ঢাকা ১০:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে আশুলিয়ার ৪৫ কারখানা বন্ধ

  • আপডেট সময় : ০২:৪৭:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৪৪ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : সাভারের আশুলিয়ায় বিভিন্ন দাবিতে চলা শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে অন্তত ৪৫টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া আরও ২৫টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নজরদারির পাশাপাশি শিল্প এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান শিল্পপুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম।
এছাড়া গাজীপুরে বিগবস নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানার গোডাউনে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা আগুন দিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে।
শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বুধবার দুপুরে মালিকরা শ্রম আইন ২০০৬ সালের ১৩ (১) ধারায় এসব পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে মূল ফটকে নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছে বলে জানান তিনি। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো ও বিশমাইল জিরাবো সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনন্ত, মেডলার, শারমিন গ্রুপ, ডেকো, এস টুয়েন টি ওয়ান, মণ্ডল নীটওয়্যার লিমিটেড, ম্যাংঙ্গো টেক্স, এআর জিন্স, এনভয়, স্টাইলিং গ্রুপ, ভিনটেক্স, ইয়াগী বাংলাদেশ, ক্রস ওয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, অরোনিমা, ডেবনিয়ার, দি রোজ, জেনারেশন নেক্সট, সিনসিন, ডিসান সোয়েটার ও সিগমা ফ্যাশনসহ বেশকিছু পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে সকাল ১০টা পর্যন্ত নিউএইজ, আল মুসলিম, নাসা সুপার কমপ্লান্স, নাসা এ জে সুপার, নাসা বেসিক কমপ্লেক্স ও জনরন সোয়েটারের উৎপাদন চালু রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। হা-মীম গ্রুপের একটি কারখানা বন্ধের নোটিসে লেখা রয়েছে, দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়ার লিমিটেড, অ্যাপারেল্স গ্যালারি লিমিটেড, রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড, এক্সপ্রেস ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেড, আটিস্টিক ডিজাইন লিমিটেড, নেক্সট কালেকশন লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আশুলিয়া শিল্প অঞ্চলে বর্তমান সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১৩ (১) অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করল। পরবর্তীতে পরিবেশ নিরাপদ হলে শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নোটিসের মাধ্যমে কারখানা খোলার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে কারখানায় নিরাপত্তা বিভাগ এ নোটিসের আওতামুক্ত থাকবে। তৈরি পোশাক শ্রমিকরা জানান, সকালে কারখানায় প্রবেশ করে কার্ড পাঞ্চ করে বাসায় চলে যেতেন শ্রমিকরা। কিন্তু আজ বেশিরভাগ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। কারখানা বন্ধের নোটিস দেখে বাসায় ফিরে গেছেন শ্রমিকরা। কারখানা বন্ধের ঘটনায় মালিকদের আন্তরিকতার অভাবকে দায়ী করেছেন গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু। তিনি বলেন, ১৩(১) ধারায় প্রায় অর্ধশত কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করলের দাবির বিষয়গুলো সমাধান হতো। তাহলে আর শ্রমিক অসন্তোষ থাকতো না।
এদিকে ভোর থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের চক্রবর্তী, নবী টেক্সটাইল, বাজার এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ ছাড়া জিরানী-আমতলা আঞ্চলিক সড়কের উভয় পাশের কারখানাগুলোতে ভাঙচুরের চেষ্টা করা হলে, কারখানার ফটকে বন্ধের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ সময় আতঙ্কে ওই এলাকার দোকানপাট বন্ধ করেন ব্যবসায়ীরা। পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ৪৫টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ এবং ২৫টিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, “কিছু জায়গায় কর্মবিরতির কথা শুনেছি। সেখানে আলোচনা করে কাজে ফেরানোর চেষ্টা চলছে। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এখন ঘটেনি।” পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনী কাজ করছে বলে জানান শিল্প পুলিশের এই কর্মকর্তা।
গাজীপুরের বিগবস কারখানায় আগুন: গাজীপুরে একটি তৈরি পোশাক কারখানার গোডাউনে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা আগুন দিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে। বুধবার বেলা ১২টার দিকে নগরীর কাশিমপুর থানার চক্রবর্তী এলাকায় ‘বেক্সিমকো কারখানার’ শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে বিক্ষোভের এক পর্যায়ে ‘বিগবস কর্পোরেশনের লিমিটেড কারখানার’ ওয়্যার হাউজে অগ্নিসংযোগ করে বলে কারখানার ম্যানেজার মোজাম্মেল হক টিপু জানান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা তাদের গাড়ি ভাঙচুর করে। এ খবর লেখা পর্যন্ত কারখানায় আগুন জ্বলছে। কাশিমপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বেক্সিমকো গ্রুপের কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা অন্যান্য কারখানাও বন্ধ করতে বিভিন্ন কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর চালায়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ চেষ্টা করছে।”
