ঢাকা ০৭:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

সংকটে নিজস্ব জ্বালানিতে জোর

  • আপডেট সময় : ০২:৫৩:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই ২০২২
  • ৮৬ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : বৈশ্বিক সংকটে দেশীয় জ্বালানি অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জোর দিয়েছে সরকার। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, এতদিন কয়লা তোলা নিয়ে সরকারের যে নির্দেশনা ছিল এখন সেটায় পরিবর্তন এসেছে। বড়পুকুরিয়া ছাড়া অন্য কোথাও থেকে কয়লা তোলা যায় কিনা তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। নতুন করে আরও ৪৬টি গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খননের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
ইতিপূর্বে আমদানি করা জ্বালানিতেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু ইউক্রেন-রশিয়া সংকটে জ্বালানি পরিস্থিতির গতিপ্রকৃতি বদলে যায়। এতে এশিয়া অঞ্চলের জ্বালানিতে ভাগ বসায় ইউরোপ। যে কারণে জ্বালানি প্রাপ্তিতে তৈরি হয়েছে প্রতিযোগিতা। ইউরোপের সঙ্গে যে দৌড়ে অনেকেই পেরে উঠছে না। ২০১০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে মাস্টারপ্ল্যান করেছিল বাংলাদেশ, সেখানে মোট উৎপাদনের ৫০ ভাগ কয়লা থেকে করার কথা বলা হয়েছিল। পরে ফসলি জমি নষ্ট করে কয়লা উত্তোলন না করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু এখন পরিস্থিতির কারণে আগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, বড়পুকুরিয়া ছাড়াও অন্য জায়গা থেকে কয়লা তোলা যায় কিনা তা নিয়ে কাজ করছি। বড়পুকুরিয়া থেকে আরও ছয় বছর কয়লা তোলা হবে। এছাড়া দীঘিপাড়া কয়লাখনির কয়লা তোলা নিয়েও কাজ করছি। গ্যাসের অনুসন্ধানে ৪৬টি কূপ খননের পরিকল্পনা করেছি। নাজমুল আহসান বলেন, আমাদের রিগগুলোর মধ্যে একটি শ্রীকাইলে কাজ করছে, একটি বিয়ানিবাজারে যাবে, আরেকটি যাবে শরীয়তপুরে। এই রিগ যেতেও কিছুটা সময় লাগে। একটা কথা পরিষ্কার করে বলা ভালো— আমরা কাজ করছি। যারা সমালোচনা করছেন তাদের অনেকেই একসময় এই পেট্রোবাংলায় কাজ করেছেন। সেই সময় তারা কেন কাজগুলো করেননি, সেটার সদুত্তর তারা দিতে পারবেন না।
বিদ্যুৎ উৎপাদন মহাপরিকল্পনায় ২০৪০ সালে দেশের মোট ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা দেখানো হয়েছে। বর্তমানের তুলনায় এই পরিমাণ তিনগুণের বেশি। আগামী ১৮ বছরে দেশের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে আরও ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন পড়বে। এক্ষেত্রে দেশে জ্বালানি বহুমুখীকরণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে কয়লা ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আবার নতুন চিন্তা করা হচ্ছে। দেশীয় জ্বালানির পাশাপাশি এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে সরকার। সরকারের তরফ থেকে সম্প্রতি এক বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জোর দিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী ওই বৈঠকে বলেছেন আমাদের অবশ্যই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। এজন্য সরকারি কোম্পানিগুলোকে যে লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন তিনি। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে দেশে সৌরবিদ্যুৎ থেকে দিনে গড়ে সাড়ে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব। এই সময়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করা গেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে। এতে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানিতেও চাপ সৃষ্টি হবে না। এছাড়া, দেশে বড় আকারের বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, কক্সবাজারের খুরুশকূলে তৈরি হচ্ছে দেশের বৃহত্তম বায়ু-বিদ্যুৎ প্রকল্প। গত ৩১ মার্চ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা প্রকল্পটির কাজ ইতোমধ্যে ৪০ ভাগ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রপথে চীন থেকে এসে পৌঁছেছে প্রকল্পের সরঞ্জাম। আগামী বছরের শুরুর দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে আসবে। জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এছাড়া, কক্সবাজারের ইনানীতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ৫০ মেগাওয়াটের আরেকটি বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র। পরিচ্ছন্ন জ্বালানির মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে এই দুই প্রকল্প বাংলাদেশেকে নতুন পথ দেখাবে বলেই আশা সবার।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সংকটে নিজস্ব জ্বালানিতে জোর

