ঢাকা ০১:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

শ্রীলঙ্কাকে দেয়া ঋণ ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

  • আপডেট সময় : ০২:৩৩:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২২
  • ৮১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে ২০২১ সালে বাংলাদেশের কাছ থেকে নেওয়া ২৫ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তি এবং মার্চের মধ্যে অবশিষ্ট অর্থ পরিশোধ করা হবে। ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ আয়োজিত বার্ষিক সাধারণ সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারকে একথা জানিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দলাল ওয়েরাসিংহে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর ইতিহাসের ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকটে প্রয়োজনীয় পণ্যের অভাবে পড়ে দেশটি। রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসে। অথচ তাদের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪ গুণ অর্থাৎ ৭.৩ বিলিয়ন ডলার।
এমন অবস্থায় ২০২১ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের অনুরোধে দেশটিকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেয় বাংলাদেশ। মুদ্রা বিনিময় বা কারেন্সি সোয়াপ চুক্তির আওতায় এ অর্থ ধার দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট প্রথম কিস্তিতে শ্রীলঙ্কাকে ৫ কোটি ডলার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ৩০ আগস্ট আরও ১০ কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয়। শর্ত অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি নির্দিষ্ট হিসাবে ২৫ কোটি ডলার পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই হিসাবে আগে থেকেই ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ৪৯.৫ বিলিয়ন শ্রীলঙ্কান রুপি জামানত হিসেবে জমা রাখে দেশটি। কথা ছিল পরবর্তী সময়ে শ্রীলঙ্কা ওই হিসাবে ডলার জমা দিয়ে ক্রমান্বয়ে তাদের ঋণ পরিশোধ করবে। প্রতি বছর ৫ থেকে সাড়ে ৫ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে এ আমদানি পণ্যের মূল্য ওই হিসাবে জমা থাকা শ্রীলঙ্কান মুদ্রা দিয়ে পরিশোধ করা হবে। ঋণ সহায়তা দেওয়ার সময় শর্ত ছিল, প্রথম কিস্তি পরিশোধ করার জন্য শ্রীলঙ্কা ৩ মাস সময় পাবে। এ সময় সুদের হার হবে লাইবরের (লন্ডন আন্তঃব্যাংক সুদের হার) সঙ্গে অতিরিক্ত ২ শতাংশ। প্রথম ৩ মাসে ঋণ শোধ করতে না পারলে শ্রীলঙ্কাকে আরও ৩ মাস সময় দেওয়া হবে। দ্বিতীয়বারের ৩ মাসেও সুদের হার সমান থাকবে। তবে ৬ মাস পার হওয়ার পর থেকে পরের ৩ মাসে সুদের হার হবে লাইবরের সঙ্গে অতিরিক্ত ২.৫ শতাংশ। কিন্তু সংকটের কারণে সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি দেশটি। তবে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে ২০ কোটি ডলার ঋণের অর্থ পরিশোধ করবে বলে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ জানান, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে আইএমএফের সহায়তা নিশ্চিত হয়েছে। চীন, জাপান, ভারতও দেশটিকে সহায়তা দিচ্ছে। ফলে মার্চের মধ্যেই বাংলাদেশের ঋণের অর্থ পরিশোধ করবে বলে শ্রীলঙ্কার গভর্নরের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাপারটা ইতিবাচক। শ্রীলঙ্কা ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে রিকভার করতে পারছে। কিন্তু ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ওদের সমতা বজায় রাখতে হবে। বাংলাদেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশের ঋণগুলোও তাদের পরিশোধ করতে হবে। সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা প্যারিস ক্লাবের সহায়তা নিয়ে ঋণদাতা দেশগুলোর সঙ্গে বসে আন্তর্জাতিক আইন মেনে একটি যথাযথ ঋণ পরিশোধ পরিকল্পনা তৈরি করতে পারে।