েছে, ধর্ষিত হয়েছে। অথচ একজন নারীও ধর্ষিত হয়নি। আপনারা কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারেন, কুমিল্লার সময় কোনো নারী রেইপ হয়েছে। নোৃ সেটি আমরা বলেছি, সত্য কথা বলেছি।
“এখানে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে অনেকে গল্প বলেছে, এটা খুবই দুঃখজনক। অনেকে আমাকে ভারতের দালাল বলে, কারণ অনেক কিছুই হয়, আমি স্ট্রং কোনো স্টেটমেন্ট দিই না। কিন্তু আমারও তো একটি সংসদীয় আসন আছে। আমি যেটা করেছি, বিবেকের তাড়নায় করেছি। কিন্তু এটাকে ‘ফুলিয়ে-ফাপিয়ে, টুইস্ট’ করে আপনাদের কাছে বলা হয়েছে।“ তিনি বলেন, “১৭-১৮টা বাড়ি ভেঙ্গে ফেলেছিল। সরকার সবগুলো বাড়ি মেরামত করে দিয়েছে, তাদের আর্থিক সহায়তাও দিয়েছে। আমরা এমন কাজ করব না, ফুলিয়ে ফাপিয়ে এমন উসকানি দেব না যাতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে একটি প্রবাদবাক্য আছে। চিলে কান নিয়ে গেছে। কান আছে কি না সেটা ধরে দেখে না, কান নিয়ে গেছে বলে চিৎকার শুরু করে। আমাদের এখানেও কিছুসংখ্যক লোক এই ধরনের অবস্থানে আছে। “আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে। সেজন্য শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা অনুরোধ করেছি।”
এখন থেকে ‘সাবধান’ হবেন মোমেন : ৭৫’র ১৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ের মতো দেশে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। “১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংস খুনের আগে কত বাহানা আসল। গাজী সাহেব নাকি সব কম্বল চুরি করেছে। বঙ্গবন্ধুর পরিবার নাকি ব্যাংক লুট করেছে। জাল পরিয়ে ছবি দিয়ে বলা হল যে দেশ নাকি বাসন্তীর মতো হয়ে গেছে। এভাবে মিথ্যা প্রচারণা ছড়িয়ে একটি পরিস্থিতি তৈরি করে তারপর বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। “এখনও আবার সেই ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন ধরনের লোক দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা শুরু করেছে, উদ্দেশ্য অস্থিতিশীলতা। এটা মনে রাখতে হবে।” কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুকুমার চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি চন্দন তালুকদার, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক এস কে শিকদার, চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি দুলাল চন্দ্র দে, সাধারণ সম্পাদক শংকর সেন গুপ্ত।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বক্তব্য ‘টুইস্ট’ করা হয়েছে, দাবি মোমেনের

আপডেট সময় : ০৯:৩০:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ অগাস্ট ২০২২

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : ‘বেহেশত’ মন্তব্যের জন্য বিপাকে পড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবার সমালোচনায় পড়েছেন ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বক্তব্যের জন্য; আর এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, তার কথাকে ‘টুইস্ট’ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের জেএম সেন হল মাঠে জন্মাষ্টমীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভারতে দেওয়া নিজের বক্তব্যের এমন ব্যাখ্যা দেন তিনি। এই অনুষ্ঠান চলার মধ্যেই অদূরে চেরাগী পাহাড় মোড়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘মিথ্যাচারের’ প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিল হয় ‘বিক্ষুব্ধ সনাতনী সমাজের’ ব্যানারে। তার নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যালের প্রসিকিউটার রানা দাশ গুপ্ত।
জেএম সেন হল মাঠের অনুষ্ঠানে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “একবছর আগে পূজার সময় কুমিল্লায় একটি দেবতার কাছে কোরআন শরিফ রেখে একটা ছবি তোলে। ওটা ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়ার পর কিছু মোল্লাগোষ্ঠী ওখানে আক্রমণ করে। আক্রমণ থামাতে গিয়ে পুলিশ গুলি করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে তখনও আমরা কিন্তু কুড়িগ্রামের কাহিনী জানতাম না।
“তখন আমাদের মন্ত্রণালয় যেসব কথা বলেছে, সত্যি কথা বলেছে। আমি শিক্ষক লোক, সত্য কথা বলি। শ্রীকৃষ্ণ সত্য কথাই বলতেন। আমরা বলেছি, তখন পর্যন্ত মোট ছয়জন লোক মারা যায়। এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, চারজন মুসলমান, দুজন হিন্দু। তবে আমরা একজন লোকও মারা যাক, সেটা চাই না। কিন্তু উসকানি দিলে…।”
মোমেন বলেন, “কিন্তু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে, বিভিন্ন প্রচারণায় বের হল যে কয়েকশত নারী নির্যাতিত হয়েছে, ধর্ষিত হয়েছে। অথচ একজন নারীও ধর্ষিত হয়নি। আপনারা কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারেন, কুমিল্লার সময় কোনো নারী রেইপ হয়েছে। নোৃ সেটি আমরা বলেছি, সত্য কথা বলেছি।
“এখানে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে অনেকে গল্প বলেছে, এটা খুবই দুঃখজনক। অনেকে আমাকে ভারতের দালাল বলে, কারণ অনেক কিছুই হয়, আমি স্ট্রং কোনো স্টেটমেন্ট দিই না। কিন্তু আমারও তো একটি সংসদীয় আসন আছে। আমি যেটা করেছি, বিবেকের তাড়নায় করেছি। কিন্তু এটাকে ‘ফুলিয়ে-ফাপিয়ে, টুইস্ট’ করে আপনাদের কাছে বলা হয়েছে।“ তিনি বলেন, “১৭-১৮টা বাড়ি ভেঙ্গে ফেলেছিল। সরকার সবগুলো বাড়ি মেরামত করে দিয়েছে, তাদের আর্থিক সহায়তাও দিয়েছে। আমরা এমন কাজ করব না, ফুলিয়ে ফাপিয়ে এমন উসকানি দেব না যাতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে একটি প্রবাদবাক্য আছে। চিলে কান নিয়ে গেছে। কান আছে কি না সেটা ধরে দেখে না, কান নিয়ে গেছে বলে চিৎকার শুরু করে। আমাদের এখানেও কিছুসংখ্যক লোক এই ধরনের অবস্থানে আছে। “আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে। সেজন্য শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা অনুরোধ করেছি।”
এখন থেকে ‘সাবধান’ হবেন মোমেন : ৭৫’র ১৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ের মতো দেশে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। “১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংস খুনের আগে কত বাহানা আসল। গাজী সাহেব নাকি সব কম্বল চুরি করেছে। বঙ্গবন্ধুর পরিবার নাকি ব্যাংক লুট করেছে। জাল পরিয়ে ছবি দিয়ে বলা হল যে দেশ নাকি বাসন্তীর মতো হয়ে গেছে। এভাবে মিথ্যা প্রচারণা ছড়িয়ে একটি পরিস্থিতি তৈরি করে তারপর বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। “এখনও আবার সেই ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন ধরনের লোক দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা শুরু করেছে, উদ্দেশ্য অস্থিতিশীলতা। এটা মনে রাখতে হবে।” কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুকুমার চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি চন্দন তালুকদার, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক এস কে শিকদার, চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি দুলাল চন্দ্র দে, সাধারণ সম্পাদক শংকর সেন গুপ্ত।