ক্রীড়া প্রতিবেদক: রোমাঞ্চের ভেলায় চড়ে শেষ ওভারে গড়াল ম্যাচ। ৬ বলে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের প্রয়োজন ছিল ১২ রান। প্রথম বল ডট খেলে সাইফ উদ্দিন দ্বিতীয় ডেলিভারিতে নিলেন সিঙ্গেল। স্ট্রাইকে গিয়েই চার মেরে আশা জোরাল করলেন নাসুম আহমেদ। পরেরটিতে হলো না রান। আবারও জাগে শঙ্কা। শেষ ২ বলে ৭ রানের সমীকরণে এবার ছক্কা মেরে দিলেন নাসুম। আর পরের বলে মিড-অনে ঠেলে জয়সূচক রান পূর্ণ করে দুই হাত দুইদিকে মেলে যেন উড়াল দিতে চাইলেন তিনি। বাউন্ডারি লাইনের বাইরে থেকে মোহামেডানের সবাই এক ছুটে জড়ো হলেন নাসুমের পাশে। জয়ের নায়ককে ঘিরে চলল উল্লাস। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ম্যাচটি জিতিয়ে মোহামেডানের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জয়ের আশা যে বাঁচিয়ে রাখলেন তিনি। শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার উত্তেজনায় ঠাসা সুপার লিগের ম্যাচে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে ৪ উইকেটে হারায় মোহামেডান।
প্রতিপক্ষের ২৩৬ রান ম্যাচের শেষ বলে পার করে তারা। মোহামেডান ম্যাচটি হারলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত আবাহনী। এখন প্রতিযোগিতার শিরোপা নির্ধারণ হবে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে, মঙ্গলবার শেষ রাউন্ডে। লিগে ১৫ ম্যাচে মোট ২৬ পয়েন্ট আবাহনীর। সমান ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট মোহামেডানের। শেষ রাউন্ডে জয়ী দলই করবে শিরোপা উল্লাস। রান তাড়ায় ৪৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ বিদায় নিলে মোহামেডান শিবিরে জেঁকে বসে শঙ্কা। তখন ২২ বলে ৩৩ রান দরকার ছিল দলটির। নাসুম ও সাইফ মিলে ১০ বলে নিতে পারেন ১০ রান। ১২ বলে ২৩ রানের প্রয়োজনে ৪৯তম ওভারে সাইফ চার মারার পর নাসুমের ছক্কায় শেষ ওভারের সমীকরণটা আরেকটু সহজ হয়। এরপর নাসুমের ব্যাটে সেই ঝলক।
২ ছক্কা ও ১ চারে ১৩ বলে অপরাজিত ২১ রান করেন নাসুম। ম্যাচ সেরার পুরস্কার অবশ্য ওঠে সাইফের হাতে। ২ চারে গুরুত্বপূর্ণ ৩০ রান করার আগে ৪২ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের দলে ডাক পাওয়ায় এই ম্যাচে ছন্দে থাকা এনামুল হককে পায়নি গাজী গ্রুপ। অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা দলকে ভালো শুরু এনে দেন মুনিম শাহরিয়ার। সাদিকুর রহমান ১ ছক্কা ও ৩ চারে ২৬ রান করে বিদায় নেন। তবে দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে টানেন মুনিম। ৬৫ বলে ফিফটি করা ওপেনার ২ ছক্কা ও ১০ চারে খেলেন ৮২ বলে ৮০ রানের ইনিংস। তাহজিবুল ইসলাম ও শেখ পারভেজ ভালো শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ত্রিশ পার করে বিদায় নেন দুইজনই। এরপর আর কেউ তেমন কিছু করতে না পারায় আড়াইশও হয়নি দলটির রান। সাইফের মতো ৩ উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমানও, ৪৬ রান খরচায়। দুটি প্রাপ্তি নাবিল সামাদের। রান তাড়ায় ৪০ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় মোহামেডান। আগের দিনের নানা ঘটনায় নিষেধাজ্ঞার শাস্তি এক বছরের জন্য স্থগিত হওয়ায় ম্যাচটি খেলার সুযোগ পান অধিনায়ক তাওহিদ হৃদয়। শূন্য রানে অল্পের জন্য তিনি বেঁচে যান রান আউট হওয়া থেকে। ৪ রানে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান একবার। দুই দফায় জীবন পাওয়া হৃদয়কে নিয়ে দলকে টানেন রনি তালুকদার। তাদের ৭৫ রানের জুটি ভাঙে ৭ চারে ৫৫ রান করা রনির বিদায়ে। কয়েক ওভার পর বিদায় নেন হৃদয়ও (৩ চারে ৩৭)। ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানে বেঁচে যাওয়া আরিফুল ইসলাম ১ রানে কাটা পড়েন রান আউট হয়ে। এক প্রান্ত ধরে রেখে ১ ছক্কা ও ৫ চারে ৬২ বলে ৪৯ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। এরপর নাসুম ও সাইফের ৩৩ রানের অবিচ্ছিন্ন সেই জুটি, আর মোহামেডানের জয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৪৯.৪ ওভারে ২৩৬ (মুনিম ৮০, সাদিকুর ২৬, শামসুর ৮, ওয়াসি ২২, সালমান ১৩, তাহজিবুল ৩২, পারভেজ ৩৩, শামিম ১২, আব্দুল গাফফার ০, আবু হাসিম ১, সোহেল ২*; এবাদত ৯-০-৪৭-০, মুস্তাফিজ ১০-২-৪৬-৩, সাইফ ৯.৪-০-৪২-৩, নাসুম ৮-০-২২-০, নাবিল ৯-০-৫৩-২, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-২১-১)
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৫০ ওভারে ৩২৭/৬ (রনি ৫৫, আনিসুল ২, তৌফিক ১৪, হৃদয় ৩৭, মাহমুদউল্লাহ ৪৯, আরিফুল ১, সাইফ ৩০*, নাসুম ২১*; আবু হাসিম ১০-১-৩১-০, সোহেল ৬-০-৩১-১, শামিম ৯-০-২৯-২, আব্দুল গাফফার ৭-০-৪০-০, ওয়াসি ৮-০-৪৫-২, পারভেজ ১০-০-৪৯-০)
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাইফ উদ্দিন