আপডেট সময় : ০২:৫৩:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই ২০২২

বিশেষ সংবাদদাতা : বৈশ্বিক সংকটে দেশীয় জ্বালানি অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জোর দিয়েছে সরকার। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, এতদিন কয়লা তোলা নিয়ে সরকারের যে নির্দেশনা ছিল এখন সেটায় পরিবর্তন এসেছে। বড়পুকুরিয়া ছাড়া অন্য কোথাও থেকে কয়লা তোলা যায় কিনা তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। নতুন করে আরও ৪৬টি গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খননের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
ইতিপূর্বে আমদানি করা জ্বালানিতেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু ইউক্রেন-রশিয়া সংকটে জ্বালানি পরিস্থিতির গতিপ্রকৃতি বদলে যায়। এতে এশিয়া অঞ্চলের জ্বালানিতে ভাগ বসায় ইউরোপ। যে কারণে জ্বালানি প্রাপ্তিতে তৈরি হয়েছে প্রতিযোগিতা। ইউরোপের সঙ্গে যে দৌড়ে অনেকেই পেরে উঠছে না। ২০১০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে মাস্টারপ্ল্যান করেছিল বাংলাদেশ, সেখানে মোট উৎপাদনের ৫০ ভাগ কয়লা থেকে করার কথা বলা হয়েছিল। পরে ফসলি জমি নষ্ট করে কয়লা উত্তোলন না করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু এখন পরিস্থিতির কারণে আগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, বড়পুকুরিয়া ছাড়াও অন্য জায়গা থেকে কয়লা তোলা যায় কিনা তা নিয়ে কাজ করছি। বড়পুকুরিয়া থেকে আরও ছয় বছর কয়লা তোলা হবে। এছাড়া দীঘিপাড়া কয়লাখনির কয়লা তোলা নিয়েও কাজ করছি। গ্যাসের অনুসন্ধানে ৪৬টি কূপ খননের পরিকল্পনা করেছি। নাজমুল আহসান বলেন, আমাদের রিগগুলোর মধ্যে একটি শ্রীকাইলে কাজ করছে, একটি বিয়ানিবাজারে যাবে, আরেকটি যাবে শরীয়তপুরে। এই রিগ যেতেও কিছুটা সময় লাগে। একটা কথা পরিষ্কার করে বলা ভালো— আমরা কাজ করছি। যারা সমালোচনা করছেন তাদের অনেকেই একসময় এই পেট্রোবাংলায় কাজ করেছেন। সেই সময় তারা কেন কাজগুলো করেননি, সেটার সদুত্তর তারা দিতে পারবেন না।
বিদ্যুৎ উৎপাদন মহাপরিকল্পনায় ২০৪০ সালে দেশের মোট ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা দেখানো হয়েছে। বর্তমানের তুলনায় এই পরিমাণ তিনগুণের বেশি। আগামী ১৮ বছরে দেশের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে আরও ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন পড়বে। এক্ষেত্রে দেশে জ্বালানি বহুমুখীকরণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে কয়লা ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আবার নতুন চিন্তা করা হচ্ছে। দেশীয় জ্বালানির পাশাপাশি এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে সরকার। সরকারের তরফ থেকে সম্প্রতি এক বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জোর দিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী ওই বৈঠকে বলেছেন আমাদের অবশ্যই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। এজন্য সরকারি কোম্পানিগুলোকে যে লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন তিনি। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে দেশে সৌরবিদ্যুৎ থেকে দিনে গড়ে সাড়ে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব। এই সময়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করা গেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে। এতে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানিতেও চাপ সৃষ্টি হবে না। এছাড়া, দেশে বড় আকারের বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, কক্সবাজারের খুরুশকূলে তৈরি হচ্ছে দেশের বৃহত্তম বায়ু-বিদ্যুৎ প্রকল্প। গত ৩১ মার্চ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা প্রকল্পটির কাজ ইতোমধ্যে ৪০ ভাগ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রপথে চীন থেকে এসে পৌঁছেছে প্রকল্পের সরঞ্জাম। আগামী বছরের শুরুর দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে আসবে। জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এছাড়া, কক্সবাজারের ইনানীতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ৫০ মেগাওয়াটের আরেকটি বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র। পরিচ্ছন্ন জ্বালানির মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে এই দুই প্রকল্প বাংলাদেশেকে নতুন পথ দেখাবে বলেই আশা সবার।