প্রত্যক্ষদর্শী ও কারখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, চক্রবর্তী এলাকায় অবস্থিত ‘বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিজ’ কারখানার শ্রমিকরা সকাল থেকে বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে দুপুরে শ্রমিকরা সারাবো এলাকাসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণার দাবি করে। এছাড়া ওইসব কারখানার শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রেখে তাদের সঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নিতে বলে। কিন্তু কারখানার কাজ বন্ধ করে আন্দোলনে অংশ না নেওয়ায় বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানার সামনে গিয়ে জানালার কাজ ও গেটে ভাঙচুর চালায়। এতে আতঙ্কিত হয়ে অনেক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এক পর্যায়ে সারাবো এলাকায় বিগবস কর্পোরেশন লিমিটেড কারখানার ওয়্যার হাউজে অগ্নিসংযোগ করে শ্রমিকরা। ওই হাউজে এক্সপোর্টের ফেব্রিক্স ছিল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা তাদের একটি গাড়ি ভাঙচুর করলে তারা ফিরে যায়। এ বিষয়ে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, “বিগবস নামের একটি কারখানায় আগুন লাগার খবর পেয়ে আমাদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলের দিকে যায়। সেখানে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আমাদের একটি গাড়ি ভাঙচুর করলে কর্মীরা ফিরে আসে। “পরে কাশিমপুর মিনি ফায়ার স্টেশন ও সারাবো ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট গিয়ে আবারও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।” বিগবস কর্পোরেশন লিমিটেড কারখানার ম্যানেজার মোজাম্মেল হক টিপু বলেন, “বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরা বেতন পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা আমাদের কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানায় এসে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। পরে শ্রমিকরা আমাদের কারখানার ওয়্যার হাউজে অগ্নিসংযোগ করে। সেখানে আমাদের মূল্যবান ফেব্রিক্স রয়েছে। এছাড়াও এর আশেপাশে বসতবাড়ির দোকানপাটও রয়েছে।” সারাবো ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসের মো. তাশারফ হোসেন জানান, শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আন্দোলনকারীরা এলাকা ত্যাগ করলে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি জানিয়ে তিনি বলেন, “আগুন ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণেই আছে।”

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে আশুলিয়ার ৪৫ কারখানা বন্ধ

আপডেট সময় : ০২:৪৭:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রত্যাশা ডেস্ক : সাভারের আশুলিয়ায় বিভিন্ন দাবিতে চলা শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে অন্তত ৪৫টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া আরও ২৫টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নজরদারির পাশাপাশি শিল্প এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান শিল্পপুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম।
এছাড়া গাজীপুরে বিগবস নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানার গোডাউনে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা আগুন দিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে।
শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বুধবার দুপুরে মালিকরা শ্রম আইন ২০০৬ সালের ১৩ (১) ধারায় এসব পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে মূল ফটকে নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছে বলে জানান তিনি। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো ও বিশমাইল জিরাবো সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনন্ত, মেডলার, শারমিন গ্রুপ, ডেকো, এস টুয়েন টি ওয়ান, মণ্ডল নীটওয়্যার লিমিটেড, ম্যাংঙ্গো টেক্স, এআর জিন্স, এনভয়, স্টাইলিং গ্রুপ, ভিনটেক্স, ইয়াগী বাংলাদেশ, ক্রস ওয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, অরোনিমা, ডেবনিয়ার, দি রোজ, জেনারেশন নেক্সট, সিনসিন, ডিসান সোয়েটার ও সিগমা ফ্যাশনসহ বেশকিছু পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে সকাল ১০টা পর্যন্ত নিউএইজ, আল মুসলিম, নাসা সুপার কমপ্লান্স, নাসা এ জে সুপার, নাসা বেসিক কমপ্লেক্স ও জনরন সোয়েটারের উৎপাদন চালু রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। হা-মীম গ্রুপের একটি কারখানা বন্ধের নোটিসে লেখা রয়েছে, দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়ার লিমিটেড, অ্যাপারেল্স গ্যালারি লিমিটেড, রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড, এক্সপ্রেস ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেড, আটিস্টিক ডিজাইন লিমিটেড, নেক্সট কালেকশন লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আশুলিয়া শিল্প অঞ্চলে বর্তমান সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১৩ (১) অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করল। পরবর্তীতে পরিবেশ নিরাপদ হলে শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নোটিসের মাধ্যমে কারখানা খোলার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে কারখানায় নিরাপত্তা বিভাগ এ নোটিসের আওতামুক্ত থাকবে। তৈরি পোশাক শ্রমিকরা জানান, সকালে কারখানায় প্রবেশ করে কার্ড পাঞ্চ করে বাসায় চলে যেতেন শ্রমিকরা। কিন্তু আজ বেশিরভাগ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। কারখানা বন্ধের নোটিস দেখে বাসায় ফিরে গেছেন শ্রমিকরা। কারখানা বন্ধের ঘটনায় মালিকদের আন্তরিকতার অভাবকে দায়ী করেছেন গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু। তিনি বলেন, ১৩(১) ধারায় প্রায় অর্ধশত কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করলের দাবির বিষয়গুলো সমাধান হতো। তাহলে আর শ্রমিক অসন্তোষ থাকতো না।
এদিকে ভোর থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের চক্রবর্তী, নবী টেক্সটাইল, বাজার এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ ছাড়া জিরানী-আমতলা আঞ্চলিক সড়কের উভয় পাশের কারখানাগুলোতে ভাঙচুরের চেষ্টা করা হলে, কারখানার ফটকে বন্ধের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ সময় আতঙ্কে ওই এলাকার দোকানপাট বন্ধ করেন ব্যবসায়ীরা। পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ৪৫টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ এবং ২৫টিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, “কিছু জায়গায় কর্মবিরতির কথা শুনেছি। সেখানে আলোচনা করে কাজে ফেরানোর চেষ্টা চলছে। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এখন ঘটেনি।” পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনী কাজ করছে বলে জানান শিল্প পুলিশের এই কর্মকর্তা।
গাজীপুরের বিগবস কারখানায় আগুন: গাজীপুরে একটি তৈরি পোশাক কারখানার গোডাউনে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা আগুন দিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে। বুধবার বেলা ১২টার দিকে নগরীর কাশিমপুর থানার চক্রবর্তী এলাকায় ‘বেক্সিমকো কারখানার’ শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে বিক্ষোভের এক পর্যায়ে ‘বিগবস কর্পোরেশনের লিমিটেড কারখানার’ ওয়্যার হাউজে অগ্নিসংযোগ করে বলে কারখানার ম্যানেজার মোজাম্মেল হক টিপু জানান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা তাদের গাড়ি ভাঙচুর করে। এ খবর লেখা পর্যন্ত কারখানায় আগুন জ্বলছে। কাশিমপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বেক্সিমকো গ্রুপের কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা অন্যান্য কারখানাও বন্ধ করতে বিভিন্ন কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর চালায়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ চেষ্টা করছে।”
প্রত্যক্ষদর্শী ও কারখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, চক্রবর্তী এলাকায় অবস্থিত ‘বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিজ’ কারখানার শ্রমিকরা সকাল থেকে বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে দুপুরে শ্রমিকরা সারাবো এলাকাসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণার দাবি করে। এছাড়া ওইসব কারখানার শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রেখে তাদের সঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নিতে বলে। কিন্তু কারখানার কাজ বন্ধ করে আন্দোলনে অংশ না নেওয়ায় বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানার সামনে গিয়ে জানালার কাজ ও গেটে ভাঙচুর চালায়। এতে আতঙ্কিত হয়ে অনেক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এক পর্যায়ে সারাবো এলাকায় বিগবস কর্পোরেশন লিমিটেড কারখানার ওয়্যার হাউজে অগ্নিসংযোগ করে শ্রমিকরা। ওই হাউজে এক্সপোর্টের ফেব্রিক্স ছিল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা তাদের একটি গাড়ি ভাঙচুর করলে তারা ফিরে যায়। এ বিষয়ে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, “বিগবস নামের একটি কারখানায় আগুন লাগার খবর পেয়ে আমাদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলের দিকে যায়। সেখানে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আমাদের একটি গাড়ি ভাঙচুর করলে কর্মীরা ফিরে আসে। “পরে কাশিমপুর মিনি ফায়ার স্টেশন ও সারাবো ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট গিয়ে আবারও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।” বিগবস কর্পোরেশন লিমিটেড কারখানার ম্যানেজার মোজাম্মেল হক টিপু বলেন, “বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরা বেতন পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা আমাদের কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানায় এসে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। পরে শ্রমিকরা আমাদের কারখানার ওয়্যার হাউজে অগ্নিসংযোগ করে। সেখানে আমাদের মূল্যবান ফেব্রিক্স রয়েছে। এছাড়াও এর আশেপাশে বসতবাড়ির দোকানপাটও রয়েছে।” সারাবো ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসের মো. তাশারফ হোসেন জানান, শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আন্দোলনকারীরা এলাকা ত্যাগ করলে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি জানিয়ে তিনি বলেন, “আগুন ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণেই আছে।”