ঢাকা ০৪:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
ছয় মাসেও হয়নি সংযোগ সড়ক

শ্রীপুরে কোটি টাকার সেতু যেন মরণফাঁদ

  • আপডেট সময় : ০৬:১৭:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১৩ বার পড়া হয়েছে

ছবি আজকের প্রত্যাশা

আব্দুস সালাম রানা, শ্রীপুর (গাজীপুর): গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের চাওবন- ডোয়াইবাড়ি সংযোগ সড়কের ‘সেরা’র খালের ওপর নির্মিত সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৬ মাস আগে। কিন্তু দুই পাশে সংযোগ সড়ক না হওয়ায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুটি আজও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এতে ৪/৫ টি গ্রামের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গ্রামবাসীরা কাঠের সিঁড়ি তৈরি করে সেতু পার হতে গিয়ে হর-হামেশাই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। সদ্যনির্মিত সেতুটি যেন এক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটি নির্মাণের সময়ই কথা ছিল দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণের। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার ছয় মাস পরেও দুই পাশে সংযোগ সড়ক তৈরি করা হয়নি। ফলে গ্রামবাসীদের চলাচলের প্রধান এ সড়কটি এখনো অচল হয়ে পড়ে আছে।

চাওবন গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, এই সেতুটি কয়েকটি গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন চলাচলের রাস্তা। বিশেষ করে শিশু, প্রবীণ, রোগীসহ শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে সেতুর উপরে বানানো কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করে স্কুলে যাচ্ছে। ঠিকাদারের দায়িত্ব ছিল সেতুকে রাস্তার সঙ্গে যুক্ত করা, কিন্তু সে কাজ এখনো হয়নি।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা রওশন বেগম জানান, আগে সেতু না থাকায় খাল পার হতে ভোগান্তি ছিল। সেতু তৈরি হলেও রাস্তা না থাকায় সেই দুর্ভোগ এখনো কমেনি। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী নিজেরাই কাঠের সিঁড়ি তৈরি করে সেতুতে ওঠার ব্যবস্থা করেছেন। গত দুই সপ্তাহ আগে এক স্কুল শিক্ষার্থী সেতুর উপরে উঠতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে পা দিয়ে রড ঢুকে গুরুতর আহত হয়েছে।

কারিমা নামে আরেক নারী আক্ষেপ নিয়ে বলেন, সেতুর উপরে সাঁকো দিয়ে উঠতে কোথাও দেখিনি। আমার বাচ্চাটিকে প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যেতে হয় ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুর উপর দিয়ে। আমরা দ্রুত এই রাস্তার সংস্কার চাই। স্থানীয় ওমর ফারুক, আসলাম, শুককুর আলী, বিল্লাল হোসেনসহ আরো একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা হয়। তাদের দাবি- সংযোগ সড়ক দ্রুত নির্মাণ করা হলে কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ ও শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ দূর হবে, এবং কোটি টাকার এ সেতুটিও কাজে লাগবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তথ্যমতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গ্রামীণ রাস্তায় সেতু কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ১৪ ফুট প্রস্ত সেতুটি নির্মাণ করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। নির্মাণের দায়িত্ব পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ।

মিথুন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু এতো দিন বর্ষাকাল থাকার কারলে কোথাও মাটির ব্যবস্থা করা যায়নি। তিনি জানান, স্থানীয় ইউপি সদস্যের সাথে কথা হয়েছে; এক সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে মাটির ব্যবস্থা করা হবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, ঠিকাদারের সাথে কথা হয়েছে। মাটির ব্যবস্থা হলেই দ্রুত কাজ করে সেতুটি চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ইশতিয়াক হোসাইন উজ্জ্বল বলেন, ‘আমি যোগদানের আগেই সেতুটি উদ্বোধন করা হয়েছে। বিষয়টি আগে জানতাম না। ঠিকাদারের সাথে আমার কথা হয়েছে সেতুটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে দুই পাশের প্রপোজের কাজ বাকি রয়েছে। সেতুটি চলাচলের উপযোগী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু হবে।’

