নিজস্ব প্রতিবেদক: অফিসে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে এক দিন আগে নিখোঁজ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের লাশ মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদী থেকে উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) সালেহ আহমেদ পাঠান বলেছেন, শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকালে কলাগাছিয়া এলাকায় মেঘনা নদীতে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির লাশ ভাসতে দেখা যায়। নৌ পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর রমনা থানা এলাকা থেকে নিখোঁজ সাংবাদিকের ছবির সঙ্গে মিল পায়।
রমনা থানায় করা জিডির সঙ্গে বিভুরঞ্জনের যে ছবিটি পরিবার দিয়েছিল, তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখার পর বিষয়টি রমনা থানাকে জানায় মুন্সীগঞ্জের পুলিশ। জানতে চাইলে পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, মেঘনা নদীতে লাশ পাওয়া গেছে। আমরা মোটামুটি কনফার্ম হয়েছি। তার পরিবার গেলে শনাক্ত করে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
৭১ বছর বয়সী বিভুরঞ্জন চাকরি করতেন ‘আজকের পত্রিকা’য়। এর বাইরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত কলাম লিখতেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মতামত পাতাতেও তিনি লিখতেন। তিনি সর্বশেষ নিবন্ধটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মেইল করেন বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টায়। ফুটনোটে তিনি লেখেন, ‘জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।’
যোগাযোগ করা হলে তার ছোট ভাই চিররঞ্জন সরকার বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বলেছিলেন, নানা কারণে হতাশায় ভুগছিলেন বিভুরঞ্জন। এরপর রাতে তার নিখোঁজ হওয়ার খবর আসে।
‘খোলা চিঠি’ শিরোনামে বিভুরঞ্জনের শেষ লেখাটি শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মতামত বিভাগে প্রকাশিত হয়। যা আজকের প্রত্যাশায়ও প্রকাশ করা হলো। সেখানে নিজের ও ছেলের অসুস্থতা, মেডিকেল পাস সরকারি কর্মকর্তা মেয়ের উচ্চতর পরীক্ষায় ‘ফেল করা’, বুয়েটে থেকে পাস করা ছেলের ‘চাকরি না হওয়া’ এবং নিজের আর্থিক দৈন্য নিয়ে হতাশার কথা লিখেছেন তিনি।
পরিবার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে বাসা থেকে বের হন বিভুরঞ্জন। মোবাইল ফোনটিও তিনি বাসায় রেখে গিয়েছিলেন। তিনি না ফেরায় এবং কারো কাছে তার কোনো তথ্য না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার ছেলে ঋত সরকার। সেখানে তিনি বলেন, প্রতিদিনের মত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা করেন তার বাবা। কিন্তু এরপর আর বাসায় ফেরেননি। ‘আমরা বাবার অফিসে (বনশ্রী) খোঁজ নিই এবং জানতে পারি যে তিনি অফিসে উপস্থিত হননি। বিষয়টি নিয়ে আমরা সম্ভাব্য সকল স্থানে অনেক খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু কোথাও পাওয়া না গেলে থানায় এসে সাধারণ ডায়েরির আবেদন করলাম।’
যোগাযোগ করা হলে রমনা থানার ওসি গোলাম ফারুক শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকালে সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। তবে উনি ফোনটা বাসায় রেখে গেছেন। ফোনটা সাথে থাকলে হয়তো খুঁজে পেতে সুবিধা হতো।’
বিভুরঞ্জনের ছোট ভাই চিররঞ্জন সরকার বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে লেখেন, ‘আমার দাদা সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় অন্যান্য দিনের মতো অফিস (আজকের পত্রিকা) যাবে বলে বাসা থেকে বের হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সে অফিসে যায়নি। পরিচিত পরিমণ্ডলের কোথাও যায়নি। আজ কেউ তাকে দেখেনি। রাত ১টা পর্যন্ত সে বাসায় ফেরেনি। হাসপাতাল-পার্ক কোথাও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। সে আজ মোবাইলও বাসায় রেখে গেছে। রাতে রমনা থানায় জিডি করা হয়েছে। তার জন্য আমরা পরিবারের সবাই ভীষণ উদ্বেগের মধ্যে আছি।’ এরপর শুক্রবার বিকালে মুন্সীগঞ্জে বিভুরঞ্জনের লাশ পাওয়ার খবর জানায় পুলিশ।