প্রত্যাশা ডেস্ক: কিড স্ট্রিট, রয়েড স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, কলিন লেন, টটি লেন, মারকুইস স্ট্রিটসহ নিউমার্কেট এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১২০টি থাকার হোটেল রয়েছে। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ ব্যবসা নির্ভর করে বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর। কিন্তু প্রতিবেশী দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে ‘মিনি বাংলাদেশ’ নামে খ্যাত কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায়।
খাবারের হোটেল ও ছোটখাটো ব্যবসা— বিশেষ করে শাড়ি, গার্মেন্টসের ব্যবসার পর এবার বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে বন্ধ হতে চলেছে নিউমার্কেট এলাকায় থাকার হোটেলগুলো।
গত বছরের জুলাই থেকেই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে খারাপ হতে শুরু করে। চলতি ফেব্রুয়ারিতে অবস্থা আরও সংকটময় হয়ে উঠেছে। গত ছয় মাসে ব্যবসা কার্যত তলানিতে ঠেকেছে। কেউ কেউ এরই মধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেছেন, আবার কেউ ব্যবসা বন্ধের কথা ভাবছেন। বাংলাদেশি বার্তাসংস্থা জাগো নিউজ এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
নিউমার্কেট এলাকার হোটেল ব্যবসায়ীদের একাংশ মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন থাকলেও তা বাণিজ্যে প্রভাব ফেলা উচিত নয়।
কলকাতার মারকুইস স্ট্রিট-ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটির যুগ্ম সচিব মনতোষ সরকার জানান, নিউমার্কেট মূলত বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল। মানি এক্সচেঞ্জ, হোটেল ও পর্যটন ব্যবসা মূলত তাদের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে চলে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। কোভিড মহামারির পর আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম, কিন্তু সাম্প্রতিক সংকট দ্রুত কাটবে বলে মনে হচ্ছে না।
গত আট বছর ধরে লিজ নিয়ে মারকুইস স্ট্রিটে ‘এমারেল্ড হোটেল’ চালাচ্ছেন মনতোষ সরকার। তার হোটেলে কর্মরত ২৫ জন কর্মীর আয়ে পরিবারের মোট ৭৫ জন সদস্য নির্ভরশীল। কিন্তু বর্তমানে হোটেলটি বাংলাদেশি পর্যটকশূন্য। ফলে একদিকে পর্যটক নেই, অন্যদিকে প্রতিমাসে দিতে হচ্ছে বড় অংকের ভাড়া। এই পরিস্থিতিতে তিনি হোটেলটি ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবছেন।
মনতোষ সরকার আরও জানান, নিউমার্কেট চত্বরে যারা লিজ নিয়ে হোটেল চালাচ্ছিলেন, পর্যটকের অভাবে তাদের অনেকে হোটেল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। একইভাবে দোকান ভাড়া নিয়ে পোশাকের ব্যবসা বা রেস্তোরাঁ চালানো ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়েছেন।
বাংলাদেশি পর্যটক বলতে এখন হাতে গোনা কিছু মানুষ রয়েছেন নিউমার্কেট চত্বরে। যে হোটেলের ঘরভাড়া আগে ছিল ২ হাজার ৫০০ রুপি, সেটি এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। তবুও পর্যটক মিলছে না। ফলে স্থানীয় পর্যটকদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে হোটেল ব্যবসায়ীদের।
যেসব বাংলাদেশি পর্যটক এখন কলকাতায় আসছেন, তাদের বেশিরভাগই চিকিৎসার জন্য। কেউ কলকাতায় চিকিৎসা করাচ্ছেন, কেউ আবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরু যাচ্ছেন। তবে তাদের সংখ্যাও খুবই কম।
বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের বাসিন্দা মুস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন, এখন নিউমার্কেট বেশ ফাঁকা। কারণ ভিসা ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। চিকিৎসার ভিসা পাওয়া গেলেও অন্যান্য ভিসা জটিলতায় পড়েছে।
বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গার বাসিন্দা মোহাম্মদ আশরাফুল চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসেছেন, এখান থেকে বেঙ্গালুরু যাবেন। তিনি বলেন, ভিসা পেতে এখন কিছুটা জটিলতা হচ্ছে। রাজশাহীর নির্দিষ্ট কিছু মেডিকেল কলেজের সার্টিফিকেট থাকলেই ভিসা পাওয়া যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার আরেক বাসিন্দা সুপল সরকার তার খালার অস্ত্রোপচারের জন্য কলকাতায় এসেছেন। তিনি বলেন, ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে এখন শর্ত কঠোর করা হয়েছে। শুধু জটিল রোগের ক্ষেত্রেই ভিসা মিলছে, ট্যুরিস্ট ভিসা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ।
এই সংকট কবে কাটবে, সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত নন। তবে নিউমার্কেট চত্বরের ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে এবং কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’ আবারও আগের মতো প্রাণ ফিরে পাবে।