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি ভালো সংবাদ যে তারা আবার অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে। তবে ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব ইকোনমিকেও স্ট্রং করে তুলতে হবে। আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের সহায়তাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শ্রীলঙ্কাকে দেয়া ঋণ ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ০২:৩৩:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে ২০২১ সালে বাংলাদেশের কাছ থেকে নেওয়া ২৫ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তি এবং মার্চের মধ্যে অবশিষ্ট অর্থ পরিশোধ করা হবে। ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ আয়োজিত বার্ষিক সাধারণ সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারকে একথা জানিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দলাল ওয়েরাসিংহে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর ইতিহাসের ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকটে প্রয়োজনীয় পণ্যের অভাবে পড়ে দেশটি। রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসে। অথচ তাদের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪ গুণ অর্থাৎ ৭.৩ বিলিয়ন ডলার।
এমন অবস্থায় ২০২১ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের অনুরোধে দেশটিকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেয় বাংলাদেশ। মুদ্রা বিনিময় বা কারেন্সি সোয়াপ চুক্তির আওতায় এ অর্থ ধার দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট প্রথম কিস্তিতে শ্রীলঙ্কাকে ৫ কোটি ডলার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ৩০ আগস্ট আরও ১০ কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয়। শর্ত অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি নির্দিষ্ট হিসাবে ২৫ কোটি ডলার পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই হিসাবে আগে থেকেই ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ৪৯.৫ বিলিয়ন শ্রীলঙ্কান রুপি জামানত হিসেবে জমা রাখে দেশটি। কথা ছিল পরবর্তী সময়ে শ্রীলঙ্কা ওই হিসাবে ডলার জমা দিয়ে ক্রমান্বয়ে তাদের ঋণ পরিশোধ করবে। প্রতি বছর ৫ থেকে সাড়ে ৫ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে এ আমদানি পণ্যের মূল্য ওই হিসাবে জমা থাকা শ্রীলঙ্কান মুদ্রা দিয়ে পরিশোধ করা হবে। ঋণ সহায়তা দেওয়ার সময় শর্ত ছিল, প্রথম কিস্তি পরিশোধ করার জন্য শ্রীলঙ্কা ৩ মাস সময় পাবে। এ সময় সুদের হার হবে লাইবরের (লন্ডন আন্তঃব্যাংক সুদের হার) সঙ্গে অতিরিক্ত ২ শতাংশ। প্রথম ৩ মাসে ঋণ শোধ করতে না পারলে শ্রীলঙ্কাকে আরও ৩ মাস সময় দেওয়া হবে। দ্বিতীয়বারের ৩ মাসেও সুদের হার সমান থাকবে। তবে ৬ মাস পার হওয়ার পর থেকে পরের ৩ মাসে সুদের হার হবে লাইবরের সঙ্গে অতিরিক্ত ২.৫ শতাংশ। কিন্তু সংকটের কারণে সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি দেশটি। তবে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে ২০ কোটি ডলার ঋণের অর্থ পরিশোধ করবে বলে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ জানান, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে আইএমএফের সহায়তা নিশ্চিত হয়েছে। চীন, জাপান, ভারতও দেশটিকে সহায়তা দিচ্ছে। ফলে মার্চের মধ্যেই বাংলাদেশের ঋণের অর্থ পরিশোধ করবে বলে শ্রীলঙ্কার গভর্নরের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাপারটা ইতিবাচক। শ্রীলঙ্কা ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে রিকভার করতে পারছে। কিন্তু ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ওদের সমতা বজায় রাখতে হবে। বাংলাদেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশের ঋণগুলোও তাদের পরিশোধ করতে হবে। সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা প্যারিস ক্লাবের সহায়তা নিয়ে ঋণদাতা দেশগুলোর সঙ্গে বসে আন্তর্জাতিক আইন মেনে একটি যথাযথ ঋণ পরিশোধ পরিকল্পনা তৈরি করতে পারে।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি ভালো সংবাদ যে তারা আবার অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে। তবে ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব ইকোনমিকেও স্ট্রং করে তুলতে হবে। আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের সহায়তাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে।