শিশির ভট্টাচার্য্য : চল্লিশের দশক থেকেই উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক পরিষ্করণ বা সাফাই শুরু হয়েছিল। আফগানিস্তানে-পাকিস্তানে এই পরিষ্করণ প্রায় শতভাগ সম্পূর্ণ হয়েছে।
জাতিরাষ্ট্রে সংখ্যালঘুরা সাধারণত ভালো থাকার কথা নয়, ভারতেও তারা ভালো নেই, সেটা নিজের দোষে, নাকি সংখ্যাগুরুর দোষে, সে প্রশ্ন ভিন্ন, কিন্তু ভারতে সাম্প্রদায়িক পরিষ্করণ হচ্ছে, এমন দাবি যদি কেউ করেও থাকেন, তার পিছনে পরিসংখ্যানের অন্তত সমর্থন নেই।
পূর্ববঙ্গে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু পরিষ্করণ প্রকল্প পুরোদমে চলমান। প্রকল্পের সাফল্য প্রশ্নাতীত। পুরো পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমল জুড়ে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। সরকার এই হামলার হোতাদের কাউকে কাউকে গ্রেপ্তার করে বটে, কিন্তু হামলার তদন্ত কখনওই শেষ হয় না, বিচারতো দূর কি বাত। বিচারতো করেই না, নিরপেক্ষ তদন্ত হোক, সেটাও সরকার চায় না!
বিচারবিভাগ স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে চাইলে সরকার সে তদন্ত বন্ধ করার আবেদন করে এই অজুহাতে যে পুলিশতো তদন্ত করছেই। অনুক্ত কিন্তু বোধগম্য কারণে বিচার বিভাগে সে আবেদন গ্রাহ্যও হয়, যেমনটা হয়েছে গত দুর্গাপূজায় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা-হত্যা-সম্পত্তি ধ্বংসের বিচার বিভাগীয় তদন্তের ক্ষেত্রে।
পুলিশ কী তদন্ত করছে, সে তারাই জানে। হেফাজতি মানুষের বৌয়ের ফোনালাপ জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়, কিন্তু জনগণ কখনওই জানতে পারে না, সংখ্যালঘু পাড়ায় হামলার কলকাঠি কারা নাড়ে। তথ্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মুহূর্মুহূ প্রয়োগ হয়ে চলেছে কারণে অকারণে, তথ্য অধিকার আইনের খবর নেই। গত সাত দশকে সংখ্যালঘুর উপর যত হামলা হয়েছে, তার না হয়েছে কোনো তদন্ত, না হয়েছে কোনো বিচার, কোনও একটি হামলা নিয়ে না হয়েছে কোনও গবেষণা! বাংলাদেশের বিদ্যালয়গুলোর সমাজবিজ্ঞান অনুষদে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার বিষয়ে কোনও গবেষণা কেন হয় না, কিংবা হলেও সেই গবেষণা কেন জনসমক্ষে আসে না?
সংখ্যালঘুর জানমালের উপর হামলার জন্য, সে ভারতেই হোক কিংবা বাংলাদেশে, সাধারণত ধর্মান্ধদের দায়ী করা হয়। বলা হয়, আশির দশকের পর থেকে প্রথমত, মাদ্রাসার পশ্চাদপদ শিক্ষা, দ্বিতীয়ত, ধর্মগুরুদের সংখ্যালঘু-বিদ্বেষী ওয়াজ মাহফিল এবং তৃতীয়ত, সামাজিক মিডিয়ায় এইসব ওয়াজের পুনঃপ্রচারের ফলে উপমহাদেশের বেশির ভাগ মানুষ নাকি ধর্মান্ধ হয়ে গেছে।
ধর্মান্ধতা মানে কিন্তু নিছক নিজের ধর্মকে অন্ধভাবে ভালোবাসা নয়। একজন ধর্মান্ধ নিজের ধর্মের মহত্বের বিষয়ে এতটাই নিশ্চিত এবং অন্ধ হয়ে যায় যে অন্য ধর্মকে সে হীন মনে করে, অন্য ধর্মের অনুসারীদের মনে করে মনুষ্যেতর। সে আর বিশ্বাস করতে চায় না পদ্ধতি যাই হোক না কেন, সব ধর্মেই তথাকথিত সৃষ্টিকর্তার আরাধনাই করা হয় এবং সব ধর্মের মানুষ সেই এক সৃষ্টিকর্তারই সৃষ্টি। ধর্মান্ধের কাছে অন্য ধর্মের অনুসারীরা তেলাপোকা, ছাড়পোকা কিংবা উইপোকার মতো, যাকে টিপে মেরে ফেললে কিংবা ঢিবিতে কীটনাশক বা দাহ্য কেরোসিন ঢেলে দিয়ে গুষ্ঠিশুদ্ধ মেরে ফেললে তেমন কিছু যায় আসে না, পাপ হওয়ারতো প্রশ্নই নেই। তেলাপোকা মারার জন্য সৃষ্টিকর্তা কখন কার বেহেস্তের টিকেট বাতিল করেছে? চল্লিশের দশকে নাৎসি জার্মানরা আইনস্টাইন বা ওয়াল্টার বেঞ্জামিনের মতো ইহুদী প-িতকেও তেলাপোকার অধম মনে করতো।
অন্য জনগোষ্ঠীর প্রতি ঘৃণা থাকলেই সেই জনগোষ্ঠীকে ঝাড়েবংশে হাপিশ করে দেওয়া সম্ভব হয় না। কোনো একটি রাজনৈতিক দলের অপরিহার্য সমর্থন লাগে। জার্মান জনগণের মনে ইহুদীবিদ্বেষের কারণে নাৎসি রাজনীতির সৃষ্টি হয়েছিল, কিংবা নাৎসি রাজনীতি সৃষ্টি হবার কারণে জার্মান মনের সুপ্ত ইহুদী বিদ্বেষ চাড়া দিয়ে উঠেছিল- এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা ‘ডিম আগে না মুরগি?’- এর মতোই কঠিন একটি প্রশ্ন। তবে কোনো সন্দেহ নেই যে রাজনীতিকেরা এ ধরনের জাতি-ধর্ম-বর্ণ বিদ্বেষকে পুঁজি করে ক্ষমতা-দখল করা কিংবা ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করে।
বলা হয়ে থাকে, ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ রীতি অনুসরণ করে ইংরেজ হিন্দু-মুসলিমের ঘৃণাকে উসকে দিয়েছে বা ব্যবহার করেছে। যত দোষ ইংরেজ ঘোষ। কিন্তু উপমহাদেশে ইংরেজ আগমনের পূর্বেও হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা-হামলা কমবেশি হয়েছে। গত হাজার বছরে তাদের পরস্পরের প্রতি ঘৃণা আর অবজ্ঞা যেমন ছিল, তেমনি উভয়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানও বিরল ছিল না। দাঙ্গাগুলো যদি ঘৃণা আর অবজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ হয়ে থাকে, সুফিবাদ, মাজার, গাজীর গান, সত্যপীরের পূজা এবং অতি সম্প্রতি পহেলা বৈশাখ, একুশে ফেব্রুয়ারি ইত্যাদি হিন্দু-মুসলিমের সংশ্লেষের প্রমাণ।