সানা/আপ্র/০৬/১২/২০২৫

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ছয় মাসেও হয়নি সংযোগ সড়ক

শ্রীপুরে কোটি টাকার সেতু যেন মরণফাঁদ

আপডেট সময় : ০৬:১৭:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

আব্দুস সালাম রানা, শ্রীপুর (গাজীপুর): গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের চাওবন- ডোয়াইবাড়ি সংযোগ সড়কের ‘সেরা’র খালের ওপর নির্মিত সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৬ মাস আগে। কিন্তু দুই পাশে সংযোগ সড়ক না হওয়ায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুটি আজও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এতে ৪/৫ টি গ্রামের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গ্রামবাসীরা কাঠের সিঁড়ি তৈরি করে সেতু পার হতে গিয়ে হর-হামেশাই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। সদ্যনির্মিত সেতুটি যেন এক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটি নির্মাণের সময়ই কথা ছিল দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণের। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার ছয় মাস পরেও দুই পাশে সংযোগ সড়ক তৈরি করা হয়নি। ফলে গ্রামবাসীদের চলাচলের প্রধান এ সড়কটি এখনো অচল হয়ে পড়ে আছে।

চাওবন গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, এই সেতুটি কয়েকটি গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন চলাচলের রাস্তা। বিশেষ করে শিশু, প্রবীণ, রোগীসহ শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে সেতুর উপরে বানানো কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করে স্কুলে যাচ্ছে। ঠিকাদারের দায়িত্ব ছিল সেতুকে রাস্তার সঙ্গে যুক্ত করা, কিন্তু সে কাজ এখনো হয়নি।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা রওশন বেগম জানান, আগে সেতু না থাকায় খাল পার হতে ভোগান্তি ছিল। সেতু তৈরি হলেও রাস্তা না থাকায় সেই দুর্ভোগ এখনো কমেনি। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী নিজেরাই কাঠের সিঁড়ি তৈরি করে সেতুতে ওঠার ব্যবস্থা করেছেন। গত দুই সপ্তাহ আগে এক স্কুল শিক্ষার্থী সেতুর উপরে উঠতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে পা দিয়ে রড ঢুকে গুরুতর আহত হয়েছে।

কারিমা নামে আরেক নারী আক্ষেপ নিয়ে বলেন, সেতুর উপরে সাঁকো দিয়ে উঠতে কোথাও দেখিনি। আমার বাচ্চাটিকে প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যেতে হয় ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুর উপর দিয়ে। আমরা দ্রুত এই রাস্তার সংস্কার চাই। স্থানীয় ওমর ফারুক, আসলাম, শুককুর আলী, বিল্লাল হোসেনসহ আরো একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা হয়। তাদের দাবি- সংযোগ সড়ক দ্রুত নির্মাণ করা হলে কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ ও শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ দূর হবে, এবং কোটি টাকার এ সেতুটিও কাজে লাগবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তথ্যমতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গ্রামীণ রাস্তায় সেতু কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ১৪ ফুট প্রস্ত সেতুটি নির্মাণ করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। নির্মাণের দায়িত্ব পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ।

মিথুন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু এতো দিন বর্ষাকাল থাকার কারলে কোথাও মাটির ব্যবস্থা করা যায়নি। তিনি জানান, স্থানীয় ইউপি সদস্যের সাথে কথা হয়েছে; এক সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে মাটির ব্যবস্থা করা হবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, ঠিকাদারের সাথে কথা হয়েছে। মাটির ব্যবস্থা হলেই দ্রুত কাজ করে সেতুটি চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ইশতিয়াক হোসাইন উজ্জ্বল বলেন, ‘আমি যোগদানের আগেই সেতুটি উদ্বোধন করা হয়েছে। বিষয়টি আগে জানতাম না। ঠিকাদারের সাথে আমার কথা হয়েছে সেতুটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে দুই পাশের প্রপোজের কাজ বাকি রয়েছে। সেতুটি চলাচলের উপযোগী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু হবে।’

সানা/আপ্র/০৬/১২/২০২৫