কৃষি ও কৃষক ডেস্ক: আষাঢ় শেষে এখন শ্রাবণ। কিন্তু দিনাজপুরে কাক্সিক্ষত বৃষ্টির দেখা মেলেনি। খাল-বিল, ডোবা অথবা বাড়ির পাশে নিচু জমি কোথাও পানি নেই। ফলে পাট জাগ দিতে না পেরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দিনাজপুরের পাটচাষিরা। এতে কষ্টের ফসল সোনালি আঁশ এখন কৃষকের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আবহমানকাল ধরে বর্ষা মৌসুমে কৃষক জমি থেকে পাট কেটে এসব স্থানেই জাগ দিয়ে আসছেন। কিন্তু এ বছর বর্ষা মৌসুমের প্রধান মাস আষাঢ় পার হয়ে শ্রাবণ শুর হলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষক। জেলা আবহাওয়া অফিস থেকেও নেই কোনো সুখবর।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ১৩ উপজেলায় মোট ৪ হাজার ৩৭২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে নয় হাজার টন। এরই মধ্যে ৬০ শতাংশ জমির পাট কাটা হয়েছে। অনেক স্থানে কৃষক জমি থেকে পাট কাটছেন। আবার অনেক স্থানে বৃষ্টি হবে এ আশায় প্রহর গুণছেন তারা।
দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর, মহব্বতপুর, খাড়িপাড়া ও ঘুঘুডাঙ্গাসহ জেলার পুনর্ভবা নদীতীরবর্তী এলাকায় বেশি পাট চাষ হয়। এসব এলাকায় দেখা গেছে, অধিকাংশ কৃষক খেতের পাট কাটেননি। ফলে জমিতেই গাছ বিবর্ণ হয়ে হলদে রঙ ধারণ করছে।
জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর, সাতনালা, তেঁতুলিয়া, আলোকডিহি, দেবীগঞ্জ, ডাঙ্গারহাট, ঘণ্টাঘর, বিন্যাকুড়ি, সুখীপীর, বেলতলী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানি না থাকায় কৃষক চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। নদী, পুকুর, খাল-বিল কোথাও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কৃষক পাট জাগ দিতে পারছেন না। অনেক কৃষককে পাট কেটে খেতেই ফেলে রাখতে দেখা গেছে। অনেকে বৃষ্টির আশায় পাট না কেটে জমিতেই রেখে দিয়েছেন। আবার অনেকেই নিচু এলাকায় জমে থাকা কাদা পানিতেই পাট জাগ দিচ্ছেন। পর্যাপ্ত পানিতে পাট জাগ দিয়ে আঁশ ছাড়িয়ে পরিষ্কার করতে না পারলে বিক্রির সময় কাক্সিক্ষত দাম না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. আনিছুজ্জামান বলেন, এখনো শ্রাবণ মাস আছে। আশা করা যায় বৃষ্টি হলে এই সংকট কেটে যাবে। অনেকে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানির ব্যবস্থা করে জাগ দিয়েছেন। তবে কৃষক বসে নেই। নিজেদের উদ্যোগে সেচের ব্যবস্থা করে বেশির ভাগ কৃষক পাট জাগ দিচ্ছেন।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে জেলায় জুন মাসে ৩৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার উপর দিয়ে মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে। আশা করা যায় বৃষ্টি হবে। তবে জুন মাসের মতো চলতি মাসে বৃষ্টিপাত হলে এই সংকট থাকবে না।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