চল্লিশের দশকে এই ঘৃণা মহাদাঙ্গায় রূপান্তরিত হওয়া কিংবা পুরো পাকিস্তান আমল জুড়ে পূর্ববঙ্গে দাঙ্গা হওয়া কিংবা বাংলাদেশে কদিন পর পরই তুচ্ছ অজুহাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলাকে ইংরেজদের অপকর্ম বললে ভুল বলা হবে। একান্ত নিজের স্বার্থে এই সব দাঙ্গার আয়োজন এবং অর্থায়ন করেছিল এবং এখনও করে চলেছে এদেশীয় রাজনীতিকেরাই। ১৯৪৭ এর দেশভাগের মূলে ধর্ম অজুহাত মাত্র ছিল, মহল কিংবা ব্যক্তিবিশেষের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা, স্বার্থসিদ্ধিই ছিল দেশভাগের মূল কারণ। রাজনীতিকেরা বুঝে-শুনে, আঁটঘাট বেঁধে ভারতবর্ষে আগুন লাগিয়েছিল এবং সাধারণ মানুষ বরাবরের মতো সেই আগুনে পুড়ে মরেছিল, অধ্যাবধি মরছে।
মানুষের চিন্তা ও আচরণে ধর্মান্ধতা বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা আমরা আসলে জানি না, কারণ এই বিষয়ে পূর্ববর্তী কোনও সময়ের সঙ্গে বর্তমান সময়ের তুলনামূলক কোনও গবেষণা নেই। আমরা যা জানি, তা হচ্ছে, শুক্রবারে নামাজের পর সংখ্যালঘু পাড়ায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের জন্য ধর্মান্ধতার অনুভূতি যথেষ্ট নয়। খুনোখুনি এবং লুটপাট করার জন্যে শ দুয়েক লোক এবং বাড়িঘর পুড়ে ছাই করতে প্রয়োজনীয় দাহ্যপদার্থ জোগাড় করার একটা প্রস্তুতি এবং খরচও আছে। ঘটনা ঘটে যাবার পর পুলিশ, প্রশাসন আর মিডিয়াকে সামাল দেবার একটা প্রস্তুতিও লাগে।
এমন একটি প্রস্তুতি একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীই শুধু নিতে পারে! সূর্যসেন-প্রীতিলতাদের মতো একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর পক্ষে এমন প্রস্তুতি নেওয়া অসম্ভব। নিবরাজদের মতো বিপথগামী একটি তরুণ গোষ্ঠী একটি রেস্টুরেন্টে হামলা করে খান দশেক লোকের গলা কাটতে পারে, কিন্তু একটি এলাকার হামলা করার সাহস তারা করবে না। সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ এবং হামলা দুটি ভিন্ন রণকৌশল। সুইসাইড বোমাবাজ এবং সংখ্যালঘু পাড়ায় হামলার আয়োজকদের চরিত্র ও উদ্দেশ্য এক নয়।
উধোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে। সবাই একবাক্যে বলছে, বাঙালি ধর্মান্ধ হয়ে গেছে, ধর্মান্ধরাই সংখ্যালঘু পাড়ায় হামলা করছে। সব দেখেশুনে রাজনীতিবিদেরা আড়ালে থেকে খুশিতে বগল বাজাচ্ছে, কারণ ধর্মান্ধতার কারণে হামলা হচ্ছে বললে দোষটা আর তাদের ঘাড়ে চাপছে না। যেহেতু ওয়াজ মাহফিলে ঘৃণা ছড়ানোর কারণে ধর্মান্ধতা এবং সংখ্যালঘুবিদ্বেষ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সরকার সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করে না, কারণ অস্ত্র যত শক্তিশালী হবে, ততই উত্তম। এমন কোন পাগল শিকারী আছে যে কিনা নিজের বন্দুকের নাটবল্টু খুলে নেবে?
ধর্মান্ধতার তলোয়ার দিয়ে সংখ্যালঘুর উপর আক্রমণ হলেও তলোয়ারের হাতল ধরে আছে রাজনীতি। বেচারা ধর্মের কাঁধে দোষ চাপিয়ে স্থানীয় রাজনীতিবিদেরা সাধু সাজতে চায় সাধারণ মানুষ এমনকি বুদ্ধিজীবীদেরও কত সহজে বোকা বানানো যাচ্ছে, যারা কিনা রাজনীতিবিদ নয়, ধর্মান্ধদেরই দোষ দিচ্ছে। এর ফলে ক্ষতিটা হচ্ছে এই যে হামলার আসল হোতা লোকচক্ষুর অগোচরে থেকে যাচ্ছে এবং হামলার কারণও অজানা থেকে যাচ্ছে!
হত্যা, সন্ত্রাস এবং অস্থিরতা সৃষ্টির জন্যে রাজনীতিবিদেরা যে পিছনে বসে কলকাঠি নাড়ছে, তার দুটি প্রমাণ দিই। এত বড় ভারতে, শুধু জয়পুর, যেখানে কংগ্রেস দল ক্ষমতায়, সেখানে কেন দর্জি কানহাইয়া লাল মারা গেল? আম আদমি পার্টি যেখানে ক্ষমতায়, সেই দিল্লীতে কেন অবৈধ দখলের দেয়াল ভাঙা হচ্ছে? ভারতের বাকি জায়গায়, বিজেপি যেখানে ক্ষমতায়, সেখানে কি অবৈধ দখল নেই?
পঞ্চাশের দশকে আমাদের চট্টগ্রামের কুমিরা গ্রামের হিন্দুপাড়ায় হামলার যারা কুশীলব ছিলেন, তারা পরবর্তিকালে এলাকায় শ্রদ্ধেয়-মান্যগণ্য হয়েছিলেন। এরা প্রত্যেকে ছিলেন মুসলিম লীগের কর্মী এবং দোর্দ-প্রতাপ মুসলিম লীগ তখন পাকিস্তানের ক্ষমতায়। কে তাদের বাধা দেবে? হামলার কারণে গ্রামে ধীরে ধীরে হিন্দু পাড়াগুলো খালি হয়ে গিয়েছিল এবং মুসলিমরা, তাদের মধ্যে ধর্মান্ধ এবং লিবারেল দুই কিসিমেরই আছে, পরিত্যক্ত বাড়িগুলো নামমাত্র মূল্যে কিনে নিয়েছিল। গত সাত দশকে এলাকার জনবিন্যাস দেখলেই ব্যাপারটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে। পুলিশ তখনও নীরব দর্শক ছিল, আজও আছে! তখনও লোকে বলেছে, সরকারি দলের উদ্যোগে-ইন্ধনে সংখ্যালঘুর উপর হামলা হয়, এখনও বলে! যা রটে, তার কিছুটাতো বটে।
বাবরি মসজিদ ভাঙার পর এরশাদ নিজের রাজনৈতিক দূরভিসন্ধির কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা করিয়েছিল বাংলাদেশের সর্বত্র এবং নোয়াখালিতে। বেশ কিছু হিন্দু হতাহত, হিন্দু নারী ধর্ষিতা এবং হিন্দুবাড়ি পুড়ে ছাই হবার পর বিশ্ববেহায়া নোয়াখালিতে গিয়ে শান্তির আহ্বান জানিয়ে নিজেকে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তুলনা করেছিল। বিএনপি দ্বিতীয় বার নির্বাচনে জিতে হিন্দুদের উপর হামলা করে কয়েক সপ্তাহব্যাপী বিজয়োৎসব করেছিল। আর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত হামলার রেকর্ড অন্য কোনো সরকার ভাঙতে পারবে বলেতো মনে হয় না।
যে সরকার পদ্মাসেতু করে ফেলতে পারে, সেই একই সরকার সংখ্যালঘু নিপীড়ণ থামাতে পারে না- এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সরকার কি চাইছে না বলেই পারছে না? ভাব দেখে মনে হচ্ছে, সরকার কিংবা সরকারের একটি বিশেষ গোপন মহল সংখ্যালঘু নিষ্কাশনের এক বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। জনগণের মানসিকতা যেমন নেতাতে প্রতিফলিত হয়, তেমনি নেতার চিন্তাভাবনার আছরও জনগণের উপর পড়ে বৈকি। গত পনেরো বছরে দেশের জনগণ ও দেশের পরিবেশ অধিকতর মৌলবাদী হয়ে উঠেছে- সরকারের অনিচ্ছায় এবং অজান্তে এটা ঘটতেই পারে না। সেই মহলটির প্রকৃত উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয়, তবে