নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে গণতন্ত্রের উত্তরণ যেন সঠিকমতো না হয় সেজন্য ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান শোক ও বিজয় আয়োজিত’ যুব-সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। সমাবেশের আয়োজন করে যুবদল।
ফখরুল বলেন, আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এবং তারপরে প্রায় আট বছর তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা এই আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। আজকে একটা ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত চলছে, দেশে আবার একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে, দেশে একটা ষড়যন্ত্র তৈরি করতে। যেন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের উত্তরণ সঠিকমতো না হয়। হাসিনা সরকারের অত্যাচার নির্যাতনে আমরা একটা দুঃসময় পার হয়ে এখানে এসেছি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন ট্রানজিশন পিরিয়ডে আছি। যখন আমাদের গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ পেয়েছি, তখন সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি, ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজনৈতিক কাঠামো ঠিক করা। এগুলো করেই আমাদেরকে আবার সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, যখনই দেশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যায়, তখনই বিএনপি দায়িত্ব নিয়ে সেটাকে আবার পুনর্গঠন করেছে প্রতিটি সময়। তাই ঘটেছে আজকে। এখন আবার মনে হচ্ছে, বিএনপিকেই হয়তো বা সেই দায়িত্বটা নিতে হবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন, আমরা পরস্পর পরস্পরে কাদা ছোড়াছুড়ি না করি। একটা সুযোগ পেয়েছি বাংলাদেশে আবার গণতন্ত্রকে তৈরি করার। দেশকে আবার অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করার। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করে বাংলাদেশকে সেই দিকে এগিয়ে যাই। মাথা উচু করে দাঁড়াই, সফল হবো।
আবারো সংগ্রামের সময় এসেছে- সেলিমা রহমান: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেছেন, কালকের জুলাই সনদ ঘোষণার পরেই আমাদের অবস্থান স্পষ্ট হবে। তবে এটুকু স্পষ্ট করে বলতে চাই আবারো সংগ্রামের সময় এসেছে। সোমবার (৪ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরামের আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সেলিমা রহমান বলেন, যদি দেশের জনগণের দাবি অনুযায়ী একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের জনগণ আবারো ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রামে নামবে। দেশের মালিক জনগণ, এই কথা আবার প্রমাণ হবে।
বিএনপির এই নেত্রী বলেন, সত্যি কথা বলতে, প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তি দুটোই আমাদের আলোচনা হয়ে গেছে। আমরা রাষ্ট্র গঠন করি কেন? রাষ্ট্রে আমরা কি চাই? রাষ্ট্রে আমরা সুশাসন চাই, রাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার চাই, অর্থনৈতিক অধিকার চাই, সবচেয়ে বড় কথা, মৌলিক অধিকার এবং বেঁচে থাকার অধিকার চাই। তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি সুন্দর দেশ, স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু সেই বাংলাদেশে আজকে ৫৪ বছর হলো। সেই বাংলাদেশের স্বাধীনতায় আমরা দেখেছি, যতবার আমাদের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা অগ্রসর হচ্ছি, ততবারই আমাদের কিছু না কিছু বাঁধা এসে আমাদেরকে বিব্রত করছে।
সেলিমা রহমান বলেন, আমাদের জাতি এতই সংগ্রামী যে কোনো বাঁধাই আমাদের থামাতে পারেনি। প্রতিবারই আমরা গণতন্ত্রের পথে একধাপ এগিয়েছি। সর্বশেষ ১৬ বছরব্যাপী আন্দোলনের ফসল হলো এই জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান। আওয়ামী লীগ সরকারকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, একটা চরম দানবের সরকারের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি, যারা মানুষের পেটে লাথি মেরে উন্নয়নের কথা বলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুঁজি করে দেশ চালাতে চেয়েছে। সেই দানবীয় সরকারের পতন ঘটেছে গণঅভ্যুত্থানে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চলার পর সমগ্র জাতি রাজপথে নেমে এসেছিল। ছাত্র, জনতা, শ্রমিক, নারী, পুরুষ, শিশুরাও। দেশজুড়ে এক অনির্ধারিত যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। তিনি অভিযোগ করেন, আজ এক বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু সেই গণ-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন কোথাও দেখা যাচ্ছে না। আজকের অবস্থা হলো, যারা একসময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিক্রি করে স্বৈরাচার চালিয়েছিল, তারাই আবার এখন গণঅভ্যুত্থানের নামে ক্ষমতায় আসীন হতে চায়।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, নাগরিকত্বের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রহিন হোসেন প্রিন্স, জেএসডির সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব প্রমুখ।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