প্রক্রিয়া স্পষ্ট। তারা হয়তো প্রমাণ করতে চাইছে, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে সক্ষম একমাত্র তারাই। অন্য দল ক্ষমতায় আসলে সংখ্যালঘুদের অবস্থা কঠিনতর হবে। নির্বাচন যত নিকটতর হয়, সংখ্যালঘুর উপর হামলার সংখ্যা ও পৌনপুনিকতা আনুপাতিক হারে বাড়তে থাকে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর উপর্যুপরি হামলা সত্বেও গত সাত দশকে কোনো বিচারপতিকে কখনও দেখা গেলো না সুয়োমোটোর জোরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা এলাকার পুলিশ প্রধান বা জেলাপ্রশাসককে তলব করতে। আমরা কখনও জানতে পারিনি, হামলা কেন হয়, কারা এর পরিকল্পনা করে, ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে কারা থাকে, কত খরচ হয় একেকটি হামলায়? কত কম খরচে, কম হ্যাপায় বাংলাদেশে একটি হামলা করা যায়? হামলা-দাঙ্গার খরচ পশ্চিমবঙ্গ কিংবা উত্তর ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে কম নাকি বেশি? প্রতিটি হামলার কী প্রভাব পড়ে এলাকার জনবিন্যাসে? হামলায় সংখ্যালঘুদের কতটুকু মনোবৈকল্য ঘটে? দেশের সম্পদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়? দেশের ভবিষ্যতের উপর একেকটি হামলার কী প্রভাব পড়ে?
মানুষ আগের তুলনায় ধর্মান্ধ হয়ে গেছে, কথাটা সত্য হতেও পারে। কিন্তু এর চেয়েও বড় সত্য হচ্ছে, রাজনীতিবিদেরা আগের চেয়ে নোংরা হয়ে গেছে। কিংবা প্লেটো যেমনটা বলেছেন, রাজনীতিবিদেরা সব সময়ই নোংরাই ছিল, আমরাই জনগণই বোকার মতো বেহুদা ‘শোনার বাংলা’ সিনড্রোমে ভুগছি, যে সিনড্রোমের অন্যতম উপসর্গ হচ্ছে ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম!’ ডাহা মিথ্যা কথা। সাধারণ মানুষের জীবন আগেও দুর্বিসহ ছিল, এখন দুর্বিসহতর।
মানব ইতিহাসে কোনো বিশ্বাস আজ পর্যন্ত সত্য বলে প্রমাণিত হয়নি। মানব সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে ধর্মের প্রয়োজন ছিল, হয়তো এখনও আছে। প্রতিটি ধর্ম একেকটি রূপকথা এবং অন্ধ বিশ্বাসের কারণে ধর্মের অনুসারীরা কমবেশি শিশুও বটে। ‘আমার পুতুলই সেরা’ বলে শক্তিমান কিংবা দলে ভারি শিশুরা দুর্বল এবং সংখ্যালঘু শিশুকে আক্রমণ করছে বটে, কিন্তু পিছন থেকে ক্ষেপিয়ে তুলে তাদের লেলিয়ে দিচ্ছে (স্থানীয়?) রাজনীতিকেরাই, নিজেদের হীন স্বার্থে। ধর্মান্ধতা অবশ্যই একটি অযৌক্তিক এবং ক্ষতিকর প্রবণতা, কিন্তু ধর্মান্ধতার যত দোষই থাক, ধর্মান্ধতা সম্ভবত সংখ্যালঘুদের উপর হামলার একমাত্র কারণ নয়। নোংরা রাজনীতিই এই সব হামলার প্রধান অনুঘটক।
লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কলামিস্ট।